চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এবার চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ৯

আধিপত্য বিস্তারের জের ­হ ক্যাম্পাস-ছাত্রাবাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ­হ তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩ মার্চ, ২০২০ | ৩:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘদিন থেকে স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগ। সম্প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরসহ নিজেদের মধ্যে মারমারিতে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। দীর্ঘদিন থেকে ক্যাম্পাসে একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বর্তমানে আরেকটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। এ নিয়ে গত এক মাসেই ঘটেছে ছোট-বড় একাধিক ঘটনা।

গতকাল সোমবারও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় গ্রুপের ৯ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে তিনজন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফিরে গেছেন। আহতরা হলেন- মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলতান শাহরিয়ার, দপ্তর সম্পাদক অনির্বান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহীন। এ তিনজন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অন্যরা হলেন- ৫৯তম ব্যাচের আরাফ ইসলাম, ৬০তম ব্যাচের অভিজিৎ দাশ, শামিম আহাম্মদ, ফাহাদুল ইসলাম, ৬১তম ব্যাচের সাজেদুল ইসলাম হৃদয় ও মাশফী জুনাইদ। তারা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

এদিকে, ঘটনার পর থেকেই চমেক ক্যম্পাস ও ছাত্রাবাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ ডা. শামীম হাসান। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, কমিটিকে আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তবে আহতরা আশঙ্কামুক্ত।
পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, দুপুরে ছাত্রাবাস মেরামতের দাবিসহ একাধিক বিষয়ে স্মারক নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে যায় নওফেলের অনুসারীরা। ওই পক্ষটি অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটি ও ছাত্র সংসদের নেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই দুই গ্রুপ মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে কলেজ অধ্যক্ষসহ পুলিশ এসে তাদের ছাত্রভঙ্গ করে দিলেও হাসপাতালের পূর্ব গেটে গিয়ে ফের মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তারা।
নওফেল গ্রুপের অনুসারী অভিজিৎ দাশ পূর্বকোণকে বলেন, ‘ছাত্রাবাসের রুমগুলো মেরামতসহ ছাত্রদের নানা দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেই। কিন্তু অধ্যক্ষের রুম থেকে বের হতেই ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবের নেতৃত্বে ২০/৩০ জন মিলে আমাদের উপর হামলা চালায়। ওই সময় রুম থেকে অধ্যক্ষ নিজে বের হলেও উনার সামনেই আমাদের মারতে থাকেন তারা’। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন থেকেই কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের কমিটি ও ছাত্র সংসদের লোকজন সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতন করে আসছে। এমনকি ক্যাম্পাসেও নানাভাবে তাদের হয়রানি করা হয়। গতকালের ঘটনায় আমাদের পাঁচজন মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এদিকে, এসব বিষয় সত্য নয় দাবি করে চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘কিছু ছাত্রের সাথে বহিরাগতরা এসে কলেজ ক্যাম্পাসসহ ছাত্রাবাসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। তারা ছাত্রাবাসের কয়েকটি রুম দখলে নিয়ে বহিরাগতদের এনে নেশাসহ নানা অসামাজিক কাজ চালাচ্ছে। যার বিষয়ে ইতোপূর্বে ছাত্র সংসদ অধ্যক্ষ বরারব একটি দরখাস্তও দেন। ওই বিষয়ে স্যার তাদের ডেকেছিলেন। কিন্তু তারা বের হওয়ার সময় কলেজের জুনিয়রদের মারধর শুরু করে। খবর পেয়ে সেখানে গেলে আমদের উপরও চড়াও হয় তারা। এতে আমাদের তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে’।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোশিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি ও ছাত্র সংসদও এ অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে কলেজ ক্যম্পাসে সাবেক মেয়র প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর একটি গ্রুপ থাকলেও তারা দীর্ঘদিন থেকেই নিষ্ক্রীয়। তবে সম্প্রতি এই গ্রুপটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর নওফেল অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয়েছে। যার কারণে এর আগেও এমন একাধিক ছোট-বড় ঘটনা ঘটেছে। যদিও ওই সব ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ভেতর মিমাংসা করলেও গতকাল সোমবার দুই গ্রুপই জড়িয়ে পড়েন মারামারিতে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনর্চাজ জহিরুল হক ভূইয়াঁ পূর্বকোণকে বলেন, ‘গতকাল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট