চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চবি, আটক ৫৭

চবি সংবাদদাতা

৫ মার্চ, ২০২০ | ১২:১২ অপরাহ্ণ

গভীর রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ছাত্রলীগের ৫০ নেতাকর্মী আহত ও ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। প্রায় ১০০টির মত আবাসিক রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ছয়টি ককলেট বিস্ফোরণেরও শব্দ শোনা যায়। বুধবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এদিকে এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের কর্মী উৎসব নামে এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করছেন বিজয় গ্রুপ। বিবাদমান গ্রুপ দুটি হল শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বিজয় গ্রুপ ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী নয়টি গ্রুপ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে বুধবার রাত দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের বিজয় ও নাছির গ্রুপের নয়টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র তৈরি হয় এফ রহমান হল প্রাঙ্গণ। এক পর্যায়ে নাছির গ্রুপ এফ রহমান হলে প্রবেশ করলে বিজয় গ্রুপ আলাওল হলের দিকে চলে যায়। এ সময় এফ রহমান ও আলাওল হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি দুই হলের লাইট নিভিয়ে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়। এতে দুই গ্রুপের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। বিভিন্ন রুমে লুটপাট চালানো হয়।

এদিকে আলাওল ও এফ রহমান দুই হলে অবস্থান নিয়ে ৫৭ জনকে আটক করে পুলিশ। রাত ৩টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে আলাওল হলের ২৩৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে বিজয় গ্রুপের এক কর্মীর সঙ্গে কনকর্ডের কর্মী ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বোরহানুল ইসলামের ঝামেলা হয়। এর মীমাংসা করতে গেলে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিজয় গ্রুপের কর্মী আবীর হাসান তাকে চড়-থাপ্পড় দেন। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাতে ক্যাম্পাসে ট্রেন এলে জিরো পয়েন্টের কাছে আবীরকে পেয়ে মারধর করে বোরহান ও তার সহযোগীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এ নিয়ে দিনভর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে।

পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে বিজয় গ্রুপ এবং শাহজালাল হলের সামনে কনকর্ড গ্রুপ অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে বিজয় কর্মীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে কনকর্ড গ্রুপের এক কর্মী শাহ আমানত হলের উত্তর পাশের এলাকায় আহত হলে তার সঙ্গীরা তাকে শাহজালাল হলের ভেতর নিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিজয় গ্রুপের কর্মীরা কনকর্ডের কর্মীদের ওপর হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে শাহজালাল হলের গেট ও ভেতরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় শাহজালাল হলে থাকা সিটি মেয়র আ জ ম নাসিরের অনুসারী উপ-গ্রুপগুলো এক হয়ে ধাওয়া করে বিজয়ের কর্মীদের। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিজয় পক্ষের নেতা সাবেক শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, মধ্যরাতে শিবির স্টাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপুর নেতৃত্বে এ নৃশংস হামলা হয়েছে। আমাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এছাড়া আমাদের এক জুনিয়র কর্মী নিখোঁজ রয়েছে। এদিকে আ জ ম অনুসারী নাছির গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, সন্ধ্যায় তিন হল থেকে বিজয়ের কর্মীরা আমাদের কর্মীদের বিতাড়িত করে। প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করলেও মধ্যরাতেও তাদের হলে ওঠার কোনো ব্যবস্থা করে দেয়নি প্রশাসন। রাতে তারা দুই হলে তারা উঠতে গেলে হামলা চালায় বিজয়ের কর্মীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, দুটি গ্রুপকে বারবার শান্ত থাকতে বলা হলেও সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে অনেকেই আহত হয়েছে। পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি আমরা। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করেছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট