চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো’ বিদ্রোহীদের প্রতি সুর নরম করলেন কাদের

৯ মার্চ, ২০২০ | ৩:২০ পূর্বাহ্ণ

কাউন্সিলর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৪২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী গতকাল রবিবার তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। সাধারণ নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল দলের সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতাদের সাথে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করে কড়া বার্তা দেবেন। বাস্তবে তিনি বিষয়টি অনেকটা এড়িয়ে গেছেন। বিদ্রোহীদের বিষয়ে অনেকটা নরম সুরে তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের সমস্যা দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সমাধান করবেন।
অপরদিকে, থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে বিদ্রোহীদের নিরস্ত করার উদ্যোগ নিয়ে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গত শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, আগামীকাল (গতকাল রবিবার) কাদের ভাই আসবেন তিনিই সমাধান দেবেন।
দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতার বক্তব্য শুনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা অনেকটা ‘আস্কারা’ পেয়েছেন বলে সাধারণ নেতাকর্মীদের ধারণা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গতকাল ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকাতেও প্রচুর বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। যতটা প্রথমে ছিল শেষ পর্যন্ত অত বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না। ১৭২ জনের মধ্যে কমতে কমতে মাত্র ১৫ জন বিদ্রোহী ছিল যারা জয়লাভ করেছে। এখানে তিনি উদ্বেগের কোনো কারণ দেখেন না উল্লেখ করে বলেন, যেটুকু সমস্যা আছে আশা করি তা সমাধান হয়ে যাবে। কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিমানযোগে চট্টগ্রামে এসে তিনি পতেঙ্গায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্ণফুলী টানেল) পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে বেলা ১২টার তিনি সার্কিট হাউজে আসেন। সেখানে চট্টগ্রামের নেতাদের সাথে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত বৈঠক করেন। এরপর বেরিয়ে যান নেতারা। বৈঠক চলাকালে সার্কিট হাউজের মূল ফটক থেকে অন্য নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে দেয়া হয়নি। বৈঠকশেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি কোনো নেতা। বৈঠক শুরুর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনের খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্ব আমার আছে। আমি সরেজমিনে দেখতে এসেছি। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে একটা সমন্বয় কমিটি করে দিয়েছি। প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে। সেই কমিটি কতটা কার্যক্রম করেছে এবং কতটা অগ্রগতি করেছে, সেটা দেখতে এসেছি।
আগেই নির্বাচনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। তিনি যেকোনো প্রয়োজনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে পারবেন। তার ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। এছাড়া একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তারা যৌথভাবে কাজ করবেন।
এদিকে, সার্কিট হাউজে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বৈঠক চলাকালে বাইরে বিক্ষোভ করেন মনোনয়ন বঞ্চিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এসময় প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, দলের জন্য কাজ না করে ভুয়া পদ-পদবী দেখিয়ে অনেকেই দলের সমর্থন ভাগিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া সাংগঠনিক কাজসহ বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখলেও দল তাদের মূল্যায়ন করেনি। তাই বাধ্য হয়ে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সিনিয়র নেতাদের আদেশ-অনুরোধ উপেক্ষা করে এখনো প্রায় অর্ধশত বিদ্রোহী নির্বাচন করতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে এসে বিদ্রোহীদের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বার্তা দেবেন বলে আলোচনা থাকলেও টানেল পরিদর্শনের সময় তিনি ‘চট্টগ্রামের সমস্যা চট্টগ্রামের নেতারাই মেটাবেন’ বলে কার্যত বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন।
সার্কিট হাউজের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনসহ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সিডিএ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম দোভাষ, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু প্রমুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট