চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দাবি ওয়াসার পানি ও হাসপাতাল
দাবি ওয়াসার পানি ও হাসপাতাল

দাবি ওয়াসার পানি ও হাসপাতাল

আয়তন: ১১.৬২ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা: ১ লাখ ৫ হাজার ভোটার: ৩৮ হাজার ১৯০ জন

আল-আমিন সিকদার

১০ মার্চ, ২০২০ | ২:২৮ পূর্বাহ্ণ

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম। যেখানে বিশাল জলরাশির ঢেউয়ের উন্মাদনা দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন পর্যটক। চট্টগ্রাম শহরের শেষ প্রান্তে এই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। কয়েক বছর আগে এই সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনে শতকোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সাগর পাড়কে সাজানো হয়েছে তিন স্তরে। প্রতিবন্ধীদের সাগরের তীরে নিয়ে যেতে রাখা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। পর্যটকদের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়েছে ফুলের বাগান। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শতকোটি টাকার এসব সৌন্দর্য এখন পরিণত হয়েছে অনেকটা হকার মার্কেটে।
এসব দোকান থেকে ফেলা ময়লা-আবর্জনায় ঢেকে গেছে পতেঙ্গার সৌন্দর্য। কিছুদিন আগেও দোকানগুলো উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন সিডিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে উচ্ছেদের পরেও একই চিত্র রয়ে গেছে এখনো। বিচের সৌন্দর্য রক্ষার্থে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পর্যটকরা।
মো. মনির হোসেন নামে এক পর্যটক বলেন, ‘এই বিচের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি চোখে পড়েছে। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন দেয়া হলেও ময়লা ফেলা হয় যেখানে-সেখানে। তবে এই বিষয়টি তদারকি করার জন্য বা সচেতনতার জন্য এই পর্যন্ত কাউকে চোখে পড়েনি। আর বেশ কিছু ভাসমান দোকান রয়েছে, যার কারণেও নোংরা হচ্ছে সৈকতের পরিবেশ’।
দর্শনীয় স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে অবস্থিত। এখানে আরও বেশ কয়েকটি বিনোদনমূলক স্পট রয়েছে। কর্ণফুলী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে ওঠেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নেভাল একাডেমি। যেটি পরিচিত নেভাল নামে। নদী-সাগরের এ মোহনা দেখতেও নেভালে ভিড় জমায় দর্শনার্থীরা। এখানে আছে দেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্কটিও। রয়েছে বোট ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট। বলতে গেলে চট্টগ্রাম শহরের প্রধান বিনোদন স্পটগুলো এ ওয়ার্ডেই।
শুধু যে বিনোদনের জন্যই এ ওয়ার্ডের পরিচিতি তা কিন্তু নয়, এখানে রয়েছে উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চট্টগ্রাম থেকে আকাশ পথে উড়ে যেতে হলে যে বিমান বন্দরে আসতে হয়, সেই শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরটি এই ওয়ার্ডেরই সীমানায়। আছে নৌ ও বিমান বাহিনীর বেশ কয়েকটি ঘাঁটি। এমনকি দেশের একমাত্র টানেলটিও নির্মাণ করা হচ্ছে এ অঞ্চলে।
যেখানে প্রতিনিয়ত হাজারো যাত্রী ও পর্যটকদের আনা-গোনা সেখানে বসবাসরত স্থায়ীদের ভাগ্য যেন দুঃখে ভরা। বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিক্ষা, গ্যাস আর স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত এ এলাকার বাসিন্দাদের এখন থাকতে হয় উচ্ছেদ আতঙ্কে।
লালদিয়ার চরের বাসিন্দা আবুল বশর পূর্বকোণকে জানিয়েছেন তার এলাকার সমস্যাগুলোর কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনুন্নত। আর এই লালদিয়ার চরে শেখ মুজিবের সময়কালে সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এখান থেকে সেই আশ্রয়গ্রহীতাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমাদের জন্য বিকল্প কোনো স্থানের বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া আমরা আজ পর্যন্ত ওয়াসার পানি পাইনি। ওয়াসার পানি পেলে আমাদের খুবই সুবিধা হতো’।
এদিকে বর্তমান কাউন্সিলর ছালেহ্ আহমদ চৌধুরী এই ওয়ার্ডের উন্নয়নে ব্যয় করেছেন ১৫০ কোটি টাকা। তবে এত উন্নয়নের মাঝেও স্থানীয়দের সমস্যা নিয়ে করা অভিযোগগুলো স্বীকার করেছেন তিনি। এসব সমস্য সমাধানে আশাব্যক্ত করেছেন তিনি।
তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার সময়ে ১শ’ জনের তালিকা দিয়ে কিছু জনগণকে থাকার জায়গা দিয়েছিল। ডিসি মহোদয় এই জায়গার জন্য মামলা করেছিলেন। যার কারণে কিছু লোককে আপসের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন যে জায়গা আছে তা থাকবে কিনা তাও আমি বলতে পারছি না। তবে তাদের উচ্ছেদ করা হোক এটা আমি চাইনা। যদি উচ্ছেদ করাও হয় তাহলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। এটাই আমার দাবি থাকবে’।
সি-বিচের ভাসমান দোকান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যাদের দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে তারাইতো সি-বিচ সৃষ্টিকারী, তাদেরও তো ব্যবসা করতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য ভবিষ্যৎ মেয়রের সাথে আমি আলাপ করবো’।
পর্যটকদের অভিযোগ ছিল সি-বিচ এলাকায় যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা নিয়ে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সি-বিচ এলাকায় বেশকিছু ময়লা ফেলার বিন আমি দিয়েছি। প্রত্যেকদিন আমার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তা পরিষ্কার করে। তবে জনগণকেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার বিষয়েও সচেতন হতে হবে’।
এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দার আভিযোগ ছিল সুপেয় পানির সংকট নিয়ে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু বেশ কয়েকবার ওয়াসার সাথে পানির সংযোগের জন্য কথা বলেছি এবং আবেদন করেছি যার পরিপ্রেক্ষিতে বোটক্লাব পর্যন্ত ওয়াসার সংযোগ এসেছে। তাই আমি আশা করছি খুব শীঘ্রই পুরো ওয়ার্ডবাসী ওয়াসার সংযোগ পাবে। এই কাজ চলমান রয়েছে। সেটা এই বছর সম্ভব না হলেও আগামী বছর অবশ্যই হবে বলে আমি মনে করি’।
বিগত সময়ে দেড়’শ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি। যার মধ্যে ২শ’ টিরও বেশি সড়ক এবং ড্রেনের সংস্কারসহ বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ১১৮ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন, বর্তমানে ৩২ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা হিসেবে এলাকায় ওয়াসার পানি সংযোগ নিশ্চিতকরণ, মার্তৃসদন হাসপাতাল নির্মাণ, একটি কলেজ নির্মাণ, ৬ তলা বিশিষ্ট নতুন ও আধুনিক ওয়ার্ড কার্যালয় নির্মাণের আশা ব্যক্ত করেছেন।
বর্তমান কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে আগামী নির্বাচনে চতুর্থবারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার বিপক্ষে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করবেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নুরুল আবছার, স্বত্রন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলমগীর, এম এ রহিম, মো. মঞ্জুর আলম ও মো. ফজল করিম।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর প্রথমবারের মত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় সমর্থন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন তিনি। নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে, ওয়াসার সাথে মিলে এলাকার সুপেয় পানির অভাব মেটাতে কাজ করা, মাদক নির্মূলসহ নতুন ও আধুনিক ওয়ার্ড কার্যালয় ভবন নির্মাণে কাজ করতে চান। এর পাশাপাশি সিডিএ’র সাথে সমন্বয় করে ফুলছড়ি পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার এবং লালদিয়ার চরের উচ্ছেদকৃত মানুষের পুনর্বাসনে কাজ করার এবং ওয়ার্ডের শিক্ষার্থী ও শিশু-কিশোরদের জন্য একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কলেজ এবং একটি খেলার মাঠ নির্মাণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট