চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আপদকালীন সময়ে চালু রাখার চেষ্টা করবো : ডিসি মেহেদী

গভীর রাতে কর্মহীন মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছাচ্ছে পুলিশ

ইমরান বিন ছবুর

৫ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

পুরো কমিউনিটি সেন্টারের মেঝেজুড়ে রাখা হয়েছে ভোগ্যপণ্য ভর্তি হাজারো ব্যাগ। একপাশে কাজ করছে ২০/৩০ জন শ্রমিক। কেউ ডাল-চাল আবার কেউ পেঁয়াজ, তেল প্যাকেট করতে ব্যস্ত। প্রতিটি ব্যাগে ১৯ কেজি ভোগ্যপণ্য দেয়া হচ্ছে। যা দিয়ে একটি পরিবারের কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন (পরিবারের সদস্য সংখা অনুপাতে। খাবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। গতকাল শনিবার নগরীর জামালখানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে দেখা যায় এ দৃশ্য। রাতের আঁধারে শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ঘরে এসব পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। গত পাঁচ দিন ধরে মানবিক কর্মযজ্ঞ চললেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা কোন প্রচারমাধ্যমে মানুষকে সহযোগিতা করার কোন ছবি প্রকাশ কিংবা প্রচার থেকে বিরত থেকেছেন তাঁরা। পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ। জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাবে অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার পর নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) এস এম মেহেদী হাসান এ উদ্যোগ নেন। গত ৩০ মার্চ নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান ভোগ্যপণ্য বিতরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে নগরীর একটি শিল্পগ্রুপ দেড়হাজার প্যাকেট পণ্য সামগ্রীর আর্থিক সহযোগিতা করেন। দিনভর প্যাকেট করা এসব পণ্যসামগ্রী রাত জেগে করোনার প্রাদুর্ভাবে বেকার হয়ে যাওয়া কর্মজীবী মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের চার থানার পুলিশ সদস্যরা। পরবর্তীতে নগরীর অন্যান্য থানা এলাকায়ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।
ডিসি মেহেদী হাসান জানান, প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামের একটি শিল্পগ্রুপের আর্থিক সহযোগিতায় শ্রমজীবী মানুষের সহযোগিতার কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগেও সহযোগিতা করছেন। ইতিমধ্যে নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের চার থানা কোতোয়ালী-বাকলিয়া-সদরঘাট ও চকাবাজার এলাকায় তিন হাজার কর্মহীন মানুষের ঘরে পণ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। আরো তিন হাজার পণ্য সামগ্রীর প্যাকেট তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা নিম্ম আয়ের লোকজনকে পণ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। আমরা এবার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে ভোগ্য পণ্য সামগ্রী বিতরণ করবো। আপদকালীন সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কারোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন মানুষকে ভোগ্যপণ্য সরবরাহের চেষ্টা করবো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইপিজেড এলাকার এক যুবক জানান, তিনি একটি কারখানার ছোট পদে চাকুরি করেন। করোনার কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বাসায় চাল ডাল যা ছিলো তা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে যায়। আমরা দুই ভাই একটি বাসায় থাকি। আশেপাশের লোকজনের ধারণা আমরা আর্থিকভাবে মোটামুটি সচ্চল। বাসায় কোন খাবার না থাকার কথা লজ্জায় কাউকে বলতে পারছিলাম না। শুধু মুড়ি আর পানি খেয়ে একরাত কাটিয়েছি। বাসা থেকে বের হয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইতে যাবো তাও পারছিলাম না। উপয়ান্তর না থেকে পুলিশ সদর দপ্তরের হেল্পলাইন ম্যাসেঞ্জারে সাহায্য চেয়ে একটি এসএমএস পাঠায়। পরদিন পুলিশের একজন এডিসি এসে আমার বাসায় ব্যাগভর্তি চাল-ডাল-তেল-পেঁয়াজ দিয়ে যান। যা দিয়ে আমরা দুই ভাইয়ের কমপক্ষে ২০ দিন চলবে।
এডিসি শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কারো কাছে চাইতেও পারেনা আবার লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারেনা। আমরা চেষ্টা করছি সেই সব মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে সনাক্ত করতে। যারা করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন অবস্থায় ঘরবন্দী হয়ে আছে। সেই সব মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাই সিএমপি। সিএমপি’র হটলাইনে ফোন করে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অনেকে সাহায্য চেয়েছেন। দিনের বেলা পুলিশ সদস্য গিয়ে সাহায্য চাওয়া পরিবারের তালিকা যাচাই-বাচাই করে রাতের বেলা গোপনে সেসব পরিবারে নিত্যপণ্য খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা কারো ছবি কিংবা নাম ঠিকানা প্রচারের পক্ষে নয়। আপদকালীন সময়ে শুধু মানবিকতায় আমরা মানুষের পাশে থাকতে চায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট