চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা আতঙ্কের মধ্যে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:৩১ অপরাহ্ণ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। এই ভাইরাসের আতঙ্কে আছে পুরো বিশ্ব। সংক্রমণ রোধে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। ফলে ঘরবন্দি মানুষ। এর মধ্যে নগরজুড়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরে থাকতে পারছে না নগরবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। এতে ডেঙ্গুসহ মশা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। অথচ এর প্রতিকারে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

মশার চরম উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা পাচ্ছে না। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, দেওয়ানবাজার, কোতোয়ালী, পাথরঘাটা, হেমশেন লেইন, আগ্রাবাদ, দেওয়ান হাট, হালিশহর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব বাড়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিকর হলেও মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করে কিছুটা স্বস্তি আশ্বাস খুঁজছে মানুষ। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তাদের।   

নগরীর বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমায় মশার লার্ভা এবং পূর্ণাঙ্গ মশা কিলবিল করতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি খালের মুখ বন্ধ থাকায় নালা-নর্দমায় পানি স্থির হয়ে আছে। এসব স্থির বা আবদ্ধ পানিতেই জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও চলমান নালা-নর্দমার সংস্কার কাজ চলছে ধীরগতিতে। স্থির পানির কারণে বাড়ছে মশার উপদ্রব।

নগরীবাসীর অভিযোগ, মশা নিধনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রকার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। পুরো মশক নিধন কার্যক্রমই যেন স্থবির হয়ে আছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) জানিয়েছে, নালা-নর্দমায় মশার ডিম বা লার্ভা ধ্বংসকারী ‘লার্ভিসাইড’ ছিটানো অব্যাহত রয়েছে।

কিটতত্ত্ববিদরা বলছেন, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মশার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নালা-নর্দমায় জমাট হয়ে আছে পানি। সেখানে ডিম ছাড়ছে ‘ফাইলেরিয়া’সহ বিভিন্ন রোগের জীবণুবাহী মশা। বর্ষায় অতি বৃষ্টির ফলে এসব ডিম বা লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকায় ধ্বংস হয় না। তাই এসময়টাতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানোর ওপর জোর দিতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, মশার কামড়ে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চর্ম রোগের প্রকোপ অত্যধিক হয়। মশার উৎপাত বাড়ায় গত বছরের মতো এবারো চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সূত্র জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে চার হাজারেরও বেশি মানুষ।

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা সুবীর বিশ্বাস ও দেওয়ানবাজার এলাকার বাসিন্দা বিশুময় বলেন, মশার জ্বালায়  অসহ্য হয়ে উঠছি। মশার অত্যাচারে শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না। বর্তমানে এ উপদ্রব আগের চেয়ে হাজার গুণ বেড়েছে। কিন্তু সিটি করপোশেনের লোকজনকে এখানে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখি না। এমনকি নালা নর্দমাগুলোও জমে থাকে ময়লা। 

মশক নিধনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চসিক’কে তিন কোটি টাকা দিয়েছে। গত ২৫ মার্চ ‘মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম’ উপখাত থেকে ১ম-৪র্থ কিস্তি বাবদ এ অর্থ ছাড় করা হয়। অবশ্য এক মাস আগে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনায় মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা চেয়েছিল চসিক। মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া বরাদ্দের বাইরেও মশক নিধনে চলতি অর্থবছরে নিজেদের বাজেটে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে চসিক। এর মধ্যে ওষুধ সংগ্রহে তিন কোটি টাকা, ফগার ও স্প্রে মেশিন সংগ্রহে দুই কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে বাকি এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

চসিকের প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, মশক নিধনে ‘এডালটিসাইড’ (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) এবং ‘লার্ভিসাইড’ (ডিম ধ্বংসকারী) নামে দুই ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর ‘এডালটিসাইড’ ছিটানো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। এডালটিসাইড ছিটানো হয় ফগার মেশিন দিয়ে। এতে এক ধরনের ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ওষুধ ছিটানোর ফলে মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে এবং এতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তবে লার্ভিসাইড ছিটানো অব্যাহত আছে। সেটা নালা-নর্দমায় ছিটানো হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আমাদের কাছে আরো এক বছরের ওষুধ মজুদ আছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট