চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘বিতর্কিতরা’ ফের ভোটের মাঠে

প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব : সুজন

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কিশোর গ্যাং লিডার খ্যাত যুবলীগ নেতা নূর মোস্তাফা টিনু। র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও খুনখারাবিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। কারাগার থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানান তার ঘনিষ্টজনেরা।

৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন যুবলীগ নেতা মো. এসরারুল হক এসরাল। শুদ্ধি অভিযানের পর আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। তার অনুসারীদের দাবি, এসরালের বিরুদ্ধে মামলা না থাকলেও কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে দলের একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছেন তিনি।

শুধু টিনু আর এসরাল নন, চসিক নির্বাচনে ভোটের মাঠে রয়েছেন দলের বিতর্কিত অনেকেই। নানা অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি ‘বিতর্কিত’ ১৪ কাউন্সিলর। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুনখারাবি, ক্ষমতার অপব্যবহার, পাহাড় ও জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। বিতর্কিত এসব কাউন্সিলরের মধ্যে ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়াও বিতর্কিত আরও কয়েকজন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রার্থীদের ভেতরের-বাইরের সব ধরনের খবর প্রকাশ্যে প্রদর্শনের জন্য সুজন দাবি করে আসছে। আমাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রার্থীদের হলফনামা প্রদর্শন করার। এর মাধ্যমে ভোটার ও জনগণ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিতে সহজ হয়। কিন্তু কমিশন এই উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অপকর্ম ও বিতর্কিত ১৪ জন কাউন্সিলরকে দলীয় সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। কয়েক জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরী বাবুকে সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী উপজেলার যুবলীগকর্মী নূরে এলাহীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী মো. শফিউল আজিমকে প্রার্থী ষোষণা করেছে আ. লীগ। দলীয় সমর্থন না পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি।

১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সাবের আহমদকে সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মহিউদ্দিন সোহেল হত্যার অভিযোগ রয়েছে। দল প্রার্থী দিয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিনকে। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবের আহমদ। গতকাল সাবের আহমদ ও নুরুল আমিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ড সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও পাহাড় দখলসহ নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত জনপদ। আওয়ামী লীগ রাজনীতিতেও ঘটনাবহুল এলাকা। নানা অভিযোগে বর্তমান কাউন্সিলর কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিককে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে পাহাড় দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। দল প্রার্থী দিয়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবুল হাসনাত মো. বেলালকে। মানিক ও বেলাল ছাড়াও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দিদারুল আলম মাসুম। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে এসেছেন মাসুম। তার বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত হত্যার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
২নং জালালবাদ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবুকে দলীয় সমর্থন দেয়নি আ. লীগ। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে নগর যুবলীগের সদস্য মো. ইব্রাহীমকে।

৯নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমকে সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা ও পাহাড় দখলের অভিযোগ রয়েছে। এখানে প্রার্থী করা হয়েছে পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আবছার মিয়াকে। মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জহিরুল আলম জসিম।

২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদের কাউন্সিলর এইচ এম সোহেলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় দলীয় সমর্থন পায়নি। দলের প্রার্থী করা হয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরীকে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে খ্যাত। ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনায় অতিষ্ঠ এই এলাকার মানুষ।

২৮ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তাকে বাদ দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাহাদুরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় সমর্থন না পেলেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আবদুল কাদের।
এছাড়াও নানা অভিযোগ আর বিতর্কের কারণে ১১নং দক্ষিণ কাট্টলি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোরশেদ আকতার চৌধুরী, ২৫ নং রামপুরা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এস এম এরশাদুল্লাহ, ৩০ নং পূর্ব মাদারবাড়ি মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩ নং ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. জয়নাল আবেদীনকে দলীয় সমর্থন দেয়নি। দলীয় সমর্থন না পেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এসব প্রার্থী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট