চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বৃহত্তর চট্টগ্রাম

দুরাবস্থায় লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক

করোনায় সাধারণ ছুটির প্রভাব

মোহাম্মদ আলী

১৪ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দুরাবস্থায় পড়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের পরিবহন শ্রমিকরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির কারণে তারা এ সমস্যায় পড়েছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ছাড়া প্রায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। গত ১৯ দিন ধরে টানা পরিবহন বন্ধ থাকায় দুরাবস্থা তৈরি হয়েছে দৈনিক মজুরিতে কাজ করা পরিবহন শ্রমিকদের। চলমান ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি ও তৎপরবর্তী অনিশ্চিত পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত এই খাতে নিয়োজিত বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রায় এক লাখ ২০ হাজার শ্রমিক।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের তথ্যমতে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে (চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার) পরিবহন খাতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। করোনায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর পণ্য পরিবহনের অল্পসংখ্যক পরিবহন বাদে প্রায় সব পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে গত ১৯ দিন ধরে বেকার বসে আছেন পরিবহন চালক ও হেলপারসহ এই খাতের শ্রমিকরা।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের তথ্যমতে, বৃহত্তর চট্টগ্রামের মধ্যে নগরীতে ১২শ বাস, ৭০০ হিউম্যান হলার, চার হাজার টেম্পো, ১২শ’ সিএনজি ট্যাক্সি রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের সাথে আন্তঃজেলা সড়কে প্রায় তিন হাজার বাস ও তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে (হিউম্যান হলার, টেম্পো ও সিএনজি ট্যাক্সিসহ) প্রায় ২০ হাজার পরিবহন রয়েছে।
শ্যামলী পরিবহনের (আন্তঃজেলা বাস) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে হেলপারের কাজ করেন মোহাম্মদ কাসেম। প্রতিদিন ৪ শ’ থেকে ৬শ’ টাকার আয় দিয়ে চলে তার সংসার। মাস শেষে দিতে হয় ঘরভাড়া ও এনজিওর কিস্তি। নগরীর তুলাতলী থাকা এই পরিবহন শ্রমিক বলেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় গত ১৯ দিন কোনো ইনকাম হয়নি। পুরো ১৯দিন ঘরে বসে আছি। এলাকার এক আত্মীয় থেকে বিকাশে কিছু টাকা ধার এনে সংসার চালাচ্ছি। এরমধ্যে ঘরভাড়া ও মাসিক কিস্তির জন্য বাসার দরজায় এসে তাগাদা দিয়ে গেছেন বাড়িওয়ালা ও এনজিও কর্মীরা। ঘরভাড়া বা এনজিও’র কিস্তি কোথায় পাবো? সংসার কিভাবে চলবে?
সিএনজি ট্যাক্সি চালক মোহাম্মদ হাসান বলেন, নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সি চালিয়ে দিনে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে মালিকের ৭০০ টাকা ও ৩০০ টাকার গ্যাস বাদে বাকি ৫০০ টাকা মতো নিজের আয় হিসেবে থাকতো। যা দিয়ে শহরে নিজের থাকা-খাওয়া বাদ দিয়ে বাকি টাকা গ্রামের পরিবারের কাছে পাঠাতাম। কিন্তু গত ১৯দিন বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারিনি। গত কয়েকদিন বাচ্চার মা বার বার ফোন করেছে। টাকা পাঠাবো বলে এখনো পাঠাতে পারিনি। ধার- দেনা করেও টাকা পাঠাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মোবাইল বন্ধ রেখেছি। জানি না বউ-বাচ্চা কোন অবস্থায় আছে?
নগরীর নতুন ব্রিজ থেকে দেওয়ানহাট রুটে হিউম্যান হলার চালায় মোহাম্মদ আসিফ। প্রতি ট্রিপের ওপর ভিত্তি করে দিনে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন এই চালক। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় গত ১৯ দিন বেকার বসে আছেন এই পরিবহন শ্রমিক।
নগরীর কালামিয়া বাজার ইসহাকেরপুল একটি বস্তিতে থাকা মোহাম্মদ আসিফ বলেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় গত ১৯দিন ধরে এক টাকাও রোজগার হয়নি। বউ-বাচ্চা ও মাকে নিয়ে ৭ জনের সংসার। প্রতিদিন যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু গত ১৯দিন ধরে আয়- রোজগার না হওয়ায় খুব কষ্টে দিন পার করছি। এই সময়ে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। জানি না এই সময়টাতে কিভাবে সংসার চালাবো।
পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, পরিবহন খাতের শ্রমিকরা সবাই হত দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। এই খাতের শ্রমিকদের নির্দিষ্ট মাসিক কোন বেতন নেই। সবাই দৈনিক মজুরিতে কাজ করে। ফলে একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে তাদের পরিবার চলে না। এই অবস্থায় ১৯দিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকা মানে তাদের পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে থাকা।
তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ পরিবহন শ্রমিক বাস টার্মিনাল কিংবা স্টেশন কেন্দ্রিক বসবাস করেন। কারণ গাড়ির কাছাকাছি তাদের থাকতে হয়। কিন্তু এই সময়ে এই এলাকাগুলোতে সরকারি- বেসরকারি কোন সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারি বেসরকারি সহায়তাগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে নগরীতে মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর এবং গ্রামের উপজেলার চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে সড়ক কিংবা নৌ পরিবহনের স্ট্যান্ডগুলোতে যেখানে ভাসমান লোকের বাস সেখানে সহায়তা পৌঁছছে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট