চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আ. লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সরানোর উদ্যোগ ব্যর্থ

৬ মার্চ, ২০২০ | ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার প্রথম উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রামে মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহীদের ডেকেছিলেন কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচন সমন্বয়কারী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে কাউকে ভয় দেখানো বা মন গলাতে পারেননি মোশাররফ। শেষের দিকে হট্টগোল শুরু হলে সভা শেষ করে দ্রুত চলে যান তিনি।
সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া সভায় একে একে সকল প্রার্থী প্রবেশ করেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত সভা চলে। তবে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী গতকালের সভায় আসেননি। সভায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, খোরশেদ আলম সুজন, সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান, কয়েকজন বিদ্রোহী কাউন্সিলর পদ দলের সমর্থনের বাইরে রেখে উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেন। এসময় মোশাররফ হোসেন তাদের বলেন, উন্মুক্ত করে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রার্থী পরিবর্তনেরও কোনো সুযোগ নেই। কারণ যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছে, তাদের সমর্থন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রীর অর্ডার হচ্ছে, যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছে, তাদের অবশ্যই জিতিয়ে আনতে হবে।
সভার শুরুতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার পাশে বসা আছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত পাঁচ বছর তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবুও নেত্রী তাকে মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না পেয়ে আ জ ম নাছির কি কোন উচ্চবাচ্য করেছেন ? করেননি। আপনাদের সামনে আ জ ম নাছির সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন। তাহলে আপনারা কেন পারবেন না। নেত্রীর নির্দেশ অবশ্যই মানতে হবে।
এসময় আ জ ম নাছির উদ্দিন সবাইকে নেত্রীর নির্দেশনা মেনে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, রাজনীতি করতে হবে নীতি-আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। সাময়িক পাওয়া-না পাওয়াকে বিবেচনায় না নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে রাজনীতি করাই একজন প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীর কাজ। দল যাদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাদের মেনে নিতে হবে। তাদের জিতিয়ে আনতে হবে। দলকে এগিয়ে নিতে হবে। কারো অভিযোগ থাকলে লিখিত আকারে দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের মধ্যে হয়তো অনেকে যোগ্য আছেন। কিন্তু আমাদের মানতে হবে, দল যাদের যোগ্য মনে করেছে, তাদের মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। নিজেকে বঞ্চিত মনে করার কোনো সুযোগ নেই। যারা আজ মনোনয়ন পাননি, আগামীতে নিশ্চয় তাদের মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করতে হবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, বৈঠকে কোন ওয়ার্ডে কতজন প্রার্থী, দল কাকে সমর্থন দিয়েছে এবং বিদ্রোহী কারা তা ওয়ার্ডভিত্তিক তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এনিয়ে কিছুটা পর্যালোচনাও হয়েছে। বঞ্চিতদের অভিযোগ লিখিত আকারে নেয়া হয়। কাউন্সিলর প্রার্থীরা যারা মূলত বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তারা বিভিন্ন অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিয়েছেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশারর হোসেন, বঞ্চিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের অভিযোগ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাছাড়া আগামী ৮ মার্চ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চট্টগামে আসবেন। তারাই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে ছাড় দেয়া হবে না। দলের পদ-পদবিতে থাকুক আর না-ই থাকুক, দলের নাম তারা কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। দলের কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবে না। মুজিববর্ষে মেয়র এবং সব কাউন্সিলর পদ আওয়ামী লীগকে উপহার দেয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট