চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সাতকানিয়ার বাড়িসহ ৫ পরিবারের ২৭ জন লকডাউনে

নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত

সুকান্ত বিকাশ ধর, সাতকানিয়া

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলায় হোসিয়ারি (গেঞ্জি) কারখানার মালিক সাতকানিয়ার বাসিন্দার সাথে তার পৈত্রিক বাড়ির স্বজন ও প্রতিবেশীদের সংস্পর্শ ও মেলামেশা থাকায় ৩ বাড়ির ৫ পরিবারের ২৭ সদস্যকে নিজ ঘরেই লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ২টার দিকে ওই করোনা শনাক্ত রোগীর পৈত্রিক বাড়ি উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছোট হাতিয়া আছারতলী ফকির মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ি এলাকায় ইউএনও’র নির্দেশে লাল নিশানা টাঙানো ও পরিবারগুলোর সদস্যদের লকডাউন করে দেয়া হয়।
স্থানীয়, পুলিশ ও ইউএনও সূত্রে জানা যায়, ২০ মার্চ সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজ পৈত্রিক বাড়ি সোনাকানিয়া ফকির মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ি এলাকায় আসেন করোনা শনাক্ত রোগী। একই দিন রাতে তিনি নারায়ণগঞ্জ ফিরে যান। ২৪ মার্চ তার শরীরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি শুরু হলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা নিয়ে শুরু হয় পরিবারের সদস্যদের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা। পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে গত সোমবার পরীক্ষায় তার পজেটিভ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি গত সোমবারই ঢাকা কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। করোনা রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সাতকানিয়ার বাসিন্দা হিসেবে তার এলাকায় যাতায়াত বা আনাগোনা ও সংস্পর্শ কারো সাথে ছিল কিনা তা তথ্য উদঘাটন করতে তৎপরতা শুরু করে প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে ওই রোগীর পৈত্রিক বাড়ি সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ চৌধুরী এলাকায় যায় সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও থানার ওসিসহ একদল পুলিশ। এ সময় ইউএনও’র নির্দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর ১টি ঘর, তার কারখানার ৩ শ্রমিক ও ঘরের পার্শ¦বর্তী নুরুল ইসলামের ছেলে আবদুল আজিজ (১৬), মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে মো. পারভেজ (১৮), হাফেজ আহমদ (১৬) এর পরিবারের ১৩ সদস্য, অন্যদিকে চাচাত ভাই নুরুল ইসলামের ছেলে এমরান চৌধুরীর পরিবারের ৫ জন ও ফকির মোহাম্মদ চৌধুরীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৬০) এর পরিবারের ৯ সদস্যসহ মোট ২৭ সদস্যকে নিজ ঘরে লকডাউন করে দেয়া হয়। তাছাড়া তাদের ঘরের সামনে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় করোনা শনাক্ত ব্যক্তির মেয়ের শ্বশুর বাড়ি সাতকানিয়ার পুরানগড়ে ১৩ ঘর ও পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের একটি ঘর ও ঢাকায় করোনা শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিকৃত ব্যক্তির ঘরসহ ৫ পরিবার নিয়ে সর্বমোট এ পর্যন্ত সাতকানিয়ায় ১৯ পরিবারকে লকডাউন করলেন ইউএনও।
সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ঘর তালাবদ্ধ থাকে। তারা বাড়িতে থাকে না। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘরসহ ৩ বাড়ির ৫ পরিবারের ২৭ সদস্যকে লকডাউন করে তাদের ঘরের সামনে লাল পাতাকা দিয়ে নিশানা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-আলম করোনা আক্রান্ত রোগীর সাথে মেলামেশা ও সংস্পর্শে থাকার কারণে লকডাউন করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লকডাউন করে দেয়া ব্যক্তিরা ওই রোগীর স্বজন ও প্রতিবেশী। ওই ব্যক্তিরা ঘর থেকে বের হবেন না এবং তাদের ঘরেও কেউ আসা যাওয়া করতে পারবেন না। লকডাউনে থাকাদের সাথে কেউ যাতে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক চৌকিদার ও পুলিশ টহলরত অবস্থায় থাকবে ওই এলাকায়। বিষয়টি তদারকি করবেন স্থানীয় চেয়ারম্যান।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী বলেন, লকডাউনে থাকা ব্যক্তিদের শারীরিক রোগের কোন উপসর্গ দেখা দিলে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি। এ জন্য আমার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি তাদের দেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট