চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিনা বেতনে শিক্ষকতা আর কতদিন ?
বিনা বেতনে শিক্ষকতা আর কতদিন ?

১৯ বছরেও সরকারি হয়নি

বিনা বেতনে শিক্ষকতা আর কতদিন ?

রথিচন্দ্রপাড়া প্রাথমিক দীঘিনালার এই বিদ্যালয়ে নেই কর্মরত শিক্ষকদের কোনো বেতন ভাতার ব্যবস্থা নিজস্ব সংবাদদাতা, দীঘিনালা

৬ মার্চ, ২০২০ | ২:০২ পূর্বাহ্ণ

দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত রথিচন্দ্রপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে ১৯ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন এই স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরা।

প্রশাসনিক সূত্রমতে, ২০০১ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির ১৯ বছর পার হলেও মিলেনি কোনো প্রকার সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। নেই কর্মরত শিক্ষকদের কোনো প্রকার বেতন ভাতার ব্যবস্থাও। তারপরেও বিদ্যালয়টি সরকারি হওয়ার আশা বুকে ধারন করে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন দুর্গম পাহাড়ি জপদের একমাত্র এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচ সহকারি শিক্ষক। বেতন ভাতা থাক দূরের কথা বাঁশের বেড়া আর টিনের ছাউনির জরাজীর্ণ এই বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষকদের বসার মত কোনো আসবাবপত্রও। তাই একদিকে বেতনহীনতা অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যান প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক প্রীতি বিকাশ ত্রিপুরাসহ অন্য শিক্ষকরা। যার ফলে কিছু দিন বন্ধ থাকে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

এমতাবস্থায় নানা প্রতিকুলতার মাঝেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক ধনিময় ত্রিপুরাসহ ৪ জন সহকারি শিক্ষক। কোনো একদিন বিদ্যালয়টি সরকারি হবে এমন আশায় পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারেন ত্রিপুরা, মিলি ত্রিপুরা ও পলাশ ত্রিপুরা জানায়, আমাদের এই বিদ্যালয়ে কোনো প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা নেই। স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আমাদেরকে জঙ্গলে যেতে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় নিরুপায় হয়ে পাতকূপ ও পাহাড়ি ঝর্ণার জীবানুবাহী পানি পান করতে হয়। এ কারনে পানিবাহী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধনিময় ত্রিপুরা জানান, বেতন ভাতা না পাওয়ার কারনে প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকরা শিক্ষকতা ছেড়ে চলে গেছেন। তাই কিছুদিন বিদ্যালয়টি বন্ধ ছিল। তখন মানবিক কারনে ৪ জন সহকারী শিক্ষককে সাথে নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। তবে এভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। কারন আমাদেরও তো পরিবার পরিজন রয়েছে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি সরকারি করার দাবি জানান তিনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন জানান, শিক্ষকরা বেতন ভাতা না পেলেও রথিচন্দ্রপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সন্তোষজনক। তাই বিদ্যালয়টিকে সরকারি করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উল্লাহ জানান, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতার বিষয়টি নজিরবিহীন। তাই সরকারি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সমস্যা সমূহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা বরাদ্ধ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট