চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পটিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল, নারী সংগঠনের বিবৃতি

পিটিআই মহিলা হোস্টেলে এবার রাতে হামলা ভাংচুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া

১২ মার্চ, ২০২০ | ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠা পটিয়া প্রাইমারি ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) চার প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলকালীন সময়ে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে মহিলা হোস্টেলে পাথর ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ করেছে আন্দোলনরত প্রশিক্ষণার্থীরা। হোস্টেলে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপত্তা চেয়ে পটিয়া পিটিআইয়ের সুপারিন্টেডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) তপন কুমার দাশ পটিয়া থানায় লিখিতভাবে অবহিত করেন। পরে পটিয়া থানার এসআই খালেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত প্রশিক্ষণার্থীদের শান্ত করেন। এ ঘটনায় পিট্আিইয়ের নৈশ প্রহরী ও বাবুর্চিসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। তারা হলেন, বশির, আলম, রুস্তম ও মুহাম্মদ মামুন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রোকেয়া হলের তিন নারী প্রশিক্ষণার্থী নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে জানান, ‘তিনজন লোক রাত আনুমানিক ১২টার দিকে দিকে প্রীতিলতা হোস্টেলের সামনে আসে। তারা রোকেয়া হলের জানালা ভাঙচুর করে ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে দেওয়াল টপকে চলে যায়। এসময় তারা চিৎকার করে বলতে থাকে হোস্টেল ভেঙে ফেল। ওদের হাতে লাঠি ছিল। পরে আমরা আমাদের পুরুষ সহকর্মীদের মুঠোফোনে অবগত করি। ’ এ ব্যাপারে পটিয়া পিটিআই’র সুপারিন্টেডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) তপন কুমার দাশ জানান, ‘এক নারী প্রশিক্ষণার্থী আমাকে রাত ১টায় মোবাইলে কল দিয়ে জানান। আমি রাত গভীর হওয়ায় প্রশাসন কিংবা থানাকে অবগত করি নাই। তবে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানাই এবং থানাকে লিখিতভাবে অবগত করি।’
পটিয়া থানার এস আই খালেদ জানান, ‘আমরা পিটিআই সুপারিন্টেডেন্টের লিখিতভাবে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে আন্দোলনরত প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে কথা বলি। পিটিআইয়ের নৈশ প্রহরী ও বাবুর্চিসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদশেষে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তারা ঘটনা সম্পর্কে জানে না বলে জানান।’
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের বিবৃতি:
পিটিআইয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের আজীবন বহিষ্কার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। সংগঠনটির চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আসমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক ডা. রতœা বৈষ্ণব তনু এক যুক্ত বিবৃতিতে পটিয়া প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষক কর্তৃক প্রশিক্ষণার্থীদের যৌন হয়রানির ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্ত প্রশিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসাবে কর্মক্ষেত্র থেকে আজীবন বহিষ্কার দাবি করেন।
উল্লেখ্য, প্রশিক্ষক দেবব্রত বড়–য়া যৌন হয়রানির অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সোশাল মিড়িয়াতে খোলা চিঠি পাঠিয়ে আত্মহননের চেষ্টার ঘটনার মধ্য দিয়ে এই বিষয় সকলের সামনে আসে। কমপক্ষে ৫০ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক দুই (২) বছর যাবৎ ৪ জন প্রশিক্ষক দ্বারা নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে, নম্বার দেয়ার কথা বলে, বিয়ের কথা বলে, চাকুরি রক্ষার কথা বলে শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আসছে।
প্রশিক্ষণার্থীদের টানা দুইদিনের আন্দোলনের মুখে গত রবিবার অভিযোগ আসা চার শিক্ষককে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। প্রত্যাহার হওয়া চার প্রশিক্ষকরা হলেন, তারা হলেন- ফারুক হোসেন (শারীরিক শিক্ষা), জসিম উদ্দীন (সাধারণ), রবিউল ইসলাম (আইসিটি) এবং সবুজ কান্তি আচার্য্য (চারু ও কারুকলা)। গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুইদিন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদন্ত দলের প্রধান ও অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান ছিদ্দিক পটিয়া প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআ্ই)’তে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষক, স্থানীয় ও প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে কথা বলে জাবানবন্দি গ্রহণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন পটিয়ার ইউএনও ফারহানা জাহান উপমা, পটিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইনামুল হাসান। পিটিআইতে নিয়োপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের দেড় বছরের প্রশিক্ষণ হয়। এরমধ্যে এক বছর পিট্আিইতে থাকেন তারা। সেখানে আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। আর ছয় মাস বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠদান করে থাকেন। পটিয়ার পিট্আিইতে বর্তমানে ২৮০ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে। প্রশিক্ষকক রয়েছেন ৯ জন। আবাসিক ব্যবস্থায় মহিলাদের জন্য রয়েছে প্রীতিলতা ও রোকেয়া নামের দুইটি হোস্টেল আর পুরুষদের জন্য রয়েছে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ নামের একটি হোস্টেল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট