চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ মুনির নগরবাসী
মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ মুনির নগরবাসী

মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ মুনির নগরবাসী

আয়তন : ৬ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা : ২ লাখ ২৫ হাজার ভোটার : ৩৫ হাজার ৭শ’ জন

আল-আমিন সিকদার

৬ মার্চ, ২০২০ | ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর মধ্যম হালিশহর। তবে অনেকেই ওয়ার্ডটিকে চিনে মুনির নগর হিসেবে। জনশ্রুতি রয়েছে, হালিশহর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা খাজায়ে বাংলা সুলতানুল আউলিয়া কুতুবুল এরশাদ হযরত হাফেজ সৈয়দ মো. মুনিরউদ্দিন নুরল্লাহ (রা.) এর নামানুসারেই এই ওয়ার্ডের পরিচিতি পায়।

এই ওয়ার্ডের পশ্চিমে রয়েছে সমুদ্র। সাগর পাড়ের বেড়িবাঁধ এলাকায়ই সৈয়দ মো. মুনিরউদ্দিন নুরল্লাহ (রা.) এর মাজার। প্রতিদিন চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই মাজার জেয়ারতে আসেন বহু মানুষ।

ওয়ার্ডটিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি স্টেডিয়াম। আছে বন্দর ও রেলে কর্মরতদের বসবাসের জন্য পোর্ট কলোনি ও ঐতিহ্যবাহী হাযারী দিঘি। এছাড়াও পুরো শহরের ময়লার ভারও বহন করে এই ওয়ার্ডটি। আনন্দবাজার ময়লার ডিপোটিতে প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে আসে শহরের আবর্জনা। এই ময়লার ডিপোটিই এখন এখানকার স্থানীয়দের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। কারণ,এই ময়লার ডিপোর পাশেই রয়েছে সবজি ক্ষেত।
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ড্রেনের আবর্জনা অপসারণ ও মশা নিধনের ওষুধ ব্যবহার না করার কারণে মশার উৎপাত বেড়েছে। জেলে পাড়ার মাদকের ছড়াছড়ির পাশাপাশি এলাকায় সুপেয় পানির সংকট ও জলাবদ্ধতার অভিযোগও করেছেন তারা।
অত্র এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মশার উপদ্রব খুব বেশি। কিন্তু মশা নিধনে কোনো ঔষধ প্রয়োগ করা হয় না। এছাড়া ফাতেমা স্কুলে ফাটল ধরেছে, যা বর্তমানে বিপদজনক অবস্থায় আছে। মাদকের প্রভাবও আমাদের এলাকায় আছে। এখানে পুলিশের সহযোগিতায় চলে মাদক ব্যবসা । আর ওয়াসার পানির সংযোগ আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। তাছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে প্রত্যেক বর্ষায় আমাদের ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে থাকে। আমরা এই সব সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই’।

জেলেপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী হাজী মো. মোতালেব আমাদের জানিয়েছেন তার এলাকার সমস্যার কথা। তিনি বলেন, ‘এলাকার প্রধান সমস্যা ময়লার ডিপো, এর দুর্গন্ধের কারণে আমরা ঠিক মতো নিশ্বাস নিতে পারি না। আর ময়লাগুলো গাড়ি করে আনার সময় রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে কিন্তু এগুলো পরিষ্কার করা হয় না। আর মশার জ্বালাতনে আমরা অতিষ্ঠ হলেও মশা নিধনে কোনো ঔষধ প্রয়োগ করা হয় না। তাছাড়া ঠিকমতো নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না। বছরে একবারও নালা পরিষ্কার করতে আমি দেখিনি। একটি মহিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের খুবই অভাব। ভবিষ্যৎ কাউন্সিলরের কাছে আমরা এসব সমস্যার সমাধান চাই’।
মুনির নগর ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন মো. শফিউল আলম। জেলে পাড়াকে মাদকের আখড়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ময়লার ডিপোর সমস্যা সমাধানের আশাও ব্যক্ত করেছেন এই কাউন্সিলর।
কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম বলেন, ‘শীতকালে নর্দমা শুষ্ক থাকায় এগুলো পরিষ্কার করার তেমন একটা সুযোগ থাকে না। তবে জনবলের স্বল্পতার কারণে আমরা চাইলেও সবসময় নর্দমাগুলো পরিষ্কার রাখতে পারি না। এটি যদি আমাদের ব্যর্থতা বলে জনগণ মনে করে তাহলে আমরা ব্যর্থ। কিস্তু আমাদের ইচ্ছার কমতি ছিল না। আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নর্দমা পরিষ্কার করলেও বেশ কিুছ এলাকাবাসী ময়লা ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনেই ফেলে দেয়। আমি অনুরোধ করবো এই বিষয়ে এলাকাবাসী যাতে একটু সচেতন হয়’।

এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে তার কার্যক্রম ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি সম্পূর্ণভাবে জলাবদ্ধতার সমাধান আমি করতে চাই তাহলে বেশ অনেকখানি জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তাই এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে আমি প্রত্যেকটি ড্রেন প্রসস্থ করেছি। আর এর ফলে ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে আসবে বলে আমি মনে করি’।
মাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় জেলে পাড়া মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই আখড়া আমি ধ্বংস করেছি এবং মাদক ব্যবসায়ী শিখা রাণীকে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। বর্তমানে জেলে পাড়ায় যে মাদকসেবী আছে তারা মাদক সেবনে অভ্যস্ত বলেই ঐ এলাকায় মাদকের অস্তিত্ব এখনো আছে। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় এই মাদককে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আমি মনে করি’।
গত নির্বাচনে সুপেয় পানির অভাব মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুন্সি পাড়া, আনন্দবাজার ও নিউমুরিং এলাকায় আগে ওয়াসার সংযোগ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে নিউমুরিং এলাকাবাসী ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে পারছে। মুন্সি পাড়া ও আনন্দবাজার এলাকার বেশিরভাগ স্থানে ওয়াসার সংযোগ স্থাপন প্রায় শেষ। আমার মেয়াদকালের মধ্যেই এই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি’।
এলাকাবাসীর প্রধান সমস্যার কারণ ছিল ময়লার ডিপো। এই সমস্যার সমাধানে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ময়লার ডিপো নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি যার কারণে এই সমস্যা অধিকতর গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এসেছে। আমি চাইলেই তো এই ডিপো এখান থেকে সরাতে পারি না, তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ময়লাগুলোকে রিসাইক্লিং করে ব্যবহার করা যায় কিনা এই বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করবো’।

নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ডের উন্নয়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি। ৭৮ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছেন।
আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। তার বিপক্ষে লড়বেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন মুরাদ, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বন্দর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওসমান ও স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মুনিরি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেন মুরাদ সুপেয় পানির অভাব মেটানোর পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসন, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের প্রসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আনন্দ বাজার ও জেলে পাড়াসহ সম্পূর্ণ ওয়ার্ড থেকে মাদক নির্মূলে কাজ করা ও আনন্দবাজার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য আধুনিক শ্মশানের ব্যবস্থা করার আশা ব্যক্ত করেন। এছাড়া নিজ উদ্যোগে এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. ওসমান নির্বাচিত হলে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, আনন্দ বাজারসহ ওয়ার্ডের অনুন্নত রাস্তার সংস্কারে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে তিনি এলাকার গরীব এবং সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য একটি এম্বুলেন্স দেয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক মুনিরি ওয়ার্ডের সুপেয় পানির অভাব মেটানোর পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসন, এলাকার সরু রাস্তা প্রসস্থ করা, মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং আধুনিক পদ্ধতিতে ময়লার ডিপোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন তার নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে ওয়ার্ডে একটি মহিলা উচ্চ বিদ্যালয় এবং আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট