চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সহযোদ্ধারা পেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি মনির আহমদ
সহযোদ্ধারা পেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি মনির আহমদ

এটা দুঃখজনক : সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি

সহযোদ্ধারা পেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি মনির আহমদ

রামু শুক্রবারের প্রতিবেদন

নীতিশ বড়ুয়া, রামু

৬ মার্চ, ২০২০ | ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিলেও এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি রামুর প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মনির আহমদ। তিনি রামু উপজেলার পশ্চিম কাউয়ারখোপের গোলাম শরীফের ছেলে ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু চান তিনি।

ইতিপূর্বে তিনি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চেয়ে আবেদনও করেছিলেন। এ বিষয়ে মনির আহমদ জানান, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসনে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই হলে তিনি অবগত না হওয়ায় তার নাম জামুকা’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তার অনেক সহযোদ্ধা মুক্তি লাল বার্তায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে তিনি রামু থানায় যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র (এসএলআর, রাইফেল ও কার্টিজ) জমা দেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১ নং সেক্টরের সুবেদার নুর আহমদের নেতৃত্বে তিনি রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গহীন জনপদ নাইক্ষ্যংছড়ি জুমখোলা, সালামীপাড়া কাঠের ব্রিজ, জোয়ারিয়ানালাসহ বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র যুদ্ধে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি আরো জানান, ইতিপূর্বে ১৯৭১ সালে ১১৭ নং গ্রুপে স্থানীয় কমান্ডার সুবেদার নুর আহমদ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’র আওতায় মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেয়া কক্সবাজার, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা করা হয়। ওই তালিকায় ১৭ নং ক্রমিকে তার (মনির আহমদ) নাম রয়েছে। ২০০০ সালের মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমদসহ রামুর ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি চেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি লিখিত আবেদন জানান। ওই আবেদনে ‘সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করার লক্ষ্যে বিশেষভাবে সুপারিশ করছি’ মর্মে লিখিত সুপারিশ করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম একেএম মোজাম্মেল হক। সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ২০০১ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় বাদপড়া রামুর ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি আবেদনপত্র প্রেরণ করেন। ওই আবেদনে ১৩ নং ক্রমিকে মনির আহমদের নাম রয়েছে। ওই আবেদনে মনির আহমদসহ ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি অঞ্চলের কমান্ডার সুবেদার (অব.) নুর আহমদ। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মনির আহমদ দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন শাখার উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা তিনি এখনো সব বলতে পারেন। শেষ বয়সে হলেও তিনি চান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, মনির আহমদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অনেকে তাকে স্বীকৃতি দিলেও রহস্যজনক কারণে তিনি তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি। এটা দুঃখজনক। তাই আগামীতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকালে তাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সহযোগিতা করা হবে। রামু উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল হক জানিয়েছেন, মনির আহমদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ১ নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সুবেদারের অবহেলার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হননি।

কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান, মনির আহমদ সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, এটা এলাকার সবাই জানে। তার সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়া অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও রহস্যজনক কারণে মনির আহমদ বাদ পড়েছেন। তাই সরকারের উচিত জীবনের শেষ লগ্নে হলেও তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট