চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা মোকাবিলা চার ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ মার্চ, ২০২০ | ৩:১৫ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহাদুর্যোগ হিসাবে আবির্ভূত হয়ে বিশ^কে স্থবির করে দিয়েছে। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,ইতালী, স্পেন ও ফ্রান্সসহ উন্নত দেশগুলো বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে এর প্রাদুর্ভাব। ৪ দিন ধরে দেশ অচল। দেশের কোটি কোটি মানুষ ঘরে অবরুদ্ধ। বিশে^র বিজ্ঞানীরা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সকল ধর্মাবলম্বী মানুষ ইবাদত ও উপাসনার মাধ্যমে স্রষ্টার আনুকূল্য কামনা করছেন। বাংলাদেশের মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ ও খৃস্টান ধর্মাবলম্বীরা একইভাবে প্রার্থনায় মশগুল। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় এই চার সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ব্যক্তিদের অভিমত:

দুর্যোগ মুহূর্তে দরুদ শরীফ বেশি বেশি পড়তে হবে
জমিয়তুল ফালাহ খতিব
জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, করোনার বিষয়টা গ্লোবালাইজড হয়ে গেছে। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে কোরান হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা শরীয়ত অনুমোদিত। সরকার ইচ্ছা করলে জামাতে নামাজ পড়াও বন্ধ করে দিতে পারে। এতে কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। জুমার নামাজের আজান হওয়ার পর মসজিদে হাজির হওয়া ওয়াজিব। কিন্তু সবচেয়ে বড় ফরজ হচ্ছে জীবন রক্ষা। তাই জীবনের স্বার্থে সবকিছু মেনে নিতে হবে। এখানে আবেগ নয়, বিবেচনা করতে হবে বিবেক দিয়ে। তিনি বলেন, এই দুর্যোগ মুহূর্তে আমাদের ঘরে থেকে দরুদ শরীফ পড়া ও জিকির আসকার বেশি বেশি করতে হবে। মহান রব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করতে হবে।
­

মন্দিরে না গিয়ে ঘরে বসেই প্রার্থনা ও উপাসনা করুন
তুলসীধাম আশ্রমের মোহন্ত মহারাজ
এ বিষয়ে বাঁশখালী ঋষিধাম ও নগরীর তুলসীধাম আশ্রমের মোহন্ত মহারাজ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ তাঁর ভক্তদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে নিজ গৃহে অবস্থান করে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে এ মহামারী থেকে দেশকে রক্ষায় প্রার্থনা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী এ মুহূর্তে ভক্তদের আশ্রমে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে মন্দিরে না গিয়ে ঘরে বসেই প্রার্থনা ও উপাসনা করার জন্য ভক্তদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব পদক্ষেপ যেন তারা মেনে চলেন। যেমন নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোবেন, মাস্ক ব্যবহার করবেন, দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলবেন, বেশি লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। শুধু বিধি নিষেধগুলো পালন করলে আর প্রার্থনা করলে ¯্রষ্টা এ মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করবে। দেশে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর নানা গুজব ও অপপ্রচার চলছে। আর এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। এ অবস্থায় বিচলিত না হয়ে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখতে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, কোনো ধর্মই গুজব সমর্থন করে না। এখন একটাই কাজ, সবার কল্যাণ চিন্তা করা আর ইষ্টদেবতার স্মরণ, মনন ও প্রার্থনা। কাজেই আসুন আমরা সকলে মিলে নিজ নিজ গৃহে বসে পরম কল্যাণময় ভগবানকে ডাকি। তিনিই তো সৃষ্টি, স্থিতি, পালন এবং সংহারের নিয়ামক। তিনি আমাদেরকে রক্ষা করবেন এ বিপদ থেকে। আসুন আমরা কায়মনোবাক্যে সদভাবনায়, প্রার্থনায় ডুবিয়ে রাখি নিজেদের। তবে শরীর রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই আমরা মনোযোগী হবো।

বুদ্ধ, ধর্ম সংঘের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পুণ্য’র কাছে প্রার্থনা করুন
সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব
বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ থের বলেছেন, করোনা ভাইরাস সমগ্র পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে। মানব জাতিকে করছে বিপন্ন , এই বিষয়টা আমাদের সকলের গভীরভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন । বুদ্ধের শিক্ষা মতে বুদ্ধ, ধর্ম সংঘের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে পুন্য’র কাছে প্রার্থনা করা যাতে সবাই এই করোনা ভাইসারের মহামারী থেকে পরিত্রাণ তথা মুক্তি লাভ করতে পারি। মানুষ জীবনযাত্রা জেনে স্বাভাবিক হয়ে যায়। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ইতিমধ্যে প্রতিটি বিহার, বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠানমালা সীমিত করা হয়েছে। লোক সমাগম না করে অবস্থানরত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন করছে । ভক্তম-লীকে আহ্বান করা হয়েছে বাড়িতে অবস্থান করে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনের । বিশেষ কারণ ( আত্মীয়ের মৃত্যু, ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য জন্য) ছাড়া যেন বাড়ি থেকে বের না হয় এবং ভিক্ষুসংঘ যেন বের না হয়।
সমগ্র দেশ লকডাইন পরিস্থিতি, ঘর থেকে মানুষ বের হতে পারছে না। তাই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে সাধ্য অনুসারে খাবার, ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য মাস্ক, সাবান , হ্যান্ডওয়াস, ইত্যাদি প্রদান করা ইতিমধ্যে চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার পক্ষ থেকে করোনা সচেতনতা বিষয়ে বিশেষ জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছি। প্রতিটি বিহারে ও বৌদ্ধ প্রধান গ্রামগুলোর বিহারের বিশেষ জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান
মেট্রোপলিটন ডায়োসিস প্রধান
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ডায়োসিসের প্রধান (ধর্মপ্রদেশ) আর্চবিশপ মজেস কস্তা বলেন, অতীতের বিভিন্ন ঘটনা থেকে অনেক বিষয়ে আমরা জ্ঞান অর্জন করেছি, সচেতন হয়েছি। এ ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে ইশ^র কী চান, সেটা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। আমরা মনে করছি, এ ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়ে ইশ^র আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। নিশ্চয় তিনি আমাদের কষ্ট দিতে চান না, তবে একটা কষ্টের পরিস্থিতির মাধ্যমে তিনি আমাদের অন্তরের সাথে কথা বলতে চান। আমার যেটা মনে হয়, হতে পারে আমরা ইশ^রের কাছ থেকে অমনোযোগী হয়ে গেলাম। এ ঘটনার (করোনাভাইরাস) মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারছি, আমরা কত অসহায়। ইশ^র হচ্ছে সর্বপ্রথম ও প্রধান এবং ঈশ^রই সর্ব শক্তিমান। এ চেতনার কথা আমরা মুখে বলি, এখন আমাদের অন্তরে তা আরো বেশি ধারণ করতে হবে। ঈশ^রের কাছে আমরা নিজেদের অনুগত রাখি এবং আত্মসমর্পণ করি। বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে আমরা উপকৃত হবো ঠিকই কিন্তু ঈশ^রের অনুগ্রহ এখন আমাদের সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, সাইন্সের মধ্যে দিয়ে যে পরামর্শগুলো দেয়া হয়, আমাদের সেসব আমলে নেয়া দরকার। কারো কারো জন্য সেটা একটু কঠিন। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের সেগুলো মেনে নেয়া উচিত। ঈশ^র দূরে না, তিনি কাছেই আছেন। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে তিনি আমাদের সাবধান করে দিচ্ছেন। আমরা যাতে সচেতন হই। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা আমাদের শ্রদ্ধার সাথে মেনে চলা উচিত। এ কারণে আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো খুব সীমিত করেছি। প্রতি রবিবার বিকেল ৪টায় এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত একযোগে প্রার্থনা হলেও এখন তা অনলাইনে হচ্ছে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনলাইনে প্রার্থনায় যুক্ত হচ্ছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট