চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গেটপাশে চাঁদাবাজি ৫০ লাখ!
গেটপাশে চাঁদাবাজি ৫০ লাখ!

গেটপাশে চাঁদাবাজি ৫০ লাখ!

নাজিম মুহাম্মদ

১০ মার্চ, ২০২০ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে শুধুমাত্র গেট পাশের আড়ালে মাসে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত ফি এর বাইরে পণ্য পরিবহনের কাজে বন্দরের অভ্যন্তরে আসা যাওয়া করতে গিয়ে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থেকে বছরের পর বছর এসব চাঁদা আদায় করছে গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা। এরবাইরেও লেবার বকশিসের নামে চাঁদা নেয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি।
তবে বন্দর নিরাপত্তা বিভাগ জানায়, বিষয়টি মিথ্যে তা ঠিক বলা যাচ্ছে না, আবার পুরোপুরি সত্য তাও বলা যাচ্ছে না।
আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮০ ভাগ পণ্য ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে পরিবহন করা হয়। কিন্তু বেসরকারি প্রাইভেট কন্টেইনার/অফডকগুলো থেকে পণ্য খালাস করতে গিয়ে পদে পদে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। গেট পাশ ও পার্কিং চার্জের নামে গাড়ি প্রতি ১৫০ টাকা ও লেবার বকশিসের নামে ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বন্দর ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে ইতিমধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু গেট পাশ ও লেবার বকশিসের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। মালামাল আনা নেয়ার কাজে প্রতিদিন অন্তত সাড়ে চার হাজারের অধিক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এসব যানবাহনকে গেট পার হতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়।
গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় বেশ কয়েকজন ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চালকরা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে গাড়ি প্রতি ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা ফি দিতে হয়। কিন্তু গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা সরকারি নির্ধারিত ফি নিয়ে গেট পাশ দিতে রাজী হয় না। প্রতি গাড়ি থেকে একশো টাকা আদায় করে থাকে। এতে বাড়তি ৪২ টাকা গুণতে হয়। এছাড়া সিএন্ডএফ এজেন্টের পাশ না থাকলে গাড়ি প্রতি বাড়তি একশো টাকা দিতে হয়।
সাড়ে চার হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে বাড়তি ৪২ টাকা হিসাবে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এতে মাসিক প্রায় ৫৭ লাখ চাঁদাবাজি হচ্ছে। চালকদে দাবি, গেটপাশে অতিরিক্ত টাকা চাঁদা নেয়ার বিষয়টি সবাই জানে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মেজর মো. রেজাউল হক জানান, কোন সময় কেউ অভিযোগ করেনি। এ ধরনের বিষয় আছে আমি বলবো না। গেটে লিখাই আছে ‘আপনার কাছে যদি কেউ অতিরিক্ত টাকা চায় তাহলে অভিযোগ জানান। অভিযোগ না আসলে কিংবা অভিযোগ ভুল জায়গায় করলে তো সমাধান হবে না। আমি আসলে বলতে পারছিনা কে কখন টাকাগুলো নেয়। আমরা অটোমেশন করার কাজ করছি। প্রি-পেইডে টাকা চলে যাবে। অটোমেশনের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। অটোমেশন হয়ে গেলে গেটে পাশ নেয়ার কোন কাজ থাকবে না। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগের বিষয়টি সবাই বলে কিন্তু আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয় না। আমি প্রতিনিয়ত আমার লোকজনকে বলি যেন একটাকাও বেশি নেয়া না হয়। আসলে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা নেয়া সম্ভব হয়না। তাই চালকদের বলা হয় যেন ৫৮ টাকা নিয়ে আসে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট