চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে ভেন্টিলেটর আইসিইউ সুবিধা নেই বললেই চলে

ইমাম হোসাইন রাজু

৩০ মার্চ, ২০২০ | ৩:২১ পূর্বাহ্ণ

বিশ^ব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশে^র প্রায় ১৯৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। তালিকা থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে দেশে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। যদিও সুখের খবর হচ্ছে- গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশে (এখন পর্যন্ত) এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে দিন গড়ালেই মহামারী ধারণ করতে পারে এ ভাইরাস। করোনা মোকাবিলায় সারাদেশে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। চট্টগ্রামেও বারবার এমন প্রস্তুতির কথা বলা হচ্ছে। তবে এ প্রস্তুতি আদৌ কতটুকু এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিউমোনিয়ার মতোই শ^াসতন্ত্রের জটিলতা বাড়তে থাকে। এসময় ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। জীবনরক্ষায় কৃত্রিম শ^াসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর সেবা দিতে হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে। কিন্তু দুঃখের খবর হচ্ছে- করোনাভাইরাস রোগীদের এমন সুবিধা একমাত্র রাজধানীতেই রয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত রোগীর ফুসফুস যদি কাজ না করে তাহলে রোগীর নিঃশ^াস প্রশ^াসের কাজটা ভেন্টিলেটর করে দেয়। এর মাধ্যমে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে এবং পুরোপুরি সেরে ওঠতে রোগী হাতে কিছুটা সময় পান। কিন্তু চট্টগ্রামে এমন ভেন্টিলেটরের সুবিধা নেই বললেই চলে।
শুধু ভেন্টিলেটরই নয়, চট্টগ্রামে সরকারিভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হাসপাতালগুলোতে নেই আইসিইউ’র সুবিধাও। যা নিয়ে বিপাকে স্বয়ং চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের বিষয়ে একাধিকবার বৈঠক বসেও কোন সুরাহা করতে পারেনি তারা। যা নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে সুরাহা পায়নি।
যদিও শেষ পর্যন্ত সরকারিভাবে পাঁচ শয্যার ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ’র সরঞ্জাম দেওয়ার কথা জানানো হয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে। তবে সেটিও বসাতে পারবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানাগুঞ্জন। কমপক্ষে মাসখানেক সময়ের মধ্যে এ পাঁচ শয্যার আইসিইউ স্থাপন করা সম্ভব বলে দাবি করেন স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।
করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের এমন টানাপোড়েন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত একটি বেসরকারি হাসপাতালের ওপর আস্থা রাখতে হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। যদিও তাতেও রয়েছে নানা প্রশ্ন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি চট্টগ্রামের সচেতন মহলের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য প্রস্তুত থাকা শয্যার দশ শতাংশ ভেন্টিলেটর থাকা জরুরি। তবে এটি সম্ভব না হলে নূন্যতম চার শতাংশ থাকতে হবে। তা না হলে চরম ঝুঁকিতে পড়তে হবে। এ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নূন্যতম ৫০ শয্যার আইসিইউ ও বিশেষ ভেন্টিলেটর সুবিধা থাকা জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মাত্র ১২ শয্যার আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা রয়েছে। এর বাইরে এ অঞ্চলে সরকারি আর কোন হাসপাতালেই এ সুবিধা নেই। বেসরকারিভাবে নগরীর হাসপাতালগুলোতে ৩১টি ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ সুবিধা রয়েছে। এর বাইরে বেশ কিছু আইসিইউ শয্যা থাকলেও তাতে ভেন্টিলেটর সুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ। তবে এসব ভেন্টিলেটর করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্যে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীরা হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন গুরুতরভাবে অসুস্থ হতে পারেন। যাদের নিঃশ^াস-প্রশ^াসে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর কারণে রোগীর ফুসফুস বিকল করে দেয় এবং তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা তিনটি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে কোনো ধরনের ভেন্টিলেশন সুবিধা দেয়া হয়নি। তবে আদৌ এসব ইউনিটে সরকারিভাবে ভেন্টিলেটর সুবিধা পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের প্রবীণ চিকিৎসক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘দিনদিন যেভাবে বিশ^সহ বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে ৫০০ ভেন্টিলেটর থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত একটিও বসাতে পারেনি তারা। এটি খুবই উদ্বেগের। যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে মোকাবেলা করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে’।
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ সুবিধা খুবই জরুরি উল্লেখ করে প্রবীণ এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘দ্রুত এই সংকট নিরসন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে চট্টগ্রামকে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে কমপক্ষে ২০টি ভেন্টিলেট যুক্ত করতে হবে। শুধু তা স্থাপন করলেই হবে না, বরং এসব পরিচালানার জন্য প্রশিক্ষিত ও দক্ষ একটি চিকিৎসক টিম গঠন করতে হবে। তাহলে অন্তত এ ঝুঁকি থেকে কিছুটা হলেও নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের বিষয়টি বিবেক দিয়ে ভাবা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি’।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শহরিয়ার কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকলেও ইতোপূর্বে নগরীর প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। যাদের ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ রয়েছে, তাদের থেকে এ সুবিধা নেওয়া হবে। এর বাইরে সরকারিভাবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ শয্যার ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ স্থাপনের সরঞ্জাম পাচ্ছি। সেটি বসানো হলে কিছুটা হলেও এ সমস্যা নিরসন হবে। অতি জরুরি হলে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ সুবিধাও ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করে তিনি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট