চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

করোনায় ব্যবসায়ীর মৃত্যু

দু’দিনে হাসপাতাল, ভবনসহ ৩৯০ পরিবার লকডাউন

নিজস্ব সংবাদদাতা- সাতকানিয়া

১৩ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

  • সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ ও এম্বুলেন্স চালকসহ ২৫ জন হোম কোয়ারেন্টিনে

সাতকানিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের মৃত্যুর পর প্রশাসন নতুন করে আরও ৪৮ পরিবার, ১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ১টি মার্কেট ভবন লকডাউন করে দিয়েছে। গত শনিবার রাতে মৃতের পরিবারসহ ৩৪২ পরিবার ও গতকাল (রবিবার) ৪৮ পরিবারসহ ২ দিনে ৩৯০ পরিবারের ৩ হাজার ৭৬৫ জনকে লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ ও এম্বুলেন্স চালকসহ ২৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন। অন্যদিকে, গতকাল (রবিবার) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশে চিকিৎসক টিম মৃতের বসতঘর এলাকা থেকে তার সংস্পর্শে থাকা স্ত্রী ও সন্তানসহ ১৬জনের নমুনা সংগ্রহ করে বিকালে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে পাঠিয়েছেন। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ইছামতি আলীনগর সোনাজানি বাড়ির মৃত এজাহার মিয়া পুত্র ও নগরীর আগ্রাবাদ ফকিরহাট এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান। পরে হাসপাতালে করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। গত শনিবার ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) থেকে পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। করোনায় শনাক্তের খবর সাতকানিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে গত শনিবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও থানার ওসি মৃতের বাড়ি ইছামতি আলীনগর এলাকায় গিয়ে পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডটি পুরো লকডাউন করে দেন। একইদিন রাতে লোহাগাড়া উপজেলার লোহাগাড়া সিটি হাসপাতাল ও মোস্তাফা সিটি ভবনটিও পুরো লকডাউন করে দেয় লোহাগাড়া প্রশাসন।
সাতকানিয়া উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম ঢেমশা ৩নং ওয়ার্ডসহ মাদার্শা, পৌরসভার ভোয়ালিয়া পাড়া, সামিয়ার পাড়া, ছিটুয়াপাড়া, ছদাহা ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার ১ পরিবার, পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড, আশ- শেফা হাসপাতালে কর্মরতদের লকডাউনে রাখা হয়েছে।
লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসাইন মাহমুদ বলেন, সাতকানিয়ার করোনা ভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকায়
লোহাগাড়া সিটি হাসপাতাল, মোস্তফা সিটি ভবন পুরোটাই লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। মৃতের ছেলের দোকান কর্মচারী জঙ্গল পদুয়ার হাসান ও পল্লী চিকিৎসক নুর মোহাম্মদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সিটি হাসপাতালের ১৬ স্টাফ ও সাউন্ড হেলথ হাসপাতালের এম্বুলেন্স ড্রাইভারকেও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, ছেলে, আত্মীয়স্বজন ও সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে তার রোগ সারাতে লাশ বহন, জানাজা ও কবরস্থ করাসহ সকল প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল এমন ৪০০ পরিবারকে লকডাউন করা হয়েছে।
তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৩ হাজার ৭৬৫ জন। আর কেরানীহাট আশ- শেফা হাসপাতালে নেয়ার পর তাদেরকে এবং স্টাফদের পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া করোনায় রোগী মারা যাওয়ার আগে ও পরে সকল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিল এদের ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, ‘মৃত সিরাজুল ইসলাম মারা যাওয়ার আগে ও পরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা এসেছিল খোঁজ খবর নিয়ে তাদের ঘরগুলো লকডাউন করে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে। আগামীতে মৃতের সাথে আরও কোন ব্যক্তির সংস্পর্শ রয়েছে এমন খবর পেলে তাদেরও লকডাউনের আওতায় আনা হবে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট