চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

কে এন হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের প্রস্তাব

ক্যারাভান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সরকারের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ এপ্রিল, ২০২০ | ৯:৪০ অপরাহ্ণ

করোনা মোকাবিলায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে দ্রুত চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কে এন হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের (কেএনএইচএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হাসান মাহমুদ চৌধুরী।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য দ্রুত চিকিৎসায় ৭২ বেডের ক্যারাভান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা চিঠি আদান প্রদান এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ব্যয় ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এশিয়ান ডেভলাপমেন্ট ব্যাংক অনুরূপ হাসপাতাল তৈরির পক্ষে মতামত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে হাসান মাহমুদ চৌধুরী চিঠি দিয়ে সরকারকে ৭২ বেডের বিষেশায়িত ক্যারাভান হাসপাতালটি প্রয়োজনে দেশের যেকোন স্থানে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন। এরপর কে এন হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হাসান মাহমুদ চৌধুরীর কাছে ক্যারাভান হাসপাতালের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডাইরেক্টর জেনারেল প্রফেসর ড. ইকবাল কবির। একই সাথে দপ্তরের কর্মকর্তারা ক্যারাভান হাসপাতাল স্থানান্তরের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশান এন্ড প্রোডাক্টশন কোম্পানি (বাপেক্স) পেট্রোবাংলার অধীনস্থ স্বায়িত্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান। যা গ্যাস উৎপাদন ও খননের ব্যাপারে যুক্ত। এটির অধীনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে (গ্যাস কূপ নং-৪) কাজ করছে কে এন হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। সেখানে এই প্রতিষ্ঠানের ২৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষায়িত ক্যারাভান রয়েছে। গ্যাস খনন ও উত্তোলনের জন্য এগুলোতে বিদেশি বিশেজ্ঞরা অবস্থান করেন। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাজে বিশেষজ্ঞরা ফিরে যান। বর্তমানে ক্যারাভানগুলো বেগমগজ্ঞে রয়েছে। এসব ক্যারাভান হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দেন হাসান মাহমুদ চৌধুরী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্যারাভানগুলোর মধ্যে ১১টির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট এবং ১৪টির দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। প্রতিটি ক্যারাভানের প্রস্থ সাড়ে ৮ ফুট ও উচ্চতা ৯ ফুট। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ১১টি ক্যারাভানে ৪টি করে ৪৪টি বেড এবং ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ১৪টি ক্যারাভানে ২টি করে ২৮টি বেড রয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এসব ক্যারাভানে মোট বেড রয়েছে ৭২টি। যাতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত চিকিৎসা সামগ্রী যেমন- আইসিইউ, ভ্যান্টিলাইজেশনসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সামগ্রী সংযোজন করলে হাসপাতালে রূপান্তর করা যাবে। প্রয়োজনে এটি দেশের যেকোন জায়গায় স্থানান্তরও করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে মহাদুর্যোগ এর আগে বিশ্বের মানুষ আর দেখিনি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এ রোগ মোকাবেলায় রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও এই দুর্যোগ মোকাবেলা সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। কিন্ত সরকারের পক্ষে একা খুব দূরূহ। তাই দেশের এই কঠিন সময়ে ক্যারাভান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছি। ৭২ বেডের ক্যারাভান হাসপাতালে রয়েছে অফিস ক্যারাভান, কিচেন ক্যারাভান, প্রসস্থ ডাইনিং হল, জরুরি বৈঠকের সম্মেলন কক্ষ ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান সমৃদ্ধ ক্যারাভান। আলোচ্য ক্যারাভানগুলো সম্পূর্ণ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কার্যকর ও উপযোগী এবং সবগুলোই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, আসবাবপত্র ও অভ্যন্তরীণ পয়ঃনিষ্কাশন সমৃদ্ধ। এই ক্যারাভানগুলো হাসপাতাল রূপান্তরের মাধ্যমে এখনই করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা প্রদানে সম্ভব। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত চিকিৎসা সামগ্রী যেমন- আইসিইউ, ভ্যান্টিলাইজেশন, নার্স স্টেশন, অপারেশন টিয়েটার রূপান্তর করে আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সামগ্রী সরবারহ করলে হাসপাতালে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য, শুধুমাত্র ক্যারাভান হাসপাতাল তৈরির নয়, হাসান মাহমুদ চৌধুরী নিজের মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। নগরীর চান্দগাঁও সোসাইটির সভাপতি হিসেবে তিনি অনেকগুলো সামাজিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও তিনি অকাতরে দান করে থাকেন। কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আর্ত-মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তারই ধারবাহিকতায় তিনি এবার এই মহাদুর্যোগেও দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের কো-চেয়ারম্যান।

করোনাভাইরাস সংক্রমনের এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর করণীয় অনুসরণ করে কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তাঁর নিজ এলাকা রাউজানের কদলপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও চান্দগাঁও থানাধীন সমশেরপাড়া, ফরিদাপাড়া, চান্দগাঁও আবাসিক, বিভিন্ন মাদ্রাসা, দক্ষিণ নালাপাড়া এবং বোয়ালখালী, কর্ণফুলী উপজেলা, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ২৮ হাজার পরিবারের নিকট খাবার ও নগদ টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। একই সাথে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা ও পাশ্ববর্তী পাড়া মহল্লায়, মসজিদে সচেতনামূলক প্রচারণা, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, সড়কসমূহে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোসহ নানামুখী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আসন্ন রমজানে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য অতীতে চেয়ে আরো বহুগুণ ইফতার, খাদ্য সামগ্রী ও বস্ত্র বিতরণ করবে বলে জানা গেছে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি-এমএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট