চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার প্রভাবে ছিল না ইলিশ কেনার ধুম

ঘরে বসেই এবার অন্য রকম বৈশাখ উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ এপ্রিল, ২০২০ | ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর প্রাণহীন এক পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়েছে নগরীতে। অন্যান্য বছর বৈশাখের সকাল থেকে রঙ বেরঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে নগরীর ডিসি হিল, সিআরবি শিরিষতলা, চারুকলা কলেজ, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে হাজির হতো নগরবাসী। হাজির হয়ে স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাবা-মায়ের হাত ধরে বৈশাখী মেলা ঘুরে বেড়ায় শিশুরা। কিন্তু এ বছর এসবের কিছুই হয়নি। জনমানবহীন ছিল পুরো নগরী। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি-বেসরকারিভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত না হলেও, পারিবারিক আবহে ঘরে বসেই মানুষ নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে।’ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অংশ হিসেবে এ বছর ঘরে বসেই নববর্ষ পালনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের ফলে সারাদেশের মতো নগরীর মানুষও ঘর থেকে বের হয়নি। ঘরে বসেই এবারের বৈশাখ উদযাপন করেছে তারা। গত মঙ্গলবার নগরীর ডিসি হিল, সিআরবি শিরিষতলা, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, চারুকলা কলেজ, বিভিন্ন পার্ক, রেস্টুরেন্ট কোথাও পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়নি। খাওয়া হয়নি পান্তা-ইলিশও। এ প্রসঙ্গে সিআরবি শিরিষতলায় নববর্ষ ও বৈশাখি মেলা উদযাপন পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাহাবুদ্দিন বলী খেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিগত ১১ বছর ধরে সিআরবি শিরিষতলায় বর্ষবরণ ও মেলা আয়োজন করে আসছি। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমরা নববর্ষ উদযাপন করিনি। নগরবাসীকে নিজ নিজ ঘরে বসে বৈশাখ পালনের কথা বলেছি। এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে উৎসবের আগে জীবন বাঁচাতে হবে। বেঁচে থাকলে আগামী বছর আমরা বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করবো।’ সাংস্কৃতিক কর্মী শহীদুল আলম শহীদ বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে এবার ঘরে ঘরে বর্ষবরণ হয়েছে। প্রায় টানা ২০ দিন ধরে সাধারণ ছুটিতে এখন গৃহবন্দী সারাদেশের মানুষ। ফলে এবারে অনেকটাই প্রাণহীন হয়েছে নববর্ষ বরণ উৎসব। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করেই নববর্ষে জনসমাগম না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে নগরীতে আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা বৈশাখে উদযাপিত না হলেও, পারিবারিক আবহে ঘরে বসেই মানুষ নববর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে।’
নগরীর আসকারদিঘি পাড় এলাকার বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, ‘প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে সবাইকে নিয়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু এবার করোনার কারণে বাইরে যাওয়া হয়নি। বাসাতেই ভিন্ন রকম আয়োজন করেছি। সারাদিন টিভিতে বৈশাখী অনুষ্ঠান দেখে পার করেছি। বেঁচে থাকলে আবারও পুরোনা রূপে বৈশাখ উদযাপন করবো।’
এদিকে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ‘বৈশাখে পান্তা ইলিশ’’ এড়িয়ে চলতে বলেন। যদিও এটা অফিসিয়াল না, তবে ইলিশ প্রজননের কথা ভেবেই এটা বলা হতো। এরপরও কে শোনে কার কথা, বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়তো ক্রেতারা। সুযোগ বুঝে বিক্রেতাও কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে দিতো ইলিশের। তবে এবারই প্রথম, যেখানে বাজারে সব ধরনের (ছোট, বড়) ইলিশ থাকলেও ক্রেতা ছিলো না। অনেক বিক্রেতা বড় ইলিশ পূর্ব থেকে হিমায়িত করে রেখেছিলেন ‘বৈশাখের বাজার ধরতে’। সেটা আর হয়নি। ইলিশের দাম তেমন না বাড়লেও ক্রেতার আগমন ছিলো না বললেই চলে।
বিক্রেতারা বলছেন, গত ১০/১৫ দিন ধরে বরফ দিয়ে মাছ হিমায়িত করে রাখলেও এবার বরফের দামও উঠবে না। মাছ কেনার ক্রেতাই ছিল না বাজারে। আর ক্রেতারা বলছেন, করোনার কারণে মানুষের মনে আনন্দ নেই। তাই ইলিশ কেনা প্রশ্নই আসে না।
ইলিশ বিক্রি প্রসঙ্গে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘অন্যান্য বছর পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাজারে প্রচুর পরিমাণের ইলিশ বিক্রি হলেও এবার এক কেজি ইলিশও বিক্রি হয়নি। করোনার কারণে মানুষের মনে আনন্দ নেই। তাই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কোন ইলিশ বিক্রি হয়নি।’
এদিকে করোনার কারণে পহেলা বৈশাখে এবার ফুল বিক্রিতে ছিল ভাটা। নগরীর মোমিন রোড, চেরাগী পাহাড়, চকবাজার, ষোলশহর ২নং গেট, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট-বড় শতাধিক ফুলের দোকানের অধিকাংশই ছিল বন্ধ। করোনাকালে তাই জমেনি বৈশাখের ফুল বিকিকিনিও।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট