চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুলিশবক্সে বিস্ফোরণ ঢাকার সাথে সাদৃশ্য

সর্বোচ্চ সতর্কতায় পুলিশ বোমা স্থানীয়ভাবে তৈরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ মার্চ, ২০২০ | ৩:০৯ পূর্বাহ্ণ

ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণে নড়চড়ে বসেছে নগর পুলিশ। ফের হামলার আশংকায় নগর পুলিশের সকল স্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছে-গত বছর ঢাকায় দুটি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার ঘটনার সাথে নগরীর দুই নম্বর গেটে পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার অনেকটা মিল রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামত পর্যালোচনা করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ঢাকার ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার করেছিলো।

২০১৯ সালে ঢাকার গুলিস্তান পুলিশ বক্সে বিস্ফোরিত বোমাটি ছিল টাইমার সেট করা। মালিবাগে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনো হয়েছিলো। পল্টন ও খামার বাড়িতে পাওয়া গিয়েছিলো দুই কার্টনভর্তি বোমা। ষোলশহর দুই নম্বর গেট পুলিশ বক্সে কোন পদ্ধতিতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি নগর পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে ‘টাইমার সেট করে বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে’। পুলিশ বক্সের ভেতরে বোমাটি কেউ রেখে গেছে।

এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার বেলা তিনটায় নগর পুলিশ কমিশনার মিলনায়তনে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও এন্টিটেরোরিজম, কাউন্টার টেরোরিজম, পিবিআই ও সিআইডির কর্মকর্তা বৈঠকে ছিলেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। জঙ্গি কিনা বুঝতে পারছিনা তবে নাশকতার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নাশকতা কারা করতে পারে আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। গত শুক্রবার রাতের ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন আহত ও দগ্ধ হন। তারা হলেন-ট্রফিক পুলিশের সার্জেন্ট আরাফাতুর রহমান, সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. আতিক, পথচারী জাহিদ বিন জাহাঙ্গীর, মো. সুমন ও ১০ বছরের এক শিশু। আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

ঘটনার পরপরই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে ঘটনার উৎপত্তিসহ নানা বিষয়ে কথা বলে পুলিশ। পরে রাতেই ঢাকা থেকে পুলিশের দুইটি বিশেষজ্ঞ দল ডেকে পাঠানো হয়। গতকাল সকাল থেকে তারা ঘটনাস্থলে পাওয়া সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেন এবং ঢাকার বোমা বিস্ফোরণের অনুরূপ ঘটনা বলে মত দেন।
অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, কারা এটা করেছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব এখন আমাদের। বোমায় ব্যবহার করা জিআই পাইপ, তার ও চাকার ভেতরের বেয়ারিং পাওয়া গেছে ঘটনাস্থলে। আইইডি ব্যবহার করে খুব সহজেই কাছ থেকে এ ধরনের বোমার বিস্ফোরণ করা যায়। স্থানীয়ভাবেই এসব বোমা ও আইইডি বানানো যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর পুলিশের সব স্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্থানে বোমা বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। ২৬ মে মালিবাগে একই ধরনের বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যসহ দুইজন আহত হন। ২৩ জুলাই রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়িতে দুইটি কার্টনে বোমা পাওয়া যায়। পরে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। আর ৩১ আগস্ট সায়েন্স ল্যাবের মোড়ে বোমা বিস্ফোরণে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের প্রটোকলে থাকা দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এসব ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল আইএস। তবে পুলিশ কমকর্তারা বরাবরই তা নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, দেশীয় দুষ্কৃতকারীরা এ ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকতে পারে।
ঢাকায় সংগঠিত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোকে শুরুতে খুব হালকা ঘটনা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের বিস্ফোরণ বলে মনে করা হলেও পরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদ উদ্দিন রুমি ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মিশুক খান মিজান নামের নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিলো। এদের মধ্যে ফরিদ উদ্দিন রুমি আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষক। মিশুকও একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। এদের মধ্যে ফরিদ উদ্দিন রুমি পল্টনে বোমা রাখার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আর মিশুকের নারায়ণগঞ্জের বাড়ি থেকে তিনটি আইইডি ও একটি খেলনা রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেছেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, সেটা আমরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি। পুরো ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পেতে আরো দুই একদিন সময় লাগবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট