চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লোকালে ঠেলাঠেলি, যাত্রীশূন্য দূরপাল্লা
লোকালে ঠেলাঠেলি, যাত্রীশূন্য দূরপাল্লা

করোনাভাইরাস

লোকালে ঠেলাঠেলি, যাত্রীশূন্য দূরপাল্লা

গণপরিবহনের বিকল্প কি? প্রশ্ন জনসাধারণের ,অন্য যাত্রীর স্পর্শ থেকে দূরে থাকুন: জেলা প্রশাসক, গণপরিবহন ব্যবহার কমিয়ে দিন: ট্রাফিক বিভাগ

আল-আমিন সিকদার

১৯ মার্চ, ২০২০ | ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়ার পর থেকেই গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। রোগটি ছোঁয়াছে এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুবরণ করেছে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে বলা হলেও চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নগরীর অভ্যন্তরীণ রুটে চলমান গণপরিবহণগুলোতে যাত্রীদের যাতায়াত ছিল আগের মতই স্বাভাবিক। বাসের জন্য লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। তবে এর ঠিক উল্টো চিত্র ছিল দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলোতে। করোনার প্রভাবে অনেকটা যাত্রীশূন্য ছিল কাউন্টারগুলো। সিট অনুপাতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়েছে বাসগুলো। এমনকি যাত্রী সংকটে শিডিউল পরিবর্তন করে বাস ছাড়ার কথাও জানিয়েছে কাউন্টারগুলো। নগরীর ইপিজেড মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, গণপরিবহনে উঠতে লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। বাস আসতেই হুমড়ি খেয়ে উঠছেন তাতে। এ মোড় ছেড়ে চলে যাওয়া ও অপেক্ষমান প্রতিটি বাসেই ছিল যাত্রীদের ভিড়। গণপরিবহন এড়িয়ে যেতে বলা হলেও কেন ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে রাজু নামে এক পোশাক শ্রমিক বলেন, ‘নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে ইপিজেড। প্রতিদিন এই ১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমি বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাসায় যাতায়াত করি। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। এই বেতনে বাসে যাওয়া-আসা না করে কি সিএনজি নিয়ে যেতে পারবো? গণপরিবহনে ওঠা বন্ধ করতে হলে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ ঘোষণা দিতে হবে। সাথে কারখানাগুলোও। অন্যথায় কাজের সুবাদে সবাইকে ঘর থেকে বের হতে হবে এবং গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। কারণ এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা সরকার এখনো নেয়নি। এতে করে করোনাভাইরাস আরও মহামারী আকার ধারণ করবে’। এদিকে করোনাভাইরাসে প্রথম বাংলাদেশি মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে যাত্রীশূন্য হয়ে পড়েছে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো। নগরীর দামপাড়া বাস স্ট্যান্ডে বেশ কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র। দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর কাউন্টার ইনচার্জরা জানান, গতকাল বুধবার দুপুর থেকে ধীরে ধীরে যাত্রী শূন্য হয়ে পড়েন তারা। সৌদিয়া বাস কাউন্টারের ইনচার্জ জুয়েল দাশ গুপ্ত বলেন, ‘কিছু দিন আগেও ৩৬ সিটের ননএসি গাড়িগুলোতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ যাত্রী ছিল কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন তা কমে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশে চলে আসছে। খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া গাড়িটিতে যাত্রী ছিল ১৫ জন। সাতক্ষীরার গাড়িতে ১৮ জন, সিলেটের গাড়িতে ২০ জন ও বেনাপোলের গাড়িতে যাত্রী ছিল ১৪ জন। ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ননএসি গাড়িগুলোতে যাত্রী ছিল ১০ থেকে ১২ জন করে। ৪০ সিটের এসি গাড়িটিও ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়েছে মাত্র ১৮ জন যাত্রী নিয়ে’।
শ্যামলী গাড়ির কাউন্টার স্টাফ মো. জাহেদ জানান, ‘সকালে যাত্রী মোটামুটি থাকলেও বিকেলের পর থেকে যাত্রী কমতে শুরু করেছে। আজ রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে যে ননএসি ৫টি গাড়ি আছে সেখানে সিট বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচটি। একটি গাড়িতে অন্তত ১৫ জন যাত্রী না হলে ছাড়া হয় না। আমার মনে হচ্ছে যাত্রী কমে যাওয়ায় যাত্রার সময় পরিবর্তন করতে হবে এবং তিন-চারটি গাড়ির যাত্রীকে একটি গাড়িতে আনতে হবে’।
এদিকে শুধু মাত্র ব্র্যান্ডের খ্যাতির কথা চিন্তা করে গাড়ি বন্ধ করা হচ্ছে না বলে জানান গ্রীন লাইন (এসি) বাস কাউন্টারের ম্যানেজার (চট্টগ্রাম) পিংকু বড়–য়া। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘গ্রীন লাইনের নতুন সার্ভিস ডাবল ডেকার এসি বাসটিতে উপর-নিচে মিলিয়ে সর্বমোট ৩৭টি সিট। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টা ৫মিনিটে যে বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে সেটিতে যাত্রী ছিল ১০ জন। এই বাসটি ঢাকা পর্যন্ত যেতে কোম্পানির খরচ পড়বে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। অথচ ১০ জন যাত্রী বাবদ কোম্পানি পেয়েছে ১২ হাজার টাকা। কাল থেকে যাত্রী আরও কমবে বলে ধারণা করছি। প্রতিদিন ১৩টি পৃথক পৃথক সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আমাদের গাড়ি চললেও সামনে কমিয়ে দিতে হতে পারে’। শুধুমাত্র ব্র্যান্ডের খ্যাতির কথা চিন্তা করে গাড়ি বন্ধ করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে জনসাধারণের জন্য কোন উদ্যোগ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘যাত্রীদের যথাসম্ভব গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে। মুখে মাস্ক ও সাথে স্যানিটাইজার রাখতে হবে। গণপরিবহনে ওঠার পর থেকে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ রাখার পাশাপাশি অন্য যাত্রীকে স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে’।
অন্যদিকে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি গণপরিবহন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোস্তাক আহমেদ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট