চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা প্রতিরোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি
করোনা প্রতিরোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি

‘করোনা ভাইরাস’ আতংক

করোনা প্রতিরোধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ

১৩ মার্চ, ২০২০ | ২:০৫ পূর্বাহ্ণ

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টেকনাফ স্থলবন্দর, করিডোর ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত আইএনজিও ও এনজিওসমূহের সহায়তায় করোনা ভাইরাস বিষয়ে সব ধরনের প্রাক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সিভিল সার্জন অফিসে জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দর ও শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে আসা মিয়ানমার নাগরিকদের আগে থেকেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। মেডিক্যাল টিম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস জীবাণু বহনকারী কোন রোগী শনাক্ত করতে পারেনি। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সীমান্ত থাকায় টেকনাফ স্থলবন্দরে ২টি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম নিয়মিত কাজ করছে। করোনা ভাইরাস জীবাণু শরীরে প্রবেশের ন্যূনতম ১৪ দিন পর সেটি সংক্রমিত হয়। ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস জীবাণু মরে যায়। বাংলাদেশের সার্বিক তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় এদেশের মানুষ করোনাভাইরাস জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। ২৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র পাঠানো হয়েছে জানিয়ে টেকনাফ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, ‘করোনা ভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধ নিয়ে আগে থেকেই জরুরি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস জীবাণু শনাক্তে স্থলবন্দর ও করিডোর এলাকায় গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিমকে সার্বক্ষণিক
কার্যকর রাখা হয়েছে। এই টিমে মেডিক্যাল অফিসার, উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, ব্রাদার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও দেয়া হয়েছে। কারও শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রু অবহিত করতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল ও ডাক্তারদের প্রস্তত রাখা হয়েছে’।
পর্যটন নগরী হিসেবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আসছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক। তারা বিচরণ করছে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। এদিকে চীনের সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত অঞ্চল। ওই সীমান্ত পথে চীনের পণ্য সরাসরি নিয়মিত আসছে মিয়ানমারে। মিয়ানমার থেকে ওইসব পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয়ে আসছে। সীমান্ত হয়ে চীনা পণ্য ও নাগরিকদের মিয়ানমারে আসতে খুব একটা বাধাও নেই। নেই কোন করোনা ভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধের ব্যবস্থা। আবার মিয়ানমারের পণ্যও চীনে যাচ্ছে অহরহ। আর চীন থেকে আসা এসব পণ্য মিয়ানমার হয়ে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে স্থলবন্দর, করিডোর ও সীমান্ত হয়ে। বিশেষ করে চীনের এসব পণ্য ট্রলারে করে আনছে মিয়ানমারের মাঝি মাল্লা ও সেখানকার নাগরিকরা। এ কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর ও শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে মিয়ানমার থেকে আসা পণ্য ও পশু বোঝাই জাহাজ, ট্রলারের মাঝি মাল্লা, মিয়ানমারের নাগরিকদের যাতায়াতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ বিষয়ে পত্র পাবার পর এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিন পর্যটক ভ্রমণে আসছে। এছাড়া এখানে চলমান মেগা প্রকল্পে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অসংখ্য বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। এ জন্য পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলা করোনা ভাইরাসের জন্য অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৩ জন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে মানুষের মনে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এখানে আগত পর্যটকদের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে কক্সবাজার বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। মেডিক্যাল বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও ৫টি ইনফ্রারেড থার্মাল ইনস্ট্রমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়।
উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত আইএনজিও ও এনজিওসমূহের সহায়তায় করোনা ভাইরাস বিষয়ে সব ধরনের প্রাক প্রস্ততি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সিভিল সার্জন অফিসে জরুরি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। করোনা ভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট