চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা সামাল দিতে নামছে চসিক

একগুচ্ছ কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ মার্চ, ২০২০ | ২:২৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। গতকাল বুধবার সকালে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এসবের মধ্যে প্রতি ওয়ার্ডে মেডিকেল টিমের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন কাজ করবে বলে জানানো হয়। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইন তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগ। এর বাইরে আজ বৃহস্পতিবার থেকে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে জন সাধারণের মাঝে করোনা সম্পর্কে সচেতন করতে এক লাখ লিফলেট বিতরণ করা হবে।
সভায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেয়রের নেতৃত্বে গঠন করা হয় দশ সদস্যের সমন্বয় কমিটি। এছাড়া ৪১টি ওয়ার্ডে পৃথকভাবে সাব কমিটিও থাকবে বলে জানান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে মেডিকেল টিম কাজ করবে। এর বাইরে মোবাইল টিমও সেবা প্রদান করবে। সার্বক্ষণিক একটি এম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে। যে স্থানেই হোক, মোবাইলটিম গিয়ে সেখানেই সেবা পৌঁছে দিবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় এ করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।’
অন্যদিকে, সিটি কর্পোরেশনের বাইরে জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো কোন সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য বলেন সভায় উপস্থিত হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবীর।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইতোপূর্বে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালে পৃথক শয্যার প্রস্তুত করা হয়। বর্তমান মৌসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জ্বর, সর্দি কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসটিও একই রকম হয়। তবে এ জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে খোলা হয়েছে প্রাথমিক পরীক্ষা কেন্দ্র। যেখানে পরিস্থিতির আলোকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে।’
এছাড়া বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে (কখন আসছেন, কোথায় ছিলেন) তাদের ইতিহাস লিখে নন-ক্রিটিক্যাল হলে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এবং তাদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্মর সংরক্ষণ রাখা হবে। এদত বিষয়ে ওয়ার্ডের মেডিকেল অফিসার কমিটির সদস্য সচিবকে অবহিত করবেন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম প্রস্তুত রয়েছে। এলক্ষে ফৌজদারহাট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও রেলওয়ে হাসপাতাল এবং প্রয়োজনে বন্দর হাসপাতালকে নির্ধারণ করেছে আজকের এ সভা থেকে। এই লক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃবিভাগকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা আলাদা রুম রাখা হয়েছে। সিটি মেয়র তার বক্তব্যে বলেন নগরীর ৪টি হাসপাতালে করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হবে। নগরবাসীকে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন সিটি মেয়র।
এদিকে, নগরবাসরীকে আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হওয়ার তাগিদ দেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে হোম কোয়ারেন্টাইনের গুরুত্ব তুলে ধরে এর ব্যত্যয় ঘটালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য দপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘যারা আগ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন, তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। একই সাথে ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থেকে সকল নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবাধে চলাফেরা করেন, তাহলে ম্যজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, আরও ৬০ জন বিদেশফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, ‘এই ৬০ জনসহ এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৯১ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে চট্টগ্রামে আসেন এ ৬০ বাংলাদেশি। এরমধ্যে ৫৬ জন সৌদি আরবে ওমরা পালন শেষে চট্টগ্রামে আসেন। বাকিরা অন্য দেশ থেকে দেশে ফেরেন। যাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সকলের নাম-ঠিকানা স্বাস্থ্য বিভাগ সংগ্রহে রেখেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট