চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লড়াই হবে বর্তমান আর সাবেকে
লড়াই হবে বর্তমান আর সাবেকে

আয়তন: ৫ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা: ৫ লাখ ৬০ হাজার ভোটার: ১ লাখ ২৩ হাজার

লড়াই হবে বর্তমান আর সাবেকে

আল-আমিন সিকদার

৮ মার্চ, ২০২০ | ২:১২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, সিইপিজেড। যেখানে শতাধিক কারখানায় কাজ করেন প্রায় আড়াই লক্ষাধিক শ্রমিক। প্রতিদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে কারখানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান শ্রমিকরা। আর তাদের এই গন্তব্য স্থানটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের ইপিজেড মোড়।

সিটি নির্বাচনের ধারাবাহিক পর্বে আমাদের আজকের গন্তব্য গার্মেন্টস এরিয়া খ্যাত এই ওয়ার্ডে। ৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ওয়ার্ডটিতে সাড়ে ৫ লাখ মানুষের বসবাস। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা যেমন বেশি তেমনি বাকি ওয়ার্ডগুলোর তুলনায় এখানে ভোটার সংখ্যাও বেশি। প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ভোটার এখানে। জনসংখ্যা আর ভোটার সংখ্যাই জানান দেয় এটি একটি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা।
কর্মসুবাদে এই এলাকার আশেপাশেই বাসস্থান করে নিয়েছেন শ্রমিকরা। তাইতো এখানে স্থানীয়দের তুলনায় বহিরাগতদের সংখ্যা প্রায় ৫ গুণ। ভোটার সংখ্যায়ও এগিয়ে তারা। বলতে গেলে শ্রমিকরাই নির্ধারণ করেন, কে হবেন এই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি। কিন্তু যাদের ভোট পাল্টে দেয় জনপ্রতিনিধির চেয়ার তারাই অবহেলিত এখানে।

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফেরার পথে তাদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। জিম্মি হতে হয় গণপরিবহনগুলোর কাছে। শ্রমিকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনগুলো। সাথে ফুটপাত দখলের নাজেহাল চিত্রতো রয়েছেই। ইপিজেড মোড় থেকে এমনই সব চিত্র তুলে এনেছি আমরা।
এতো গেলো শ্রমিকদের অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথের গল্প। বাসায় ফেরার পর রান্নার জন্য অপেক্ষা করতে হয় গ্যাসের জন্য। নেই খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানি। চিকিৎসার জন্য নেই কোন হাসপাতাল। তবে প্রসূতিদের জন্য একটি মাতৃসদন হাসপাতাল আছে ওয়ার্ডটিতে। অন্যদিকে বর্ষার মৌসুম ছাড়াও এই ওয়ার্ডটির মানুষকে ভাসতে হয় জোয়ারের পানিতে। নেই কোন খেলার মাঠ। এতে করে মাদকসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে যুবসমাজ।
তরুণ ভোটার হিসেবে ওয়ার্ডের দৃশ্যমান সমস্যার কথা জানিয়েছেন বন্দরটিলা এলাকার বাসিন্দা আকিব জাবেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এই এলাকা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া রাস্তা-ঘাট ও ড্রেনের অবস্থা খুবই খারাপ। নতুন রাস্তার ড্রেনে পানি নিষ্কাশনের কোনো সুবিধা নেই। আর আমাদের এই ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নেই। যার কারণে যুবসমাজ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই বিষয়ে সমাধান আশা করছি’।

একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকতার হোসেন পেশায় সিএনজি চালক। ওয়ার্ডের যানজটের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যানজটের কারণে আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। গাড়ি চালাতে গিয়ে জ্যামে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া এই এলাকার যাত্রীরা ঠিকমতো গাড়ি পায় না। আর গণপরিবহনগুলো এই সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করে’।
এছাড়াও ওয়ার্ডটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রামের ঈসা খান গেট, হাসপাতাল গেট ও দুটি নাবিক কলোনি। শিক্ষার জন্য আছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ ও বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। তবে সরকারি একটি প্রাইমারি স্কুল থাকলেও নেই কোন মাধ্যমিক স্কুল বা কলেজ।
শিক্ষা খাত, পানি, গ্যাস ও জলাবদ্ধতাসহ এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সকল সমস্যা নিয়ে আমরা মুখোমুখি হয়েছি বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনের। এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে আগামী দুবছরের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘গণপরিবহনগুলোর এই বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু বছরে একবার রমজান মাসে যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগ থেকে আমাদের বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। যা শুধু রমজান মাসেই কার্যকর থাকে। এরকম বৈঠকের জন্য যদি আমাদের নিয়মিত আমন্ত্রন জানানো হয় তাহলে পরিবহন সমিতি ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয় করে আমরা এরকম সমস্যার সুরাহা করতে পারতাম। তবে বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত যদি স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করা যায় তাহলে এই ভোগান্তি আর থাকবে না বলে আমি মনে করি। আর আমার এলাকার এই সমস্যার বিষয়টি আমার মাথায় রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে আমি এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবো’।

সুপেয় পানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়াসার মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়ার্ডের প্রতিটি গলিতে ওয়াসার সংযোগ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তাই আমি আশা করছি আগামী এক বছর পর এই ওয়ার্ডে সুপেয় পানির অভাব আর থাকবে না। তবে বর্তমানে বিভিন্ন সমাজসেবীর সহযোগিতায় এলাকায় বেশ কিছু গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এলাকার মানুষ পানির সংকট মেটাচ্ছে’।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সল্টগোলা ক্রসিংয়ে স্লুইচ গেট করার যে প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে তা শেষ হলে আশা করছি এসমস্যার সমাধান হবে। তার পরও যদি জোয়ারের পানিতে এলাকা প্লাবিত হয় তাহলে নয়ারহাটে নৌবাহিনীর ডগ ইয়ার্ডে আরো একটি স্লুইচ গেট করা হবে’।
ফুটপাত দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতি মাসে একবার করে আমি হকার উচ্ছেদ করি। যার কারণে আগে যে স্থায়ী দোকান ফুটপাতে ছিল তা এখন আর নেই। বর্তমানে যেগুলো আছে সেগুলো অস্থায়ী হকারদের দোকান। এদের আমি সরিয়ে দিলেও তারা আবার চলে আসে। পুলিশ প্রশাসন যদি আমাকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করে তাহলে আমি এদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে পারবো বলে মনে করি’।
বিগত বছরগুলোতে ওয়ার্ডের উন্নয়নে কী করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বোমোট ৮৪ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি। ৭০ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছি। যার মধ্যে রয়েছে, ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৮ টি রোড, ৫০ টি ড্রেনের সংস্কারসহ বেশ কিছু কার্যক্রম। বর্তমানে ৫টি রোডসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় ১৪ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে’।

আগামী সিটি নির্বাচনে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। তার বিপক্ষে লড়বেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইপিজেড থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেল।
সরফরাজ কাদের রাসেল নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদক নির্মূল, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, এলাকাকে জুয়ার প্রভাবমুক্ত রাখা, বিশুদ্ধ পানির অভাব মেটাতে ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণের আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট