চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বঞ্চিতদের ক্ষোভ, হট্টগোল

চসিক নির্বাচন হ ‘ওপেন, ওপেন’ চিৎকার হ ‘হুঁশিয়ার সাবধান জামায়াত শিবিরের দালালেরা’ হ ‘চশমা হিল এখন হাওয়া ভবন’

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ মার্চ, ২০২০ | ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

মনোনয়ন না পাওয়ায় বঞ্চনার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বঞ্চিতরা। গতকাল নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়কারী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র আহবানে সাড়া দিয়ে বেলা ১১টায় সেখানে উপস্থিত হন বঞ্চিতরা। উপস্থিত ছিলেন মনোনয়নপ্রাপ্তরাও।

বৈঠকে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী উত্তেজিত হয়ে বক্তব্য দেন। তবে বারবার অনুরোধের পরও কোন প্রার্থী তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে বৈঠকে কথা দেননি। বরং বৈঠকশেষে তাদের ক্ষোভ উগড়ে দেন থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। বৈঠক শেষে প্রার্থীরা বের হচ্ছিলেন সিঁড়ি দিয়ে। আর নেতারা বের হচ্ছিলেন লিফট দিয়ে। মোশাররফ হোসেন দ্রুত সভাস্থল ত্যাগ করলেও বঞ্চিতরা ঘিরে ধরে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে। তারা সমস্বরে ‘ওপেন, ওপেন’ বলে চিৎকার করতে থাকলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের প্রার্থী আব্দুল মান্নান বলেন, তার ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপির ইয়াছিন চৌধুরী আছু। এবার আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেয়েছে তার ভাই। তিনি গত নির্বাচনে ৮০০ এর কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন। আর আমি (আবদুল মান্নান) তিন হাজার ৮০০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। আমি গত পাঁচ বছর বিএনপির কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এলাকায় লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমরা বলছি, কাউন্সিলর পদে কাউকে সমর্থন দেওয়ার দরকার নেই। এটা ওপেন করে দেয়া হোক। ৩৭ নম্বর মুনীর নগর ওয়ার্ডের প্রার্থী এনামুল হক মুনীরী পূর্বকোণকে জানান, স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-বিএনপি পরিবারের ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার অভিযোগ রাজাকারের সন্তানকে মনোনয়ন দিয়ে দলকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে তিনি ওপেন রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, টাকা নিয়ে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সে রাজাকারের সন্তান। এসময় মুনিরীর সমর্থকরা ‘হুঁশিয়ার সাবধান জামায়াত শিবিরের দালালেরা’, ‘জামায়াত শিবিরের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন।
৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিম তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসভবন নন্দনকাননে দেখা করতে গিয়ে মনোনয়ন না পাওয়ার আক্ষেপের কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে আমার জনপ্রিয়তা আছে। তারপরও ষড়যন্ত্র করে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। নির্বাচন করতে দেবেন না, রাজনীতিও করতে দেবেন না। তাহলে বিষ দেন, বিষ খাই’। প্রত্যুত্তরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কীভাবে এটা হয়েছে, বুঝতে পারছি না। তোমার জনপ্রিয়তা আছে, তুমি কেন বাদ পড়লে সেটা ভাবছি।

জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এম এ নাসের বলেন, কেউ কেউ মিথ্যা সাংগঠনিক পরিচয় দিয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন। এটা সভায় বলতে চেয়েও সুযোগ পাইনি।
৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, তার ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তি আগে অন্য দল করতেন।

১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহমদ বলেন, দল যাকে দিয়েছে এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা নেই।
আন্দরকিল্লা, দেওয়ানবাজার ও চকবাজার নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তিনবারের কাউন্সিলর আনজুমান আরা বেগম বলেন, নেত্রীর অগোচরে একটি মহল অজনপ্রিয় ও বিতর্কিতদের দলের মনোনয়ন এনে দিয়েছে। যোগ্য ও জনপ্রিয়দের বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, ওপেন ইলেকশন হোক।
আরেক নারী প্রার্থী তার কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে তার ক্ষোভ প্রকাশ করাকালে নগর আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি আমির হোসেইন তাদেরকে গালিগালাজ করেন। এসময় ওই নারী প্রার্থীও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখান। এই ঘটনায় ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই নারী প্রার্থী নগর মহিলা লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চশমা হিল এখন হাওয়া ভবন। তাই বিতর্কিতরা সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট