চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইতালিফেরত শিক্ষক নিয়ে চবিজুড়ে আতঙ্ক

চবি সংবাদদাতা

১০ মার্চ, ২০২০ | ৭:০৭ অপরাহ্ণ

কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষককে ইতালি থেকে পিএইচডি অর্জন শেষে বিভাগের যোগদানের সুযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় ওই চবি শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেননি আমাদের প্রতিবেদক।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইতালিফেরত ওই শিক্ষক বলেন, আমি যে এলাকায় ছিলাম, ওটা কোয়ান্টামযুক্ত ও করোনাভাইরাসমুক্ত ছিল। এছাড়া এ ভাইরাসের সংক্রমণ কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় আমি কোনো ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করেনি।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসার সময় বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় ফরমও পূরণ করেছি। গত ৮ তারিখ বিভাগে যোগদানের পর রাতে বিভাগের সভাপতি আমাকে আপাতত বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই বর্তমান আমি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছি।
জানা গেছে, পাঁচ বছর ধরে ওই শিক্ষক ইতালিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। গত ৫ মার্চ তিনি দেশে ফিরেন। এরপর থেকেই তিনি ক্যাম্পাসে অবস্থান শুরু করেন। গত ৮ মার্চ বিভাগের সভাপতি বরাবর যোগদান পত্র জমা দেন। বিভাগীয় সভাপতি সুমন গাঙ্গুলি এই যোগদানপত্র রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করেন। কিন্তু ইতালিফেরত এই শিক্ষকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই যোগদানের সুযোগ করে দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান অনুষদজুড়ে শুরু হয় আতঙ্ক।
 
বিজ্ঞান অনুষদের কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী জানান, ওই শিক্ষক কয়েকদিন ধরে রসায়ন বিভাগ, পদার্থ বিভাগ, গণিত বিভাগসহ বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বেশ কিছু বিভাগের সেমিনারসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। তিনি বিমান বন্দরে কোন ধরণের স্বাস্থ্যপরীক্ষার সম্মুখীন হননি বলেও তার সহকর্মীদের জানিয়েছেন। এদিকে ওই শিক্ষকের যোগদানকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞান অনুষদের ল্যাব, সেমিনার ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
 
কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইতালিতে পাঁচ বছর থেকে বাংলাদেশে আসার সময় এই পরিস্থিতিতে ওনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি ছিল। কিন্তু কোন ধরণের পরীক্ষা ছাড়াই ওনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুরাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
 
ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমাদের সহকর্মী ইতালি থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে বিভাগে যোগদান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এ ধরণের পরিস্থিতিতে বিদেশ ফেরত শিক্ষক, গবেষকদের জন্য সরকারের বিশেষ নির্দেশনা থাকা জরুরি। কারণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন।
 
যোগদানের বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, উনি ৮ মার্চ বিভাগে যোগদান করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোন ছাড়পত্র বা কাগজপত্র যোগদান পত্রে সংযুক্ত ছিলনা। যদিও শিক্ষা ছুটি থেকে কোন শিক্ষক ফিরে এসে যোগদান করলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ছাড়পত্র লাগেনা। কিন্তু এ ধরণের বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে ছাড়পত্র নেয়ার ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু তৈয়ব বলেন, আমরা ইতালিফেরত শিক্ষকের যোগদানের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে আনি। ওই শিক্ষককে আমরা ১৫ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আমরা কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে শিক্ষক ও গবেষকরা যাওয়া আসা করছেন। তাদের নিয়ে কোন ধরণের সতর্কতামূলক উদ্যোগ এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন গ্রহন করেনি৷ এসব শিক্ষকরা সরাসরি সভা, সেমিনার, ক্লাস, পরীক্ষা, সিম্পোজিয়ামে অংশ নেয়। এই শিক্ষকদের খুব কাছাকাছি থেকেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসবে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের প্রধান বাহন শাটল ট্রেন রয়েছে সবচেয়ে ঝুঁকিতে। কারণ ছোঁয়াচে এই ভাইরাস আক্রান্তদের কাছ থেকে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়তে পারে সুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কারণ শাটল ট্রেনে গাদাগাদি করে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন যাতায়াত করে। ফলে তাদের অসতর্কতার কারণে একজন শিক্ষার্থীও যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে।
 
পূর্বকোণ/রায়হান-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট