চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সরে দাঁড়াচ্ছেন কিছু বিদ্রোহী
সরে দাঁড়াচ্ছেন কিছু বিদ্রোহী

চসিক নির্বাচন

বাড়ছে আচরণবিধি লঙ্ঘন

২৫ অভিযোগ, সংঘাতের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ভোটারদের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৪ মার্চ, ২০২০ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর বাড়ছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে ২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে নিদের্শনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। অভিযোগের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি নির্বাচন বিশ্লেষকদের।
এদিকে, রামপুরা, সরাইপাড়া, পতেঙ্গা ও পাঠানটুলী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচারণায় মোটর শোভাযাত্রা, শোডাউন, পথসভা ও উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছে শব্দযন্ত্র। বিভিন্ন ওয়ার্ডে সড়কের ধারে স্থাপন করা হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্প। প্রচারণার শুরুতেই বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘দেখাদেখিতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। তা নিবৃত্ত করতে না পারলে নির্বাচন কমিশন বদনামের ভাগিদার হবে।’ চট্টগ্রামে লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো বন্ধ করায় নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন ঢাকার মুখাপেক্ষী। নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম ও নির্দেশনা ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে কিছু করতে না পারলেও ঢাকায় নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে পারেন। কারণ তার দায়-দায়িত্ব সবকিছু কমিশনকে নিতে হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, আরাকান সড়কের বাহির সিগনাল ও মৌলভী পুকুর পাড় এলাকায় রাস্তার ধারে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বাহির সিগনাল এলাকার ক্যাম্প হচ্ছে মূল সড়কের ধারে। এরপাশে রয়েছে একটি ফিলিং স্টেশন ও সড়কের পাশে দোকানপাট। নির্বাচনী কার্যক্রম অনেকটা মূল সড়কে ওঠে আসে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১৬ এর ‘ঘ’ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না। এছাড়াও প্রতিদিন প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অহরহ অভিযোগ রয়েছে।
সংঘাত-সংঘর্ষ : প্রচারণার পর থেকে সরাইপাড়া, রামপুরা, মোগলটুলি, পতেঙ্গা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনায় আহত হন দলীয় নেতাকর্মীরা। ঘটেছে ভাঙচুরের ঘটনাও। এসব ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাড়ছে আতঙ্ক।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে ২৮ নম্বর মোগলটুলি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর উপস্থিতিতে নৌকার প্রচারণার সময় এই ঘটনা ঘটে।
গত ১২ মার্চ মাঝরাতে রামপুরা ওয়ার্ডে বুড়িপুকুর এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুস সবুর লিটন ও বিদ্রোহী প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অন্তত ৮ জন।
৩ মার্চ উত্তর পতেঙ্গায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের গণসংযোগকালে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছিলেন।
প্রচারণায় শোডাউন : প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জোরেসোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণায় জনসমর্থন ও শক্তি প্রদর্শনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রার্থী। করছেন শোডাউন ও পথসভা।
আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনো ধরনের মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশকে জানাতে হবে।
ইসিতে অভিযোগ : চট্টগ্রামের তিন মন্ত্রী, মেয়র ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলটির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের সমর্থনে গঠিত নাগরিক ঐক্য পরিষদের পক্ষে পরিষদের সদস্য সচিব নছরুল কদির এই অভিযোগ করেন। অভিযোগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ও সার্কিট হাউস ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এ বিষয়ে বলেছেন, ‘অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।’
২১নং জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবু মো. মহসীন চৌধুরী ইসিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন স্থান থেকে তার পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। তার কর্মী-সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সলিম উল্লাহ অভিযোগ করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল মালেকের পরিবারের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন। এছাড়াও মালেকের লোকজন তার স্বজনদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন।
১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের প্রার্থী চৌধুরী সাইফুদ্দিন রাশেদ সিদ্দিকী অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ট্রাকে মাইক বেধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ১৯ ও ৩৫ নং ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নগরীর সকল থানার অফিসার ইনচার্জদের কাছে নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে পোস্টারে দল মনোনীত প্রার্থী লিখায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন প্রার্থীকে।
ম্যাজিস্ট্রেট : নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের ১৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থান থেকে সাঁটানো পোস্টার, ব্যানার অপরসারণ করা হয়েছে। তারপরও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছেই।
নির্বাচনী আইনে উল্লেখ রয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ- দেওয়ার বিধান আছে। এমনকি প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও দেওয়া আছে।
সুজনের সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসিকে আরও সজাগ থাকতে হবে। সরকার ঘর সামলাতে না পারলে পরকে কীভাবে সামলাবে। সরকারি দলের প্রার্থীদের সংযত হয়ে চলতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট