চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাবলিক লাইব্রেরির প্রতি টান কমছে

সময় কাটে ফেসবুক-আড্ডায় ষ বর্তমানে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরির পরিবর্তে রেস্টুরেন্টে গিয়ে আড্ডা দেয় : ড. ইফতেখার উদ্দিন ষ ‘শিক্ষার্থী, বইপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে নতুন কোন পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগ দেখছি না’।

ইমরান বিন ছবুর

২ মার্চ, ২০২০ | ২:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। বর্তমানে এই শহরে শিক্ষার্থী বা বই প্রেমীদের জন্য নেই কোন পাবলিক লাইব্রেরি। কয়েক বছর আগেও যেখানে শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন মহলের লোকজন লালদিঘি এলাকার সিটি কর্পোরেশন লাইব্রেরি ও মুসলিম হলের পাবলিক লাইব্রেরিতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বই পড়ার জন্য বরাদ্দ রাখতেন। বর্তমানে সে সময়টি কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক কিংবা আড্ডা। তবে নগরীর লালদিঘি এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক লাইব্রেরিটি বর্তমানে নির্মাণাধীন। নগরীর লালদিঘি পাড়ের তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি। যেখানে সংরক্ষিত ছিল প্রায় ৪৫ হাজার বই। কয়েকশ বছরের পুরনো ইংরেজি সাহিত্য, কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গেজেটসহ মূল্যবান পত্রিকা ও সাহিত্য সাময়িকীগুলো ছিল এখানে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভবনটিকে নতুনভাবে গড়তেই ভাঙা শুরু হয় পুরাতন লাইব্রেরিটি। এর ফলে বইগুলো স্থানান্তরিত করা হয় বিবিরহাট গরুর বাজারে গড়ে তোলা সিটি কর্পোরেশনের আরবান হেলথ কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায়। তবে পাবলিক লাইব্রেরির কিছুটা হলেও ভূমিকা পালন করছে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নিচে অবস্থিত ‘বাতিঘর’। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিয়মিত বই পড়তে বাতিঘরে আসেন। ফলে প্রতিবছর বাতিঘরের বইয়ের একটি অংশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানান বাতিঘরের উদ্যোক্তা দীপঙ্কর দাশ। এরপরও বই প্রেমীদের স্বার্থে এই ক্ষতি যতটুকু সম্ভব মেনে নেবেন বলে জানান তিনি।

বাতিঘরে আসা আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটির বিবিএ’ ডিপার্টমেন্টের আইরুপ নামের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে জানান, বাসা থেকে বাতিঘরের দূরত্ব বেশি হওয়ায় নিয়মিত আসা হয় না। তবে প্রতিমাসে অন্তত দুই থেকে তিনবার এসে বিভিন্ন বই পড়ি।

তিনি আরো বলেন, কলেজে থাকাকালীন সময়ে সিটি কর্পোরেশনের পাবলিক লাইব্রেরিতে বই পড়তে যেতাম। বিকালের সময়টা ওখানেই কাটাতাম। বাতিঘর ছাড়া তো নগরীর আর কোথাও বই পড়ার স্থান নেই। তাই গত কয়েক বছর ধরে মাসে অন্তত দুই-তিনবার বাতিঘরে বই পড়তে আসি।
বাতিঘরে আরেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে জানান, চট্টগ্রামে ৬০ লাখ মানুষের শহরে বই প্রেমীদের কোন স্থান নেই। কোন শিক্ষার্থী বা বইপ্রেমী কোথাও গিয়ে যে কিছুক্ষণ বই পড়বে সেই সুযোগ নেই। নগরীতে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনর হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থী বা বই প্রেমীদের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে নতুন কোন পাবলিক লাইব্রেরি স্থাপনের উদ্যোগ দেখছি না।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নোট প্রথা চালু হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বই পড়া অনেকটা ছেড়ে দিয়েছে। এরপর এসেছে কোচিং সংস্কৃতি। ফলে কোচিং এ যা পড়াই এর বাইরে কিছুই পড়তে চায় না শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ হচ্ছে ইন্টারনেট সংস্কৃতি। ইন্টারনেটে চার্চ দিলেই অনেক তথ্য হয়তো পাওয়া যায় কিন্তু তা অসম্পূর্ণ। মৌলিক গ্রন্থ পড়ে যে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব, নোট বা ইন্টারনেট ঘেটে তা কখনো অর্জন করা সম্ভব নয়।

লাইব্রেরির স্থান এখন রেস্টুরেন্ট আর ইন্টারনেট দখল করে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিকেল হলেই রেস্টুরেন্টের আশেপাশে যাওয়া যায় না। সব তরুণ-তরুণী। তারা সবাই পড়ার সময় নষ্ট করেই এখানে আসে। আর কিছু আছে সারাক্ষণ মোবাইল ও ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখী বা জ্ঞানমুখী করার জন্য আমাদের কিছু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থী ও বই প্রেমীদের কথা চিন্তা করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও নতুন কোন লাইব্রেরি করার উদ্যোগ নিতে পারে। এছাড়াও জন সাধারণের জন্য নগরীর প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়গুলো সমন্বিতভাবে পাঠাগার করতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সেক্টরকে এগিয়ে আশার আহ্বান জানান চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের এই সাবেক উপাচার্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট