চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে করোনা

সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি

ইমাম হোসাইন রাজু

১২ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ

  • সামাজিক সংক্রমণ রোধ করা না গেলে চারভাগের একভাগ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন: স্বাস্থ্য পরিচালক
  • এই মুহূর্তে ঘরে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই: সিভিল সার্জন

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণের মাধ্যমেই আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এতদিন স্বাস্থ্য বিভাগ প্রবাসী বা বিদেশফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও, বর্তমানে সেটি নিয়ে চিন্তা করছেন না। বরং প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি স্থানীয়দের মাধ্যমেই ছড়াতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গতকাল শনিবার নতুন করে আক্রান্ত হওয়া দুই ব্যক্তিসহ চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন নয় জন। যাদের সকলেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণেই আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা স্থানীয়ভাবে ছড়াতে শুরু করেছে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে না পারলে এ রোগের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। এখনই সামাজিক দূরত্ব মেনে সরকার নির্দেশিত পথে না চললে পরবর্তীতে কারোর পক্ষেই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলেও ধারণা তাদের।
তাদের মতে, চট্টগ্রাম এখন সামাজিক সংক্রমণে বিস্তৃতির প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই জনসমাগম বন্ধসহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমাতে এখন থেকেই প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করে বলছেন, এভাবে সামাজিক সংক্রমণের বিস্তার ঘটলে চট্টগ্রামের চারভাগের এক ভাগ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সর্বমোট ৫৮৭ জনের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের পরীক্ষা করা হয়। যাদের মধ্যে শুধুমাত্র দশজনের শরীরের এ ভাইরাসের অস্তিত পাওয়া যায়। এ দশজনের মধ্যে নয়জনেই চট্টগ্রামের বাসিন্দা। যারা চট্টগ্রাম শহরেরই বসবাস করেন। বাকি একজন লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা। আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা প্রবাসীদের সংস্পর্শে থাকার তথ্য নেই। তবে এটি লোকাল কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমেই হয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগ।
এছাড়া আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা সকলেই জনসমগম এলাকায় বসবাসসহ চাকরি কিংবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণের পর পূর্বকোণের সাথে আলাপকালে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি উস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, ‘আগে ধারণা ছিল- প্রবাসীরাই এতে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। কেননা চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সকলেই লোকাল কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণের মাধ্যমেই হচ্ছে। এখন আর এ রোগ বিস্তারের জন্য প্রবাসীদের প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই সবাইকে এখনই সচেতন হতে হবে। ঘরে অবস্থান করতে হবে। কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া যাবে না। নয়তো যেভাবে এ রোগের বিস্তার হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’
‘এদিকে, সামাজিক সংক্রমণ রোধ করা না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে আশঙ্কা করে স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এমন পরিস্থিতি থাকলে দেখা যাবে চারভাগের একভাগ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন।’
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়েও সামাজিক সংক্রমণকে দায়ী করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে বিভিন্ন খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, তারা কেউই প্রবাসীদের সাথে ছিলেন না। কিংবা নিজেরাও প্রবাসে ছিলেন না। তারা সামাজিক সংক্রমণের শিকার। এতেই স্পষ্টভাবে বুঝা যায়, চট্টগ্রামে সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে। আমরা যদি এখনো সচেতন না হই, তা হলে এটি প্রতিদিন ছড়াতে থাকবে। একটি পর্যায় চলে আসবে, পুরো চট্টগ্রামেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। তাই এই মুহূর্তে ঘরে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট