চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আবারো বাড়ল চালের দাম
আবারো বাড়ল চালের দাম

আবারো বাড়ল চালের দাম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৭ মার্চ, ২০২০ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

গত নভেম্বর মাসে বেড়েছিল চালের দাম। বস্তাপ্রতি ২শ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছিল সেসময়ে। গত রবিবার থেকে হঠাৎ করে অহেতুক আবারো চালের দাম বস্তাপ্রতি চারশত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের ঘাটতি না থাকার পরও মিলাররা সিন্ডিকেট করে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। লাগাম টেনে ধরতে বাজারে নজরদাবি বাড়ানো ও ওএমএস কর্মসূচি চালুর দাবি করেছেন ভোক্তারা।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি জাফর আলম বলেন, কৃত্রিম সংকট করে মিল মালিকেরা দাম অহেতুক বাড়িয়েছে। সরকারের নজরদারি বাড়ানো এবং ওএমএস কর্মসূচি চালু করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দিনের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চারশ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে মিলমালিকেরা। ব্যবসায়ীরা জানায়, ইরি-বোরো ধান বাজারে আসতে আরও দেড় থেকে দুই মাস বাকি। এই সুযোগে মিল মালিকেরা ধানের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। অথচ মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের গুদামে গুদামে প্রচুর পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে।
১০ লাখ মে. টন চালের মজুদকে নিরাপদ মজুদ ধরা হয়। বর্তমানে সরকারি গুদামে মজুদ রয়েছে তারও বেশি চাল।বেসরকারি গুদামে মজুত রয়েছে অন্তত ৩০ লাখ মে. টন। ব্যবসায়ীদের হাতেও প্রচুর চাল আছে। দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও দুই দিন ধরে বাড়ছে চালের দাম। অকারণে বস্তাপ্রতি চারশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী চাল মোকামের ব্যবসায়ীরা জানায়, মিল মালিক ও আমদানিকারক সি-িকেট কারসাজি করে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছে। উত্তরবঙ্গের চাতাল ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের মিল মালিকেরা যৌথ সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে।
চট্টগ্রামের চালের পাইকারি মোকামে দেখা যায়, মোটা আতপ চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫শ টাকা দরে। গত নভেম্বর তা ৯শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি ১২-১৩ শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বেতি আতপ (আশুগঞ্জ আতপ) বিক্রি হচ্ছে ২২শ টাকা দরে। নভেম্বরে তা ১৭শ টাকা থেকে বেড়ে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মিনিকেট ১৭-১৮ শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২শ টাকায়। নভেম্বরে তা ১৭শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কাটারি আতপ ২৪শ টাকা থেকে বেড়ে ২৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধা (মোটা) ১৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে তা ১১শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। নভেম্বর-ডিসেম্বরে তা ৯শ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। স্বর্ণা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকায়। গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছিল ১৬শ টাকায়। আর নভেম্বরে ছিল ১৪শ টাকা। জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ২৫শ টাকায়। সপ্তাহে তা ছিল ২১শ টাকা। নভেম্বরে ছিল ১৯৮০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ ১৬শ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। নভেম্বরের ছিল ১৪শ টাকা।
একাধিক সূত্র জানায়, চাক্তাই এলাকায় ৫টি বড় মিল মালিকের রয়েছে একাধিক গুদাম। তাদের গুদামে প্রচুর পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। ওই ব্যবসায়ী এখন চাল সংকটের অজুহাতে বাজার অস্থির করে তুলছে। একইভাবে পাহাড়তলী বাজারে রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। অন্তত ১৫ মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও আড়তদারের হাতে জিম্মি চট্টগ্রামের চালের বাজার। এসব গুদামে প্রচুর চাল মজুদ থাকার পরও অকারণে বেড়েছে চালের দাম।
একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট অকারণে চালের দাম বাড়াচ্ছে। উত্তরবঙ্গের চাল মিল মালিকের সঙ্গে চাক্তাই এলাকার কয়েকজন বড় মিল মালিক একই সঙ্গে বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা করছে।
গত নভেম্বর মাসে সরকার ধান ও চাল সংগ্রহ কর্মসূচিকে ঘিরে চালের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সরকার কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছে ২৬ টাকা দরে। আর মিল মালিকের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা ও আতপ চাল কিনছে ৩৫ টাকা দরে। সরকারি কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে কৃত্রিম সংকটের অজুহাতে অহেতুকভাবে চালের দাম বাড়ানো হয়।
পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, চাল মিল মালিকের কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। মিল মালিকেরা প্রতিকেজি চালে ৭-৮ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট