চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজারের ৮ থানার ওসিসহ ২৬৪ জনকে গণবদলি

ফাঁকা নগরীতে চুরি ঠেকাতে পুলিশের বাড়তি নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ মার্চ, ২০২০ | ৬:২১ অপরাহ্ণ

দুই দিন আগেই নগরীতে শুরু হয়েছে অঘোষিত ‘লক ডাউন’। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে চলছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি। করেনার প্রকোপ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরির লক্ষে ঘরের বাইরে লোকজন আসা বন্ধে সেনাবাহিনীর টহলও উপেক্ষা করে শহর ছাড়ছে মানুষ। ছুটছে গ্রামে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার পর ছোট ছোট পিকআপ ভাড়া নিয়ে, কিছুদূর হেঁটে আবার কয়েকজন মিলে সিএনজি চালিত ট্যাক্সি ভাড়া করে গ্রামের উদ্দেশে চলছে যাত্রা। এতে চুরি বেড়ে যাওয়ার আশংকায় বাড়তি টহলের ব্যবস্থা করেছে নগর পুলিশ।

নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) এস এম মেহেদী হাসান জানান, টানা বন্ধের কারণে অনেকে বাসা-বাড়ি তালামেরে নগর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ। সড়কে যেহেতু যানবাহন চলাচল নেই ছিনতাই হবার সাম্ভবনাও তেমন নেই। তবে চুরি ঠেকাতে ইতিমধ্যে প্রত্যেক থানা এলাকায় টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানা হয়েছে। গত দুইদিনে চট্টগ্রাম শহর ও নগরীর প্রবেশপথগুলো ঘুরে দেখা যায়, নগরীর ভেতরের থানাগুলোর পুলিশ সড়ক থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিলে তারা অলিগলিতে যাচ্ছে। আবার বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে পরিচ্ছন্নতার কাজও করছে পুলিশ। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার রাস্তায় বের হয়ে জীবানুনাশক পানি ছিটিয়েছেন। কোথাও লোকজন জড়ো হলে তাদের দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে বলও প্রয়োগ করতে দেখা যায়। কিন্তু নগরীর প্রবেশপথে সে দৃশ্য দেখা যায়নি। শহরের ভেতরে যানবাহন চলাচল বন্ধ

থাকায় অনেকে পায়ে হেঁটে শহর থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। স্রোতের মতো মানুষ গ্রামে ছুটছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের সামনেই লোকজন গাড়িতে বসে শহর ছাড়ছে। একটি ছোট ট্রাকে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে বসে গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আবার শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণে মইজ্জার টেক নামক স্থানে শহর থেকে হেঁটে আসা মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। সেখান থেকে তারা সিএনজি চালিত ট্যাক্সি ও হিউম্যান হলারসহ নানা ধরনের গাড়িতে উঠছেন। একটু দূরে কর্ণফুলী থানার পুলিশ দায়িত্বরত। তবে তারা গ্রামমুখী লোকজনকে কোনোভাবে বাধা দিচ্ছে না।

বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জানান, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও অলিগলিতে পুলিশের বাড়তি টহল বাড়ানো হয়েছে। কারণ ঈদের ছুটিতেও নগরী এভাবে মানুষ শুণ্য হয় না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।

নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কর্ণফুলী সেতু ও একেখান গেইটের কাছে লোকজন বাধা পেলে আর চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে গ্রামে যাবার সাহস করতো না। এখন দলে দলে লোকজন গ্রামে গিয়ে সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারী হাইওয়ে থানার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাত বলেন, কর্ণফুলীর মইজ্জার টেক থেকে যদি গাড়ি ছাড়া বন্ধ করা যায়, তাহলে আর শহর থেকে মানুষ বের হতে পারতো না। এখন আমরা একটা দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করছি। এখানে কার কী দায়িত্ব সেটা দেখার সুযোগ এ মুহূর্তে নেই।

তিনি বলেন, ‘লকডাউন’ কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আমি গত দুইদিনে পাঁচটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস আটক করেছি। এরমধ্যে কোনো কোনো মাইক্রোবাসে বিদেশি এনজিও সংস্থার স্টিকার লাগিয়ে যাত্রী টানছে চট্টগ্রাম শহর থেকে।

জানা যায়,‘লকডাউন’ চলার আগে থেকেই মূলত কিছু মানুষ দীর্ঘ ছুটির বিষয়টি মাথায় নিয়ে গ্রামে চলে যায়। ফলে নগরীর অনেকগুলো বস্তি ও আবাসিক এলাকা বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে। দিনের বেলা সড়কে পাহারা না মেনে এরইমধ্যে নগরবাসীর একটি বড় অংশ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটা এখন একটা নতুন সংকট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট