চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম কারাগার

২৩৬ বন্দীর তালিকা মন্ত্রণালয়ে

১৫১ জন বিচারাধীন মামলার আসামি (হাজতি) ও ৮৫ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

নাজিম মুহাম্মদ

২ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশে^র বিভিন্ন দেশের মতো করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতামুলক কার্র্যক্রমের পাশাপাশি বন্দীর সংখ্যা কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সারাদেশের কারাগার থেকে বিভিন্ন মামলায় তিন হাজার হাজতি ও দেড় হাজার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। লঘু অপরাধে থাকা কারাবন্দী ও সাজার মেয়াদ যাদের অর্ধেক বা তার বেশি সময়কাল পার হয়েছে, যেসব মামলায় সর্বোচ্চ এক বছরের সাজা হতে পারে সেই সব বন্দীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে যারা সাজার মেয়াদের অর্ধেক কিংবা আরো বেশি সময় সাজাভোগ করেছেন তাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আইনগত বৈধতার যাছাই বাছাই চলছে।
কারা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৩৬ জন বন্দীর তালিকা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ১৫১ জন বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার আসামি (হাজতি) ও ৮৫ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী। যারা সাজার মেয়াদের তিন ভাগের দুই ভাগ ইতোমধ্যে কারাগার কাটিয়েছেন। প্রায় ১৮শ বন্দীর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল বুধবার বন্দীর সংখ্যা ছিলো ৭ হাজার ৪ জন। ধারণ ক্ষমতার চারগুন বেশি বন্দী নিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে কারাকর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩৬ জন বন্দীর তালিকা আমরা পাঠিয়েছি। এদের মধ্যে লঘু অপরাধ ও যাবজ্জীবন সাজা মেয়াদের অর্ধেক ও তার বেশি ইতোমধ্যে ভোগ করেছেন এমন বন্দীর নাম তালিকায় রয়েছে। পাঠানো তালিকায় অচল ও অক্ষম সাজাপ্রাপ্ত চারজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীও রয়েছেন।
জেলা সুপার বলেন, করোনা ঝুঁকি এড়াতে কারাগারের ভেতরে -বাইরে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আগে প্রতিদিন একশো থেকে দেড়শো নতুন বন্দী কারাগারে আসলেও বর্তমানে গড়ে ২০ থেকে ২২ জন নতুন বন্দী আসছে। কারাগার হাসপাতালে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। শেখ রাসেল ভবনকে কোয়ারেন্টিন ওয়ার্ড হিসাবে তৈরি রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনজন বন্দীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। নতুন বন্দীদের কারাফটকে কারা চিকিৎসকের তত্ত্ববধানে গঠিত টিম জ¦র কিংবা করোনার যেসব লক্ষণ রয়েছে তা পরীক্ষা করছে। নতুন বন্দীরা বিদেশ থাকা আসা আতœীয়স্বজনের কাছে ছিলেন কিনা কিংবা বিদেশ থেকে কেউ এসেছে কিনা তা যাছাই করা হচ্ছে। এসবের কিছু পাওয়া গেলে তাকে কোয়ারেন্টিন রাখা হচ্ছে। ১৪/১৫ দিন নির্দিষ্ট সময় পার হবার পর তাকে সাধারণ বন্দীদের ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। তবে করেনায় জীবাণু বহনকারী কোন বন্দী এখনো পায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন জেল সুপার কামাল হোসেন।
জেলা সুপার বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটানো হচ্ছে নিয়মিত। বন্দীদের তৈরি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডে। কারাগারের ভেতরে সাতটি ও বাইরে ৪টিসহ মোট এগারোটি নতুন বেসিন বাসানো হয়েছে। বন্দীদের দেখাশোনার বিষয়ও সীমিত করা হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের মাসে একদিন ও হাজতী বন্দীদের পনেরো দিনে একদিন দেখা করার সুযোগ পাবেন স্বজনরা। একজন বন্দীর সাথে একজন ব্যক্তি সাক্ষাত করতে পারবেন। কোন বন্দীর গুরুত্বপুর্ণ কথা থাকলে পরিবারের সাথে টেলিফোনে সপ্তাহে একদিন সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রতি মিনিট এক টাকা বিল দিতে হবে। বন্দীর ব্যক্তিগত ক্যাশ (পিসি) থেকে এ টাকা কাটা হবে। গতকাল বুধবার কারা-অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক মো. আববার হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, যাদের মামলা এখনো বিচারাধীন, জামিনযোগ্য অপরাধ হলে এদের জামিন দেয়া যায় কিনা, জামিন যোগ্য ছোট-খাটো অপরাধে যারা কারাগারে রয়েছেন, এরকম তিন হাজারের বেশি হাজতির নাম প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে ওই প্রস্তাব যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আপত্তি না থাকলে পাঠানো হবে আদালতে। শেষ পর্যন্ত বিচারকাই সিদ্ধান্ত নেবেন জামিন দেওয়া যায় কিনা। মুক্তির বিষয়টি বিচারকদের হাতে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্ত্রণালয়ের আদেশে এ প্রস্তাব দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
দেশের ৬৮টি কারাগারের ৯০ হাজারের মতো বন্দী রয়েছে। যা কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার প্রায় চারগুণ। প্রতিটি কারাগারেই এক জায়গায় অনেক বন্দী থাকেন। তাদের অন্যত্র যাওয়ার সুযোগও থাকে না। তাই এ ধরনের আবদ্ধ জায়গায় করোনার সংক্রমণ ঘটলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। এই বিবেচনাতেই জামিনযোগ্য ধারার বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইতিমধ্যে করোনা আতঙ্কে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে বিভিন্ন জেলের তিন হাজারের বেশি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে নারীদের যৌন হেনস্থা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঙ্গাহাঙ্গামা, জাল নোট, শিশু অপহরণ, দুর্নীতি, মাদক পাচার (এ ক্ষেত্রে মাদকের পরিমাণ বিচার্য) এই ধরনের অভিযোগে বা বাণিজ্যিক ও আর্থিক অভিযোগে যারা বন্দী রয়েছেন, তারা অবশ্য মুক্তি পাবেন না। এছাড়া যেসব বিচারাধীন বন্দী রাজ্যের বাইরের বাসিন্দা এবং যাদের বিরুদ্ধে বিদেশি আইনে অভিযোগ রয়েছে, তারাও এই মুক্তির তালিকায় থাকবেন না। বিচারাধীন বন্দীদের অন্তর্বর্তী জামিনের ক্ষেত্রে একাধিক শর্ত থাকবে। একইভঅবে ইরান ৮৫ হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে সরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট