চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংকট হবে না সবজিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ মার্চ, ২০২০ | ৬:২৬ অপরাহ্ণ

হাট-বাজারে এখনো শীতকালীন তরতাজা নানা ধরনের সবজি। আরও মাসখানেক চলবে শীতের সবজিতে। এরইমধ্যে পুরোদমে চলছে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও রবিশস্য রোপণ। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সবজির কোনো সংকট হবে না বলে জানায় কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা। বাজারে ক্রেতা কমে যাওয়ায় চাহিদা ও দাম-দুটিই কমতির দিকে রয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘ক্ষেতে এখনো প্রচুর শীতকালীন সবজি রয়েছে।

শীতকালীন সবজি দিয়ে আরও মাসখানেক চাহিদা মেটানো যাবে। এরমধ্যেই গ্রীষ্মকালীন কয়েক পদের সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক মাসেও সবজি সংকট হবে না চট্টগ্রামে।’ সবজি ভাণ্ডারখ্যাত চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড ও বাঁশখালী উপজেলাসহ আরও কয়েকজন প্রতিনিধি কথা বলেছেন ক্ষেত-খামারের কৃষকদের সঙ্গে।

চাষীরা জানান, হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহারের কারণে এক মৌসুমে তিনবার সবজি উৎপাদন করা যায়। ধানের চেয়ে লাভও ভালো পাওয়া যায়। এতে কৃষকেরা সবজি চাষে বেশি ঝুঁকছেন। চন্দনাইশ শঙ্খ নদীর তীরে ব্যাপক সবজি চাষ করা হয়। এই অঞ্চলের সবজি দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাহিদা অনেকটা পূরণ করা হয়।

চন্দনাইশ দোহাজারী এলাকার সবজি চাষী মো. ওসমান বলেন, ‘জমি বর্গা নিয়ে ৮৪ শতক জমিতে সবজি চাষ করেছি। শীত মৌসুমে তিনবার ফলন হয়েছে। মাঝখানে পোকার কারণে প্রায় ৪০ শতক জমির সবজি নষ্ট হয়েছিল। কিছুটা ক্ষতিও হয়েছিল। পরবর্তীতে তা পুষিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এখনো শীত মৌসুমে লাগানো সবজি বিক্রি করছি। আরও মাসখানেক বিক্রি করতে পারব।’

চাষী ওসমান বলেন, ‘শীতকালীন সবজি ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন সবজির বীজ রোপণ করা হচ্ছে। কয়েক পদের সবজি ইতিমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই কয়েক পদের গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রির উপযোগী হবে।’

নগরী ও জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেত থেকে সবেমাত্র তুলে আনা মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা সবজির সমারোহ। কেনাকাটায় ব্যস্ত হাটবাজারগুলো। দামও অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে চাহিদা কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

সবজি ভাণ্ডারখ্যাত দোহাজারী বাজারে সবজি চাষীরা ঢেঁড়শ বিক্রি করছেন কেজিতে ২৫-৩০ টাকা, টমেটো (৫০ কেজি ভার) ১২০ টাকা, বেগুন কেজি ৪-৫ টাকা, তিতকরলা কেজিতে ২০-২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া (১ থেকে দেড় কেজি ওজন) ১০-১৫ টাকা, আলু ১৮ টাকা দরে। পাইকারি, মধ্যস্বত্বভোগী ও আড়তদার না থাকায় দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে বলে জানান সবজি চাষীরা।

দোহাজারী বাজারের সবজি চাষী মো. ওসমান, লোকমানসহ কয়েকজন জানান, দোহাজারী বাজার থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪০ ট্রাক সবজি নগরী ও বিভিন্ন উপজেলার সরবরাহ করা হতো। এখন ১০-১২ ট্রাক সবজি কিনছেন ব্যবসায়ীরা। একই এলাকার মো. লোকমান বলেন, শীতকালীন সবজি উত্তোলন প্রায় শেষের দিকে। এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি রোপণের প্রস্তুতি চলছে। তবে ক্রেতা কমে যাওয়ার সবজির দামও অনেক কমে গেছে।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকতা স্মৃতি রাণী সরকার বলেন, ‘আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ করা হয়েছে। ক্ষেতে এখনো শীতকালীন সবজি রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্রেতা কমে যাওয়ায় সবজির দাম অনেক কমে গেছে। এছাড়াও চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত সবজি উৎপাদন হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সবজির সংকট হবে না।

নগরীর ২নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা কম। সবজির সরবরাহ এখনো ভালো রয়েছে। দেশে সংকটময় মুহূর্তেও সবজির দাম এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে। দামও বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’

শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হয় বাঁশখালী ও সীতাকু-ে। বাঁশখালীতে ২৮শ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। শীতকালীন সবজি উত্তোলন অনেকটা শেষ পর্যায়ে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রীষ্মকালীন সবজির চারা রোপণ করা হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, ‘শীতকালীন সবজি ক্ষেত্র থেকে উঠার পর গ্রীষ্মকালীন সবজি শসা, ঝিঙা, কাকরল, বরবটি, বেগুন, মুলা, আলু রোপণ শুরু হয়েছে। মাস দেড় মাসের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু হবে।’ পাহাড়ি ঢালু ও দোআঁশ মাটির কারণে সবজি উৎপাদন ভালো হয়।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, ১৫ মার্চ থেকে গ্রীষ্মকালীন সবজি ও রবিশস্য রোপণ শুরু হয়। তবে কৃষকেরা শীতকালীন সবজি ওঠার পরপরই ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই সবজি রোপণ শুরু করেছেন চাষীরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় ১০ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত ৫ বছরে উৎপাদন বেশি বেড়েছে। ২০১০-২০১১ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর। বর্তমানে ২০১৯-২০২০ সালে এসে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৩০ হেক্টর জমি। ২০১০ সালে সবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল পৌনে তিন লাখ মেট্রিক টন। আর বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৫ লাখ টনেরও বেশি।

জেলার সীতাকুণ্ডে শীত-গ্রীষ্ম মৌসুমে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ও লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা কম এসেছে। এতে বড় বাজারগুলো প্রচুর সবজি থাকলেও ক্রেতা কম ছিল।

উপজেলা সহকারী কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ জানান, শীত মৌসুমে ৫ হাজার ৩ শ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ করা হয়। হেক্টরপ্রতি সবজি উৎপাদন হয় ২০ হাজার মেট্টিক টন। সেই হিসাবে উৎপাদিত সবজির পরিমাণ ১০ কোটি ৬০ লাখ মে. টন। শীতকালীন সবজি চাষ হওয়া একই পরিমাণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ হয়।

এই অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। সীতাকু- বাজারের সবজি আড়তদার সুনীল দাশ জানান, ক্রেতা কম থাকায় গতকাল শুক্রবার সবজির হাট তেমন জমেনি। জেলার চন্দনাইশ, বাঁশখালী, সীতাকু-, পটিয়া, কর্ণফুলী উপজেলা ছাড়াও নগরীর বৃহত্তর হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায় বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে সবজি চাষ করা হয়। এসব অঞ্চলে উৎপাদিত সবজি চট্টগ্রামের বড় চাহিদা পূরণ করছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট