চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোভিড ১৯ : চিকিৎসক সুরক্ষা ও ভ্যাক্সিন

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দত্ত

১৮ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসক সুরক্ষা:
পিপিই সাধারণত ৮ ধরনের হয়। ঝালাই করার সময় বা বহুতল ভবন নির্মণের সময় শ্রমিকরা যে হেলমেট ব্যবহার করে তাও পিপিই, কিন্তু কোভি-জিআই পিপিই নিম্নের ৪ ধরনের। তাই ১. উপজেলার চিকিৎসকদের জন্য পিপিই ২. আবার মেডিকেল কলেজ অথবা কোভিড কোয়ারেন্টিন হাসপাতালের জন্য পিপিই, ৩. কোভিড আইসোলেশন হাসপাতালের জন্য পিপিই, ৪. কোভিড টেস্টিং ল্যাবের স্টাফদেরজন্য পিপিই- এভাবে যদি বন্টন করা হয় তাহলে যৌক্তিক ব্যবহার করা হবে। এখন দেখা যাচ্ছে অনেক এইচসিডব্লিউ-পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। তাই যথাযথ পিপিই পাওয়া যাচ্ছে কিনা? জার্মানি এবং আরো ইউরোপিয়ান দেশ চীনের পিপিই মানসম্মত না হওয়ায় ফেরত দিয়েছে। তাই মানসম্মত পিপিই না হলে বিপদ। একজন চিকিৎসক পজিটিভ মানে এক হাজার জনের চিকিৎসা শেষ। কেননা ডাক্তারের কাজ আর কারো দ্বারা সম্ভব না। আপনি যতই দেশপ্রেমিক হোন আর বড় বড় কথা বলেন আপনি সর্বোচ্চ নার্স হতে পারবেন। তাই আগে আপনার স্বার্থে চিকিৎসকদের বাঁচান। অনেকে বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে কি বলা যায় আমাকে এই অস্ত্র দেন না হলে যুদ্ধে যাব না? একই রকমের অস্ত্র না থাকলে কৌশল বা গেরিলাযুদ্ধে যেতে হয়। কোভিড ভিন্ন। সে নিজই গেরিলা। তাই যথাযথ সুরক্ষা ছাড়া গেলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। মানবজাতি পরাজিত হয়ে যাবে। কোন চিকিৎসক প্রণোদনার জন্য চিকিৎসা করবে এটা মেডিক্যাল ইথিকসের বাইরে। এটা একটা পুরষ্কার। আমাদেরকে লকডাউন থেকে মুক্তি পেতে হলে কমপক্ষে সতেরো লাখ টেস্ট করতে হবে (দক্ষিণ কোরিয়া ৬ কোটি লোকের জন্য ৪ লক্ষ টেস্ট করেছে)। তাই সব টেস্ট করুন, মানসম্মত পিপিই যোগাড় হোক, নিজে সুরক্ষা নিয়ে যুদ্ধে যান। পরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বাড়ান, যোগ্য লোককে আসনে বসান, তখন প্রনোদনা/বীমা সব ভাল লাগবে।

ভ্যাকসিন, নির্দেশনা, ক্লিনিক্যাল অডিট :
১. কোভিড সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। কেউ বলছে এটার তিন/চারটা অবস্থা বা ধাপ আবার কেউ বলছে না একটাই অবস্থা। ১১ বার পর্যন্ত রূপান্তর হতে পারে। কিন্তু মুখ্য প্রোটিন একবারই রূপান্তর করে। তাহলে একটা ভ্যাকসিন সারাবিশ্বে কাজ করবে। আবার অনেক ভাইরাস আছে যে রূপান্তর করলেও কিছু যায় আসে না একটা ভ্যাকসিনে কাজ করবে যেমন- হাম কিন্ত ভারতে বিজ্ঞানীরা বলছেন- না তা নয়। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এক ধরনের অবস্থা চীন ও জাপানে এক ধরনের, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ভিয়েতনামে এক ধরনের। তাহলেতো তিন ধরনের ভ্যাকসিন লাগবে। কিন্ত আমাদের এখানে কি হচ্ছে? আমরা শুধু আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে হা হুতাশ করছি। আমাদের ভাইরাসটার গঠন নিয়ে মৌলিক গবেষণার দরকার এখনই। আমাদের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিজ্ঞনীদের দিয়ে এখনই কাজ শুরু করা দরকার। আমাদের সামাজিক নিরপত্তা অত সহজে হবে না। ভ্যাকসিন ই ভরসা। দরকার হলে বহির্বিশে^র বিজ্ঞানীদের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
২. আমাদের নির্দেশনা (এসওপি) শুধু চীনের পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। এখন ইউরোপ/এশিয়াতে ক্রিটিকেল (মরণাপন্ন) রোগীদের উপর অনেক পরীক্ষার অন্তবর্তীকালীন রিপোর্ট আসছে, এর উপর নির্ভর করে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের পরামর্শ নিডে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া উচিত, কেননা আমাদের মৃত্যুহার এখন ৫০% এরও বেশি। (ক্লোজড কেজ)
৩. আমাদের অবস্থাগুলোর ক্লিনিক্যাল অডিট কি হচ্ছে? চিকিৎসা ও গবেষণা একসাথে আরম্ভ করা এখনই জরুরি। যেখানে অনেক মৃত্যু সেখানেও তারা এক সাথেই করছে। সম্প্রতি এফডিএ কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা অনুমোদন করেছে। ভাল হওয়ার ১০ দিন পরে দেওয়া যায়। আমাদের ভাল হওয়া রোগী এখনও পর্যন্ত ৪৯ জন। একজন রোগী ৪ জনকে দিতে পারলে আমরা প্রায় ২০০ জন ক্রিটিক্যাল রোগীর চিকিৎসা দিতে পারব। এগুলোর জন্য আমাদের ক্লিনিক্যাল মডেল তৈরি করতে হবে- কয়টা ক্লিনিক্যাল পয়েন্ট থাকতে হবে? মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের কাজ করতে হবে।
৪. ক্যামোপ্রোফিলেক্সিস নিয়ে অনেক কথা আছে। এইচসিকিউ সব চাইতে কম ডোজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে তুরস্কতে। এইচসিকিউ ১০০ মি.গ্রা./প্রতি তিন সপ্তাহে সাথে জিঙ্ক এবং ভিটামিন-সি/প্রতিদিন। যেহেতু এইচসিকিউ এখন অনেকই না করছে এই নিয়মাবলী বোধ হয় আপাতত চেষ্টা করা যায়। কিন্তু অক্সফোর্ডের ইবিএম ইনিস্টিটিটিউট প্রোফিলেকটিক্যালি না দিতেই বলে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৫০ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কোন চূড়ান্ত প্রতিবেদনও নেই।
৫. ডব্লিউএইচও কোভিড-এর উপর বৈশি^ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। তারা শুধু এ অঞ্চল থেকে মালয়েশিয়াকে বাছাই করেছে। তারা বলছে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই একমাত্র যোগ্য এ রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য। পরবর্তীতে সম্ভবত ভারত ও সিঙ্গাপুরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমাদের কোন খবর নেই।
৬. যেভাবে আমাদের দেশের রোগীরা মিথ্যা কথা বলে, মনে হচ্ছে যেকোন বৈশিষ্ট্যের রোগী গ্রহণ করতে পিপিই লেভেল-১ লাগবে (সম্প্রতি সার্জারি ওয়ার্ড-এ যা হয়েছে)।
৭. শেষ কথা- ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তার বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে বৈঠক করছেন পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করছেন, বলেছেন লকডাউন এক বছর লাগতে পারে। তিনি বুঝেছেন যে কাউকে দিয়ে এ কাজ করা যাবে না। প্রশাসন বাস্তবায়ন করবে, বিজ্ঞানীরা নির্দেশনা প্রদান করবে।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

লেখক পরিচিত: প্রাক্তন অধ্যাপক (নেফ্রোলজি) ও উপাধ্যক্ষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মেডিসিন ও নেফ্রোলজিবিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট