চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

একমাত্র আয়ের উৎস নিয়ে গেল হাইওয়ে পুলিশ

সীতাকুণ্ডে অভাবের তাড়নায় অটোরিকশা চালকের আত্মহত্যা

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুণ্ড

১৮ মার্চ, ২০২০ | ২:৫১ পূর্বাহ্ণ

শামীমের একমাত্র উৎস্য অটোরিকশাটি হাইওয়ে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে তিন দিন আগে। সেই থেকে অভাবের তাড়নায় পরিবারের খরচ যোগাতে পারছিলেন তিনি। এ নিয়ে সংসারে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয়। গতকালও চাল, ডালসহ বিভিন্ন জিনিস কিনে আনতে বলেন তার স্ত্রী। এতে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে স্ত্রীকে মারধর করে শেষে নিজেও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার ভাটিয়ারীর পূর্ব হাসনাবাদ গ্রামে। রিকমশা চালক শামীম নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়া এলাকার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। তবে নদী ভাঙনে তার বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ায় তিনি সীতাকু-ের ভাটিয়ারীর হাসনাবাদ গ্রামের পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শামীম অতি দরিদ্র একজন মানুষ। তার একটি অটোরিকশা রয়েছে। এই অটোরিকশা চালিয়েই স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসার চালাতেন। গত শনিবারও শামীম নিজের অটোরিক্সা নিয়ে রাস্তায় নামেন। তিনি ভাটিয়ারী স্টেশন সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান করায় মহাসড়কে তিন চাকার যান নিষেধ আছে জানিয়ে বারআউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ তার অটোরিক্সাটি থানায় নিয়ে যায়। এতে তার উপার্জনও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, সবজিও কিনতে পারছিলেন না। এতে স্ত্রীর সাথে তার ঝগড়া হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও তার স্ত্রী বাজার আনতে বলায় অশান্তি শুরু হয়। বাজার করতে না পেরে দুপুরে বাড়ি ফিরে হতাশায় তিনি ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন। শেষে বিকালের দিকে নিজের ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। নিহত শামীমের স্ত্রী রুমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের উপার্জনের একমাত্র উৎস্য হলো ওই অটোরিকশাটি। শনিবার এটি হাইওয়ে পুলিশ নিয়ে যাবার পর আমার স্বামী মারাত্মক টেনশনে পড়ে যান। তার হাতে টাকা না থাকায় হতাশায় সবার সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দেন। এভাবে গত কয়েকদিনে তিনি অটোরিকশাটি না পেয়ে বাজার-সদাই করতে পারেননি। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি ফিরে হতাশা থেকে আমার ছেলে-মেয়ে ও আমাকে মারধর করে ঘরে ঢুকে যান। পরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। একই অভিযোগ করে ৮বছর বয়সী ছেলে তুহিনও।
এদিকে আত্মহত্যার খবর পেয়ে এদিন বিকালে সীতাকু- থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকু- থানার ওসি মোঃ ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, নিহত শামীমের পরিবার আপনাদেরকে যা বলেছেন আমাদেরকে তাই বলেছে। তাদের একমাত্র অটোরিকশাটি নিয়ে যাওয়ায় উপার্জন বন্ধ হয়ে অভাবের তাড়নায় রিকশাচালক শামীম আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী করেছেন তার স্ত্রী-সন্তানরা। আমরা লাশ উদ্ধার করে পোষ্টমর্টেমের জন্য প্রেরণ করেছি।
এদিকে রিক্সাচালক শামীমের অটোরিক্সা আটকের বিষয়ে বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. আবদুল আওয়াল বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষেধ। তাই আমাদের কর্তব্যরত অফিসার সেটি পেয়ে আটক করে নিয়ে আসে। কিন্তু তাই বলে এই আত্মহত্যার সাথে গাড়ি আটকের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। আমাদের ধারণা আত্মহত্যার অন্য কোন কারণ আছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট