চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরাইপাড়ায় সুপারিশ প্রশ্নবিদ্ধ
সরাইপাড়ায় সুপারিশ প্রশ্নবিদ্ধ

৩শ শয্যার হাসপাতাল হচ্ছে বন্দর-পতেঙ্গার ২০ লাখ মানুষের জন্য

সরাইপাড়ায় সুপারিশ প্রশ্নবিদ্ধ

ইমাম হোসাইন রাজু

৫ মার্চ, ২০২০ | ৩:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর স্বাস্থ্যসুবিধা বঞ্চিত পতেঙ্গা-বন্দর সন্নিহিত ছয়টি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ লাখ মানুষের জন্য অবশেষে একটি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্থান নির্বাচনের ভুলে সরকারের মহতি এই উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করছেন আলোচ্য ছয় ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত হাসপাতাল যেখানে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে সেটি ওই ছয় ওয়ার্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। আলোচ্য ওয়ার্ডের মধ্যে উপযুক্ত জায়গা থাকার পরও কেন এতদূরে হাসপাতালটি নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে, সে উত্তর মিলছে না কোথাও।
খবর নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমের আলোচ্য ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণের জন্য কোন হাসপাতাল নেই। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সামরিক বাহিনীর হাসপাতাল ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি মাতৃসদন থাকলেও সেগুলোতে সাধারণের চিকিৎসাসেবা নেয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। এসব এলাকার মানুষদের চিকিৎসা নিতে ৮/১০ কিলোমিটার দূরে জিইসি সন্নিহিত এলাকায় আসতে হয়। মাঝখানে আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতাল থাকলেও সেটির দূরত্বও কম নয়। সংকটময় মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য অনেক রোগীকে এতদূর আনতে গিয়ে পথিমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঘটনার নজির কম নয়। এমতাবস্থায় চিকিৎসা সেবাবঞ্চিত এসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে ৩শ থেকে ৫শ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সম্প্রতি হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাসহ একটি প্রতিবেদনও সরকারের উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
এদিকে, সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন যুগ পর আলোচ্য ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য সরকারিভাবে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ এর আগেও একাধিকবার নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথায় হাসপাতালটি নির্মিত হবে, এ নিয়ে হোঁচট খেতে হয়েছে বার বার। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবারই প্রস্তাব করা হয়েছে সম্ভাব্য সুবিধাভোগীদের এলাকার অনেক বাইরের জায়গা। যে কারণে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে যাওয়ার আগেই হাসপাতাল আর আলোর মুখ দেখতে পারেনি। স্থান নির্বাচনের ভুলে এবারও অতীতের মতো স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, আলোচ্য ছয় ওয়ার্ডের মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণ করা না হলে এলাকাবাসী সুফল পাবে না। স্থান নির্বাচনের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা হলে তারাই জমির একটা সুরাহা করতে পারেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা ও হালিশহর বাসিন্দাদের জন্য সরকারিভাবে একটি হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি সম্প্রতি জাতীয় সংসদে তোলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। এর পরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরে প্রস্তাবিত জায়গা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংক্রান্তে চারটি জায়গা চিহ্নিত করে একটি প্রস্তাবনা পাঠায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
প্রস্তাবিত চারটি জায়গা হচ্ছে- ১২ নম্বর ওয়ার্ড সরাইপাড়ার পাহাড়তলীতে অবস্থিত গণপূর্ত অধিদপ্তরের মোট ১৭ একর জায়গা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভাগীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের পাশের্ পরিত্যক্ত গোডাউন। যার পরিমাণ ১৫ একর। এছাড়া সরাইপাড়ার পাহাড়তলীর হাজী ক্যাম্পের জায়গার ৯ একর। বর্তমানে উক্ত জায়গার উপর পরিত্যক্ত অবস্থায় ব্যবহার অযোগ্য ৬/৭টি হাজী ক্যাম্প আছে। একই ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাহাড়তলীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর গুদাম পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা পাঁচ একর জায়গা।
এদিকে, স্বাস্থ্য দপ্তরের চিহ্নিত এসব জায়গা বন্দর-পতেঙ্গা ও হালিশহর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কোন কাজে আসবে না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল সিটি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ও নাগরিক উদ্যোগের উপদেষ্টা মো. ইলিয়াছ পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরাইপাড়া কেন্দ্রিক হাসপাতাল করা হলে এতে পতেঙ্গাবাসীর জন্য কোন কাজেই আসবে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ পুনরায় বিবেচনা নিয়ে জায়গা চিহ্নিত করুক। যাতে নগরীর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ অঞ্চলের এসব মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। বন্দরসহ পতেঙ্গা এলাকায় একাধিক জায়গা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব স্থানে হাসপাতালটি করা হলে এই অঞ্চলের মানুষের কাজে আসবে।’
এদিকে, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন এ বিষয়ে পূর্বকোণকে বলেন, ‘পতেঙ্গা-ইপিজেডসহ এসব এলাকায় লাখ লাখ মানুষের বসবাস। সরকারি হাসপাতাল না থাকায় জরুরি মুহুর্তে এ অঞ্চলের মানুষরা সেবা থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত হচ্ছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন একশ’ শয্যার একটি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া নৌ-বাহিনীর হাসপাতালও রয়েছে। এর বাইরে কোন হাসপাতাল নেই এ অঞ্চলে। কিন্তু দুটি হাসপাতাল বিদ্যমান থাকলেও তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা সেবা ছাড়া বাইরের কোন সাধারণ মানুষ সেবা নেওয়ার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে, হাসপাতালটি স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত জায়গাগুলোর আশপাশেই রয়েছে বেসরকারি একাধিক হাসপাতাল। এরমধ্যে চিহ্নিত জায়গাগুলোর দক্ষিণ অংশেই আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল রয়েছে। যাতে বর্তমানে জেনারেল হাসপাতাল হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া উত্তর পাশেই ইউএসটিসি হাসপাতাল, অলংকার-একেখানে বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া এই স্থান থেকে কাছাকাছি পথেই অবস্থান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। কিন্তু পতেঙ্গা অঞ্চলে হাসপাতালের জায়গা চিহ্নিত না করে এখানে করাটা অনেকটাই বিফল বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ইপিজেড এলাকায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তাদের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়েও ভাবা উচিত। স্বাস্থ্য বিভাগ যে সব জায়গায় হাসপাতালের উদ্যোগ নিয়েছে, তা মোটেও এ অঞ্চলের জন্য কাজে আসবে না। স্বাস্থ্য বিভাগ জায়গা চিহ্নিত করতে না পারলে, আমাদের বলুক। প্রয়োজনে আমি জায়গা দেখিয়ে দেব।’
স্থানীয় কাউন্সিলরা পূর্বকোণকে বলেন, ‘যেখানে প্রয়োজন সেখানে না করে অন্যস্থানে করাটা মোটেও সুখবর নয়। বরং সব কিছুতেই পতেঙ্গা-বন্দর ও হালিশহরের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অঞ্চলে সরকারের বহু খালি জায়গা রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা ছাড়া স্থান চিহ্নিত উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তারা।’
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর কিছু জায়গার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তাই এ স্থানগুলো পরিত্যক্ত বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে পুনরায় আরেকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। তাতে ওই অঞ্চলের আর কোন জায়গা রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট