চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নজর কাড়ছে ধূমপানমুক্ত বাড়ি

পূর্বকোণ ডেস্ক

১ মার্চ, ২০২০ | ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

‘এক চাচা ছাড়া আমাদের বাড়িতে আর কেউ ধূমপান করতো না। ধূমপান থেকে মানুষ এক সময় মাদক সেবনে চলে যায়। তাকে বললাম, আপনাকে দেখে ছেলে-মেয়েরা সে পথে যেতে পারে। আপনি ধূমপান ছেড়ে দিলে ভালো হয়। চাচা কয়েকদিন পর জানালেন, তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরই লাগিয়ে দিলাম ধূমপানমুক্ত বাড়ির ফলক।’

কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লার সিটি মেয়রের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাবিবুর রহমান। কুমিল্লা নগরীর কাপ্তান বাজারে গোমতী নদীর তীরে জাহান নগর এলাকায় অবস্থিত তার বাড়ির ব্যতিক্রম নামফলক নজর কেড়েছে সবার। বাড়ির প্রবেশমুখেই নাম ফলকের সাথে লেখা রয়েছে ‘ধূমপানমুক্ত বাড়ি’। হাবিবুর রহমান জানান, ৩০ বছর ধরে তার বাড়ির সদস্যদের কেউ ধূমপান করেন না। শুধু তাই নয়, তাদের বাড়িতে কোনো মেহমান এলেও ধূমপান করেন না। এমনকি এই বাড়িতে পান এবং তামাকপাতাও খাওয়া হয় না।

ধূমপানে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় কেই বা না জানে। তবু দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। পথে-ঘাটে, হোটেল, অফিস-আদালত এমনি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও প্রকাশ্যেই ধূমপান করছে অনেকে। এছাড়া তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন-বিপণন তো আছেই। এসবের মধ্যে কুমিল্লার এই ধূমপানমুক্ত বাড়ি যেন আলো ছড়াচ্ছে নতুন সম্ভাবনার। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে বাড়িটি।
বাড়িটির মূল নাম ‘রহমান ভিলা’। হাবিবুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়ির মালিক তার পিতা প্রয়াত খলিলুর রহমান ছিলেন একজন ধূমপায়ী। শেষে ধূমপানের কারণে তিনি ভয়াবহ টিবি রোগে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর সুস্থ হয়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ত্যাগ করেন এবং পরিবারের অন্যদের এ সম্পর্কে সচেতন করেন। শুধু ধূমপান নয়, পারিবারিকভাবে ইভ টিজিংসহ সামাজিক অনাচারগুলো থেকে পরিবারের সদস্যদের দূরে রাখার জন্য তার পিতা চেষ্টা করতেন বলে জানান হাবিবুর রহমানের। খলিলুর রহমানের ছয় ছেলের মধ্যে হাবিবুর রহমান সবচেয়ে বড়। বাকিরা হলেন রফিজুর রহমান, জামিলুর রহমান, আবদুর রহমান, আনিসুর রহমান ও আফতাবুর রহমান। সবাই চাকরি ও ব্যবসায় জড়িত। হাবিবুর রহমান জানান তার এক ছেলে ও এক মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। তারাও ধূমপান করেন না।

পরিবারের তরুণ প্রজন্মও ঐক্যবদ্ধ ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবন না করার পক্ষে। হাবিবুর রহমানের ভাতিজা কুমিল্লা পলিটেকনিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসিফুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই বড়রা আমাদেরকে ধূমপান ও তামাকজাত পন্য সেবনের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করতো, পাশাপাশি এগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য নির্দেশ দিতো। এখন আমরা নিজেরাই এই বিষয়ে সচেতন এবং আমাদের বন্ধুদের পরামর্শ প্রদান করি। ৬০ জন সদস্য নিয়ে খলিলুর রহমানের পরিবার আকারে বড় হলেও এখনো টিকে আছে একান্নবর্তী হিসেবে। আছে ভাতৃত্ব্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মেলবন্ধন। সব মিলিয়ে এই বাড়ি অনুপ্রাণিত করছে আশেপাশের অসংখ্য পরিবারকে। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিভাগে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা। ইপসার উপ পরিচালক নাছিম বানু বলেন, ‘ব্যক্তিগত সচেতনতা থেকে এমন একটি উদ্যোগ সত্যিকার অর্থেই প্রশংসনীয়। প্রতিটি ঘর ধূমপানমুক্ত হলে, দেশের প্রতিটি নাগরিকই ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে ঘরে ঘরে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমানের সপ্ন অনেক দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে আশা রাখি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট