চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হাজার কোটি টাকা ক্ষতির শংকা করোনায় বন্ধ দোকান-মার্কেট

ব্যাংকের সুদ, দোকান ভাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল মওকুফসহ বিশেষ প্রণোদনা দাবি ব্যবসায়ীদের

ইফতেখারুল ইসলাম

১ এপ্রিল, ২০২০ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

  • বন্ধ হয়ে যাবে অনেক দোকান
  • বহু ব্যবসায়ী দেউলিয়া হবেন
  • চাকরি হারাবেন বিপুল কর্মচারী

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনাভাইরাস’র প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের অর্থনীতিতেও। বিশেষ করে টেরিবাজারসহ নগরের শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। অথচ পবিত্র শবে মেরাজের আগে থেকেই তাদের পুরোদমে ব্যবসা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই দেউলিয়া হবেন, অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যাবে, অনেক কর্মচারী চাকরি হারাবার আশঙ্কা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এই খাতকে রক্ষা করতে ব্যবসায়ীরা বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নগরীতে টেরিবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ছাড়াও অনেকগুলি শপিংমল রয়েছে। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল নিউমার্কেট, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুপার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ইউনুস্কো সেন্টার, স্যানমার, ফিনলে স্কয়ার, আমিন সেন্টার, ব্যাংকক সিঙ্গাপুর মার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টার, মতি কমপ্লেক্স, মতি টাওয়ার, গোলজার টাওয়ার, কেয়ারি ইলিশিয়াম, বে-শপিং, ঝনক প্লাজা ইত্যাদি।
রিয়াাজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ মাহবুবুল আলম সওদাগর পূর্বকোণকে বলেন, আমরা এগারো মাস বসে থাকি রমজান মাসের আশায়। এবারের করোনা মহামারী আমাদের সেই আশার গুঁড়ে বালি হয়েছে। ঈদে কাপড়ের চাহিদা মেটাতে আমরা দেশ-বিদেশ থেকে নানা ডিজাইনের কাপড় সংগ্রহ করি। কিন্তু এবার সে ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারিনি।
সীমাবদ্ধতার মধ্যে যতটুকু প্রস্ততি নিয়েছি তাও বিক্রি করতে পারছি না। তিনি জানান, রিয়াজউদ্দিন বাজারের ১০ হাজার দোকানে অন্তত ৫০ হাজার সেলসম্যান রয়েছে। দোকান মালিকরা তাদের বসিয়ে বেতন দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু ব্যবসার আসল মৌসুমে দোকান বন্ধ রেখে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাছাড়া এ ক্ষতি সারা বছরেও কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে দোকান মালিকরা গার্মেন্টসের চেয়ে কোন অংশে কম নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার শিল্প কারখানায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে। দোকান মালিকদেরও একইভাবে প্রণোদনা দেয়া উচিত। কারণ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণ। তাদেরকে বাঁচিয়ে না রাখলে স্থানীয় অর্থনীতি টিকবে না
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণসহ আত্মীয়-স্বজন কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধার দেনা করে ঈদের চাহিদা মেটানোর জন্য দোকানের মালামাল তোলেন। বাকি ১১ মাস তারা কোনভাবে চলেন। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মচারীদের ছুটি দিতে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু তাদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। অপরদিকে সারা বছরের ব্যবসার ট্যাক্সও দিতে হচ্ছে। আসল সময়ে ব্যবসা করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। টেরিবাজারের প্রায় ২ হাজার ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, কেনাকাটার সেরা সময়টা এখন পার হয়ে যাচ্ছে। রমজান এলে মানুষ এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। তাই রমজানের আগেই মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় কিনে ফেলেন। এমতাবস্থায় ব্যাংকের সুদ, জমিদারদের দোকান ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল এক মাসের জন্য মওকুফ করার দাবি জানান তিনি।
সানমার ওশান সিটি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসান উল্লাহ হাসান পূর্বকোণকে বলেন, রমজানের দুই মাস আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে যথাসময়ে মালামাল সংগ্রহ পর্যন্ত করতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়েও কারো কোনো ধারণা নেই। অথচ ব্যবসায়ীরা সারাবছর ধরে অপেক্ষা করেন এই মৌসুমের জন্য। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কাপড় ব্যবসায়ীরা। তাঁরা রমজান কেন্দ্রীক ব্যবসা করেন। এভাবে চলতে থাকলে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক কর্মচারী তাদের চাকরি হারাবে। তাই ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীদের দুর্দশার কথা চিন্তা করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট