চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

‘ভিআইপি মোবাইল চোরের’ অবাক করা সাম্রাজ্য
‘ভিআইপি মোবাইল চোরের’ অবাক করা সাম্রাজ্য

‘ভিআইপি মোবাইল চোরের’ অবাক করা সাম্রাজ্য

আরফাতুল মজিদ,কক্সবাজার

২১ মার্চ, ২০২০ | ২:২৫ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শপিংমহলে মোবাইল চুরির ভিডিও ভাইরালের পর আলোচনায় আসে কক্সবাজারের মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৭) নামে একব্যক্তি। তার রয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেটও। দীর্ঘ পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে মোবাইল চোরে জড়িত থাকলেও অধরা রয়ে যায় জাহাঙ্গীর। ইতিমধ্যে ‘ভিআইপি মোবাইল চোর’ হিসেবে পরিচিত সে। তার আলিশান সাম্রাজ্য  দেখে রীতিমত অবাক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।  তার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে আসে মামলার নথিও। জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুটি পৃথক মামলা রয়েছে। একটি অস্ত্র মামলা, অপরটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা। মামলা মাথায় নিয়ে পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে জাহাঙ্গীর। সে কক্সবাজার ঝিলংজা ইউনিয়নের পিএমখালী মাছুয়াখালী ৫নং ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকার আমান উল্লাহর ছেলে। মোবাইল চুরি ছাড়াও তার ব্যাপারে ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই ইয়াবা নিয়ে। যেকোনো সময় ভিআইপি এই মোবাইল চোরকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানালেন কক্সবাজার সদর থানার অপারেশন অফিসার মাসুম খাঁন।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরে বসবাস করলেও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শপিংমহলে মোবাইল চুরি করে বেড়ায় জাহাঙ্গীর। কক্সবাজারে তার বাসা হলেও মোবাইল চুরি করে কক্সবাজার জেলার বাইরে। নির্দিষ্ট অভিযোগ বা সঠিক নজরদারি না থাকায় আইনের আওতায়ও আসছে না সে। বরাবরের মতো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দেশের বিভিন্ন স্থানে শপিং মল থেকে মোবাইল চুরির ভিডিওতে সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে জাহাঙ্গীরকেও শনাক্ত করা হয়েছে।

সরেজমিনে জাহাঙ্গীরের এলাকায় গেলে দেখা মেলে তার ভিআইপি সাম্রাজ্য। গত দুই বছরের ব্যবধানে এই আলিশান ভবনের মালিক সে। তবে তার কর্ম কি এলাকার কেউ অবগত নন। কিন্তু এলাকার অনেকেই জানেন জাহাঙ্গীর প্রায় সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম থাকে। কাজ কি কেউ জানে না। তার এতো বড় সাম্রাজ্যে থাকেন জাহাঙ্গীরের মা ও বউ। আর কেউ থাকেন না। জাহাঙ্গীর প্রতিমাসে দুই থেকে তিনবার বাড়িতে আসে। জনশ্রুতি রয়েছে সে বিয়ে করে টেকনাফের একটি ইয়াবা পরিবার থেকে। টেকনাফ থেকে বিয়ে করার পর দিন বদলে যায় তার।

শুক্রবার (গতকাল) সকালে সরেজমিনে পিএমখালী গেলেই নয়াপাড়া এলাকায় জাহাঙ্গীরের ভিআইপি সাম্রাজ্য  চোখে পড়ে। ওই এলাকায় এতো বড় ভবন আর নেই। বাড়িতে তার মা ও বউ রয়েছে। তারাও কেউ কথা বলতে চান না। এক ধরনের আতঙ্ক তাদের মধ্যে বিরাজ করছে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ পাড়ি দিতে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে যাচ্ছে জাহাঙ্গীর। কিছু দিন আগে পাসপোর্ট অফিসে আবেদনও করে পাসপোর্টের জন্য। একজন চিহ্নিত মোবাইল চোর ও মামলার আসামি হওয়ায় পাসপোর্টের আবেদনটি নজরে আসে একটি গোয়েন্দা সংস্থার। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মো. জাহাঙ্গীর আলম একসময় মোবাইল চোরে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলে, আমি এখন কোনো অপরাধে নেই। কাঠের ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছি। ইয়াবার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে নিউজ না করতে অনুরোধ করে সে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অপারেশন অফিসার মাসুম খাঁন বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলা রয়েছে। এছাড়া মোবাইল চোরেও জড়িত সে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে পলাতক রয়েছে। যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর ইয়াবা কারবারে জড়িত রয়েছে বলেও শুনা যাচ্ছে। তবে অভিযোগ নেই ইয়াবা নিয়ে। তাছাড়া তার আলিশান ভবন অবাক করার মতো। দৃশ্যমান কোনো আয় নেই, কিন্তু অনেক কিছুর মালিক সে। তার বিষয়ে আমরা ব্যাপক অনুসন্ধান চালাচ্ছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট