চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এখনো বেতন হয়নি ২০ কারখানায়

আল-আমিন সিকদার

১৬ এপ্রিল, ২০২০ | ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ

  • বেতনের দাবিতে সড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ
  • ব্যাংকিং জটিলতায় গার্মেন্টস মালিকরা: বিজিএমইএ
  • ৪ দিনের মধ্যে বেতন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস বেপজার

মাসের অর্ধেক পার হয়ে গেলেও এখনো বেতন হয়নি চট্টগ্রাম ইপিজেডের ২০টি কারখানায়। যেখানে মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে প্রতিমাসে বেতন পেয়ে যেতেন শ্রমিকরা সেখানে গত ১৫ তারিখেও বেতন পাননি তারা। তাইতো মরণঘাতী ছোঁয়াছে রোগ করোনাভাইরাসকে ভয় না করে প্রতিদিন বেতনের জন্য কারখানার সামনে ঘুরপাক খাচ্ছেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন কবে পরিশোধ করা হবে সেটাও জানাচ্ছেন না মালিক পক্ষ। এমনকি কারখানায় এসে ম্যানেজমেন্টের কারও দেখা পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। এতে করে বেতন না পাওয়ার ভয়ে সড়কে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৫টি কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইপিজেড মোড়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ‘পদ্মা ওয়্যারস’, ‘পাতেলা’ ও ‘পি আনিস’সহ ৫টি কারখানার শ্রমিকরা। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। উত্তেজিত শ্রমিকরাও পুলিশ ও বেপজার গার্ডদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়েন বলে জানা যায়। পরে কারখানা মালিকের বেতন দেওয়ার আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। টানা দুই ঘণ্টা ইপিজেড মোড় অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। অন্যদিকে নগরীর পাহাড়তলীর আলী আজম সড়কেও দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করেন ‘কি মেরী টেক্স এবং আর জেড এপারেলসের শ্রমিকরা। এতে লঙ্ঘিত হয়েছে সামাজিক দূরত্ব। শুধু তাই নয়, এমন সময় কারখানা মালিকদের বেতন না দেওয়ার কারণে শ্রমিকদের এ আন্দোলনের জন্য অনেক বড় হুমকিতে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে জনসমাগম ঠেকাতে গত ২৫ তারিখ থেকে কারখানা বন্ধ করে দেয় সরকার সেখানে বেতনের জন্য শ্রমিকরা সমাজিক দূরত্ব না মেনে বিক্ষোভ করেছে। এতে করে করোনা ঝুঁকি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া ‘পাতেলা’ নামক কারখানার শ্রমিক রাবেয়া পূর্বকোণকে জানান, ‘সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই কারখানা মালিকদের জানিয়েছেন শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে। কিন্তু মাসের ১৫ তারিখ পার হয়ে গেলেও এখনো বেতন দেয়া হয়নি আমাদের। শুধু কি তাই, বেতনের জন্য অফিসে এসে দেখি, কারখানা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বড় বড় কর্তারাও আসেনি। এমনকি কবে নাগাদ বেতন দেয়া হবে এমন কোন নোটিশও নেই। যার কারণে আমরা শ্রমিকরা আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি। বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। মুদির দোকানদার বাকি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমরা কোন ত্রাণও পাচ্ছি না। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে চলবে আমাদের সামনে দিনগুলো। খেতে না পেয়ে যখন বেতনের দাবিতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামলাম তখন পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। আমরা কোথায় যাবো আপনারাই বলুন’।
আন্দোলনের বিষয়ে ইপিজেড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বেতনের দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইপিজেড মোড়ে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে মালিক পক্ষের বেতন পরিশোধের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা’। তবে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জের বিষয়টি সত্য নয় বরং শ্রমিকরা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে ব্যাংকিং জটিলতার কারণে মালিকরা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের তাকিয়ে থাকতে হয় ঢাকার দিকে। চট্টগ্রামে প্রতিটি ব্যাংকের শাখা থাকলেও টাকা দেওয়ার বেলায় যোগযোগ করতে হয় ঢাকা হেডকোয়ার্টারে। ব্যাংকের হেডকোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ করতে মালিকদের নানা জটিলতায় পড়তে হয়। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো খোলা রাখা হচ্ছে মাত্র ২ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারলে টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছেনা। ব্যাংকিং জটিলতা কাটলে কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে মালিকদের কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি’।
এদিকে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে ইপিজেডের সকল কারখানায় বেতন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. খুরশীদ আলম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, “ইপিজেডের ১৬০টি কারখানার মধ্যে এখনো ২০টি কারখানায় বেতন হয়নি। তবে প্রতিনিয়ত তারা শিডিউলের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিচ্ছেন। কেউ মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা বিকাশের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছেন। তবে আজ (গতকাল) ৫টি কারখানার শ্রমিকরা মালিক পক্ষ থেকে বেতন দেওয়ার কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় ইপিজেড মোড়ে বিক্ষাভ করেন। কারখানাগুলোর মালিকরা জানিয়েছেন ব্যাংকিং জটিলতার কারণে তারা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না। তবে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ব্যাংকিং ঝামেলা মিটিয়ে এ সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকরা”।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট