চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় স্তব্দ ঈদেও পোশাক তৈরির কাজ

প্রাণচঞ্চল খলিফাপট্টিতে সুনশান নীরবতা

ইফতেখারুল ইসলাম

৭ এপ্রিল, ২০২০ | ৯:২২ অপরাহ্ণ

রমজান সমাগত। এসময় খলিফাপট্টিতে নির্ঘুম রাত কাটে দর্জিদের। অবিরাম মেশিনের আওয়াজে শব্দদূষণ ঘটে এলাকায়। কিন্তু এখন সুনশান নীরবতা। অথচ রমজানের আর বেশিদিন বাকি নেই। গলি ধরে সামনে এগোতেই চোখে পড়ে সারি সারি দর্জির দোকান। কিন্তু সব এখন বন্ধ। নগরীর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের খলিফাপট্টিতে প্রায় প্রতিটি দোকানের দ্বিতীয় তলা থেকে ওপরের তলাগুলো ব্যবহার করা হয় পোশাক বানানোর কারখানা হিসেবে। নিচতলায় বিক্রির জন্য সাজানো থাকে সেসব তৈরি পোশাক। এই সময়ে দোকানের দ্বিতীয় তলায় মেশিনের খটখট শব্দ এবং নিচের দোকানে ক্রেতার কোলাহল থাকার কথা। যার কোনোটাই এখন নেই।

খলিফাপট্টির দর্জি ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পবিত্র শবে বরাতের আগে থেকেই ঈদ উপলক্ষে তারা পোশাক বানানোর মূল প্রস্তুতি শুরু করেন। এর আগে জোগাড় করা হয় ডিজাইন, কোন ধরনের পোশাক বেশি চলছে সেটিও মাথায় রাখেন দোকানিরা। তারপর শুরু হয় পোশাক তৈরির ধুম। কিন্তু এবার নতুন ডিজাইন নিয়ে দোকান মালিক এবং কারিগরদের কোন চিন্তা নেই। একাধিক দোকান মালিকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, বড় বড় উৎসবগুলোতে দেশের আধুনিক শপিং মলসমূহে ভারত, থাইল্যান্ড কিংবা পাকিস্তান থেকে যেসব ডিজাইনের তৈরি পোশাক আসে, এখানকার কারিগররা হুবহু তা রপ্ত করে ফেলেন। এরপর তারাও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে দোকানে সরবরাহ করে থাকেন। ব্যবসায়ীদের মতে, এখানকার তৈরি পোশাকের দাম শপিং মলের পোশাকের চেয়ে অনেক কম। তাই শুধু মফস্বলের দোকান নয়, নগরীর অনেক শপিং মলের ব্যবসায়ীদেরও ভরসার জায়গা এই খলিফাপট্টি।

ব্যবসায়ীরা জানান, একটা সময় প্রায় সারাদেশের শপিং মলে যেতো খলিফাপট্টির তৈরি পোশাক। তবে এখন সেই জৌলুস নেই। দোকানিদের অনেকেই বিদেশমুখী হয়েছেন। তবে এখনো চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার বাজার সমূহের কাপড়ের যোগান দেয় খলিফা পট্টি।
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামশুল আলম জানান, নগরীর শপিংমলগুলোতে তো আমাদের তৈরি পোশাকই উঠে। তার পাশাপাশি দক্ষিণে কক্সজাবারের টেকনাফ পর্যন্ত, উত্তরে কুমিল্লা পর্যন্ত সঙ্গে তিন পার্বত্য জেলার ব্যবসায়ীরা এসে আমাদের তৈরি পোশাক নিয়ে যায়।’ তিনি বলেন, এখানে প্রায় চারশত দোকান রয়েছে। যার মালিকরা সারাবছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস সব মাটি করে দিয়েছে। এখন যে সময় চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে কারিগরদের দম ফেলার ফুরসত থাকতো না। দিনরাত মেশিনের আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে থাকতো। পরিস্থিতি এমন হয়েছে এখন পুরো এলাকা শান্ত। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে ক্রেতা আসেনা। বেশির ভাগ কারিগর গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। তবে কোন কোন কারখানা মালিক মাস্ক বানিয়ে কোনভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, নগরীর একেবারে ছোট্ট একটা এলাকার নাম খলিফা পট্টি। এটি দর্জি পাড়া বলেই খ্যাত। গত ৬০ বছর ধরে এই ছোট্ট এলাকা ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পোশাক শিল্প। ৬০ বছর আগে নোয়াখালী বেগমগঞ্জের প্রয়াত আইয়ুব আলীর হাত ধরে সামান্য ফেরীওয়ালা থেকে এই পোশাক তৈরির মার্কেট। পুরোনো দিনের হকারগিরি এখন আর নেই। আইয়ুব আলীর পরবর্তী প্রজন্মই এই এলাকার পোশাক কারখানার মালিক। গত ৬০ বছরে একেবারে খালি হাতে এসে প্রায় দুই তিন শতাধিক মানুষ এখন এখানকার বড় পাইকারি ব্যবসায়ী।
নিত্যনতুন ডিজাইনের বাহারি রঙের ঈদের পোষাক তৈরিতে এখানকার ৪ শ’ কারখানার ৮ শ’ কারিগর ও ৫ হাজার দর্জিশ্রমিক এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট