চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা দুর্যোগের সুবাদে এম্বুলেন্সে ইয়াবা বাণিজ্য

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মজুত নগরীতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চালক-হেল্পার

নাজিম মুহাম্মদ

৮ এপ্রিল, ২০২০ | ২:০২ পূর্বাহ্ণ

মহামারি করোনায় পুরো দেশের মানুষ আতংকিত। দেশজুড়ে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুই বন্ধ থাকলেও ইয়াবা পাচার বন্ধ করেনি রোহিঙ্গারা। তারা ঠিকই কৌশলে ইয়াবা পাচার করছে। সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও জরুরি সেবা দিতে এম্বুলেন্সসহ কয়েকটি সেবাখাতের যানবাহন চলাচল সচল রাখা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। তাছাড়া করোনার বিস্তার ঠেকাতে নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সুযোগে এম্বুলেন্সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা এনে মজুত করা হচ্ছে নগরীতে। গত রবিবার টেকনাফ সদর থানার ঝিলংঝা এলাকায় একটি এম্বুলেন্স থেকে বিশ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ। উখিয়ার কুতুপালং সাত নম্বর ক্যাম্পের এ-ব্লক থেকে ইয়াবাগুলো এম্বুলেন্স পাচার করা হচ্ছিলো চট্টগ্রামে। এ সময় এম্বুলেন্সের মালিক আবদুস শুক্কুর ওরফে সাইফুলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সাইফুল টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া মধ্যম পাড়ার আবদুস সালামের বাড়ির ইউসুফ আলীর ছেলে। গ্রেপ্তার বাকি দুইজন হলেন এম্বুলেন্সচালক ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন থানার কোরালমারা ইউনিয়নের খাসেরহাটের লামচি গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ সোহাগ (২৩) ও সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব নলুয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ শফির ছেলে ইলিয়াছ প্রকাশ ইমন (৩০)। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি- সোহাগ এম্বুলেন্সের চালক ও ইমন হেলপার হিসাবে কাজ করতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুল তিনমাস আগে তার স্ত্রীর নামে সাত লাখ টাকায় এম্বুলেন্সটি কিনেন নগরীর চকবাজার এলাকার জনৈক মোহাম্মদ আরিফের কাছ থেকে। গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, আরিফ জানান, প্রায় চার বছর আগে ফেনীর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছ থেকে আমরা দুই বন্ধু মিলে এম্বুলেন্সটি কিনেছিলাম। গত তিনমাস আগে সাইফুলের কাছে সাত লাখ টাকায় এম্বুলেন্সটি বিক্রি করেছি। সাইফুল সে সময় আমাদের জানিয়েছিলেন, টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি সাহায্যকারী সংস্থার কাছে মাসিক ভাড়া দেয়ার জন্য তিনি এম্বুলেন্সটি কিনেছেন। তিনি নতুন বিধায় গাড়ির দু’পাশে আমাদের মুঠোফোনের নম্বরগুলো এখনো রেখে দিয়েছেন।
আরিফ বলেন, সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে এম্বুলেন্স চালায়। গত রবিবার দেবপাহাড় এলাকায় একজন রোহিঙ্গা মারা যায়। তার লাশ নিয়ে এম্বুলেন্সটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছিলো। অতটুকু আমরা জানি।
কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়–য়া জানান, চট্টগ্রামের দেবপাহাড় এলাকা থেকে এক রোহিঙ্গার মৃতদেহ নিয়ে গত রবিবার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলো এম্বুলেন্সটি। লাশ নামিয়ে দিয়ে ক্যাম্প থেকে ইয়াবাভর্তি করে এম্বুলেন্স নিয়ে তারা ফিরছিলো চট্টগ্রামে। তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবার জন্য এম্বুলেন্স চলাচল থাকার সুযোগ ব্যবহার করছে ইয়াবা পাচারকারীরা। দুর্যোগের এ সময়ে সাধারণত এম্বুলেন্স চলাচল করছে বেশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রোগী আছে মনে করে এম্বুলেন্স চেক করছেন না। এ সুযোগে সাইরেন বাজিয়ে ইয়াবা নিয়ে যাচ্ছিলো তারা । এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও আরো তিন রোহিঙ্গাসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন উখিয়ার কুতুপালং সাত নম্বর ক্যাম্পের এ-ব্লকের রুস্তম আলীর ছেলে কামাল প্রকাশ আক্তার কামাল (২৮), পালংখালীর আবুল বশর (৩২), থাইংখালীর মো. মিজান (২৭) ও মাহমুদুর রহমান (৪০। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারনা, করোনায় জরুরি সেবা হিসাবে এম্বুলেন্স যেখানে সেখানে থামিয়ে চেক করা হচ্ছে না। এ সুযোগে এম্বুলেন্সে রোগী বহন করার আড়ালে ইয়াবা পাচার হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট