চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্থবির চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন
স্থবির চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

স্থবির চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু

২৫ মার্চ, ২০২০ | ৫:১৫ অপরাহ্ণ

সর্বত্র হতাশা আর হতাশা। এক ‘করোনা ভাইরাস’ লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সারা বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গন। ক্রিকেট ফুটবল, টেনিস, অলিম্পিকসহ সকল ক্রীড়া এখন বাক্সবন্দী হয়ে আছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। দেশের বেশ কয়েকটি জেলা সারা বছর কোন না কোন আসর নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তার মধ্যে অন্যতম বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলা। অন্তত এই কথাটি (সারা বছর ব্যস্ত) বলে চট্টগ্রামবাসিরা বেশ গর্ববোধই করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বক্তরা এসব কথা বলে থাকেন। তবে কথাটা একবর্ণও মিথ্যে নয়। যাই হোক এবং যেভাবেই হোক, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিবছর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এখন সারা বিশ্ব এবং সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনেও স্থবিরতা চলছে।

অথচ এ সময়ে বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ফুটবল নিয়ে এম এ আজিজ মুখরিত থাকার কথা ছিল। এ দুয়ের পাশাপাশি ১৫ দিন অন্তর অন্তর চলছিলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের খেলা। গেল ১৭ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে সবধরণের খেলাধুলো বন্ধ রয়েছে। আরো বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত রাফি স্মৃতি ক্রিকেটের খেলা। খেলাগুলো দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। শুরুর ঘোষণা দিয়েও বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে চিটাগাং মাস্টার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এ টুর্নামেন্টটি বন্দর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া এ সময়ে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত অনিরুদ্ধ বড়ুয়া অণি স্মৃতি টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতাও জিমন্যাসিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট একই কারণে বন্ধ রয়েছে। মাদারবাড়ি শোভনীয়া ক্লাব আয়োজিত আ জ ম নাছির উদ্দিন গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে আয়োজকরা। চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনের নতুন রেফারি প্রশিক্ষণ কোর্স কার্যক্রম ১৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। একই কারণে রেফারি এসোসিয়েশনের সংবর্ধা অনুষ্ঠানসহ আনুসাঙ্গিক আরো বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাতে খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। হাটহাজারীতে বঙ্গবন্ধুৃ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলাটা আটকে আছে দেশের পরিস্থিতির কারনে। একইভাবে পটিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলাতে সবধরণের আয়োজন বন্ধ রয়েছে। পত্রিকার পাতা উল্টোলেই দেখা যেত গ্রামগঞ্জের খেলার খবর। কিন্তু সবই এখন বন্ধ রয়েছে ঐ করোনা’র কারণে। কক্সবাজারে ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট মাঠে গড়াচ্ছে না। ৪ বছর পর আসা নতুন কমিটি এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল একেবারে শেষ পর্যায়ে। রমজান মাসের আগে এ টুর্নামেন্ট করে ঈদের পর লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা নতুন কমিটির ছিল। বান্দরবানেও এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরুর পরিকল্পনা ছিল। এছাড়া ঢাকা থেকে একটি ক্লাবের গত ২০ মার্চ বান্দরবানে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ খেলার কথা ছিল। উল্লেখ্য চট্টগ্রামে গত ৪ মার্চ’২০ থেকে প্রথম বিভাগ এবং ৮ মার্চ থেকে প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লিগের খেলা মাঠে গড়িয়েছে। কিন্তু ১৬ মার্চ পর্যন্ত খেলা হওয়ার পর আপাতত খেলা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে ঐ ভাইরাসের কারণে। তার মানে এই নয় যে, ১ এপ্রিল থেকেই খেলাগুলো বডিলি শিফট হয়ে ফের শুরু হয়ে যাবে। দেশের পরিস্থিতির স্বাভাবিক হয়ে না এলে কোনভাবেই খেলা মাঠে গড়াবে না। পরিস্থিতি যদি আরো ভয়াবহ আকারে রুপ নেয় তাহলে কোনভাবেই খেলা শুরু হবে না। এভাবে কোনভাবে আগামী মাসের শেষ দিকে পার হলে রোজার কারণে খেলা বন্ধ রাখতেই হবে। ২৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।  যদি তাই হয় রোজার পরই এ লিগ শুরু করতে হবে এবং ততেদিনে হয়তো পরিস্থিতি আয়ত্বে চলে আসবে। তখনো যদি অবস্থা অনুকুলে না আসে, তাহলে লিগ নিয়ে শংকা থেকেই যাবে। লিগ শুরু না হলে ক্লাবগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। কেননা দলগুলো চুক্তিমোতাবেক ফুটবলারদের কন্ট্রাক্টের অর্ধেকেরও বেশি টাকা ইতিমধ্যে পেমেন্ট করে দিয়েছে। এদিকে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগের ১০টি দলের মধ্যেকার লড়াইয়ে প্রায় প্রত্যেকটি দলের ৪/৫টি করে খেলা সম্পন্ন হয়েছে। আর ১৫দিনের মতো সময় পেলেই এ লিগ শেষ করা সম্ভব হবে। কিন্তু ৮ মার্চ প্রিমিয়ার লিগের খেলা শুরু হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ২টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

উদ্বোধনী ম্যাচে কাস্টমস স্পোর্টস ক্লাব ৩-২  গোলে নবাগত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ দলকে হারায় এবং অপর এক ম্যাচে ১০ মার্চ সিটি কর্পোরেশন একাদশ ২-০ গোলে বিসিআইসি ক্রীড়া সংসদকে পরাজিত করে। এতে প্রথম বিভাগে এক একটি দলের ৪/৫টি করে খেলা শেষ হলেও প্রিমিয়ার লিগে মাত্র ২টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফুটবলের ইতিহাসে এহেন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। ৮ মার্চ এ প্রিমিয়ার শুরু হলেও ১৬ মার্চ পর্যন্ত মাত্র অবিশ্বাস্যভাবে  মাত্র ২টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিলো, এতে একদিন প্রিমিয়ার, আরেকদিন প্রথম বিভাগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে।

কেন জানি প্রিমিয়ারের খেলা বন্ধ রয়েছে, তা কারো বোধগম্য নহে। এর উত্তরও কারো জানা নয়। এর পেছনে বেশ বড় একটা শক্তি হয়তো কাজ করছে। জানা যায়, ঐ শক্তি প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ রাখার পায়তারা পর্যন্ত করেছিলো। শেষ পর্যন্ত কোনভাবে লিগ মাঠে গড়ালেও ৮দিনে মাত্র ২টি খেলার পর প্রিমিয়ারের খেলা বন্ধ রয়েছে। এটাও চট্টগ্রাম লিগের জন্য অভুতপূর্ব একটা ঘটনা।

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট