চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘জগাখিচুড়ি’ স্টেশন রোড এলাকা
‘জগাখিচুড়ি’ স্টেশন রোড এলাকা

‘জগাখিচুড়ি’ স্টেশন রোড এলাকা

আয়তন: ১ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা: ৬০ হাজার ভোটার: ১৫ হাজার ৩শ জন

আল-আমিন সিকদার

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে এই স্টেশনে। কেউ আসছেন কেউ বা ছাড়ছেন চট্টগ্রাম। বটতলীর চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন যে ওয়ার্ডে পড়েছে সেটির নাম ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ড। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই স্টেশনে নেমে যাত্রীরা প্রথম দর্শনে যে চট্টগ্রাম দেখেন সেটি আমাদের জন্য হতাশাজনক।

স্টেশনে নির্ধারিত পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে দাঁড়াতে রাজি নয় সিএনজি ট্যাক্সিগুলো। এলোপাতাড়িভাবে রাস্তায় গাড়ি রেখে যাত্রী ডাকতেই ব্যস্ত তারা। স্টেশন থেকে মূল সড়কের পাশে আসলেতো আরও ভয়াবহ অবস্থা। পথচারীদের হাঁটা চলার পথটি দখল করে বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন হকাররা। শুধু কি তাই এই ওয়ার্ডের আরেক ভোগান্তির নাম ফলমণ্ডি ও রিয়াজউদ্দিন বাজার।
রিয়াজউদ্দিন বাজারকে বলা হয়ে থাকে একের ভিতর সব। কারণ, এই বাজারে নেই এমন কোন পণ্য চট্টগ্রামেই খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পাইকারি থেকে খুচরা ক্রেতাদের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা রাখছেন এখানকার আড়তদার- ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই সুযোগ গ্রহণ করতে গিয়ে যানজটে দিশাহারা হয়ে পড়তে হয় নগরবাসীকে। শুধু রিয়াজউদ্দিন বাজারই নয়, ফলমণ্ডির সামনেও থমকে যায় সকল গাড়ির চাকা। এত বড় দুটি বাজারের নির্ধারিত পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট হয় যানজটের।

শুধু যানজটই নয়, এই দুটি বাজার থেকে ফেলা আবর্জনা অপসারণ করতেও হিমশিম খেতে হয় সিটি কর্পোরেশনকে।
এক কিলোমিটারেরও কম আয়তনের এই ওয়ার্ডটিতে রয়েছে সদরঘাট নতুন লাইটার জেটি, রেলওয়ে সাইরেন কারখানা, বিআরটিসি বাস কাউন্টার ও চৈতন্যগলি ২২ মহল্লা কবরস্থান। একসময় ২২টি মহল্লার ‘মহল্লা কমিটি’ মৃত ব্যক্তিদের দাফন সম্পন্ন করতে এই কবরস্থান নির্মাণ করেন। অভিযোগ রয়েছে, এইসব স্থানের সামনেও দোকান বসিয়ে চাঁদা তুলছে একটি চক্র।
শুধু চাঁদাবাজিই নয়, স্থানীয়দের অভিযোগ এলাকায় নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ হয় না, রয়েছে সুপেয় পানির সংকট আর মাদকের বিস্তার। ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের বেহাল দশার চিত্রতো আছেই।
রকিব চৌধুরী নামে স্থায়ী এক বাসিন্দা পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের নজরুল ইসলাম রোডের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া নালা-নর্দমা অপরিষ্কার থাকার কারণে মশার উপদ্রব খুবই বেশি। নিয়মিত অপসারণ করা হয় না আবর্জনা। ভবিষ্যৎ কাউন্সিলরের কাছে আমরা এসব সমস্যার সমাধান চাই’।

জাওয়াদ হোসেন নামে অন্য এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের বেহাল দশা। বিগত ৩-৪ বছর ধরে আমাদের এই রোডে কোনো সংস্কার করা হয়নি। বিকাল হলে যানজটের কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলমণ্ডিতে আর রিয়াজউদ্দীন বাজারেতো যানজট লেগেই থাকে। আর ধূলা-বালির কারণে আমরা রাস্তায় হাটতে পারি না। এছাড়া সদরঘাট বন্দর জেটিতে ময়লা আর আবর্জনার খুব বেশি সমস্যা। আমারা চাই যানজট ও আবর্জনামুক্ত ওয়ার্ড গড়তে ভবিষ্যৎ কাউন্সিলর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন’।
চাঁদাবাজি, সড়কের বেহাল দশা আর আবর্জনা সরাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। তিনি আবর্জনা ও রাস্তা ভাঙার বিষয়টি স্বীকার করলেও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে না বলে মন্তব্য করেছেন।
ফুটপাত কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও মাদক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে কিছু মাস্তান চাঁদাবাজি করতো যা আমি কাউন্সিলর আমার জানা মতে এখন এলাকায় চাঁদাবাজি হয় না। এই ধরণের কোনো আভিযোগ আমি এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে বিভিন্ন হকার সংগঠন তাদের সাংগঠনিক প্রয়োজনে চাঁদা নিয়ে থাকে। তবে মাদকের কিছু প্রভাব রিয়াজউদ্দীন বাজার এলাকায় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর সেখান থেকে অনেক মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং মাদকের প্রভাব অনেকটাই কমে এসেছে। আর এই রকম কোনো আভিযোগ পেলে আমরা সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করি। এমন কি বেশ কিছু মাদক দ্রব্য আমি ধরিয়ে দিয়েছি, বেশ কয়েকটি মামলার সাক্ষীও আমি দিয়েছি’।

গতবারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে তিনি বলেছিলেন এলাকাবাসীর জন্যে সুপেয় পানি নিশ্চিত করবেন। জানতে চেয়েছিলাম প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন তিনি । উত্তরে তিনি বলেন, ‘পানির যে সংকট আগে ছিল তার অনেকটাই কমে এসেছে, তবে রিয়াজউদ্দীন বাজারে, স্টেশন রোডে সুপেয় পানির কিছু সংকট রয়েছে। আর সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে ওয়াসার কিছু কাজ চলমান রয়েছে, যা ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই কাজটি সম্পন্ন হলে আশা করছি পানির সংকট আর থাকবে না’।

বিগত বছরগুলোতে তার উন্নয়ন কর্মকা- সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৮ কোটি টাকার বরাদ্দ আমি পেয়েছি। যার মধ্যে স্টেশন রোডসহ ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৯টি রোড, ফলমণ্ডি থেকে স্টেশন রোডের নতুন ড্রেন নির্মাণে ১৪ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আর সদরঘাট সড়কের সংস্কার এবং কবি নজরুল ইসলাম রোডের ড্রেনের নির্মাণে প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে’।
এদিকে বর্তমান কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সমর্থন দেয়নি দল। তবে সমর্থন না পেলেও নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন এই কাউন্সিলর। অন্যদিকে দলের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে লড়াই করবেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুস সালাম মাসুম। তার বিপক্ষে বিএনপির হয়ে লড়াই করবেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আলকরণ ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর দিদারুল রহমান লাভু।

আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া প্রার্থী মো. আব্দুস সালাম মাসুম নির্বাচিত হলে, নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ করা, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, এলাকার সুপেয় পানির আভাব মেটাতে ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে কাজ করা ও মাদক নির্মূলে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং রিয়াজউদ্দীন বাজারকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে চান, যাতে ব্যবসায়ীরা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারেন। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে চান তিনি।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দিদারুল রহমান লাভু প্রাধান্য দিয়েছেন, মাদকমুক্ত সমাজ গড়া, জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা এবং সিটি কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন ফি কমানোর বিষয়ে। এর পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ডের ব্যবসায়ীদের সমস্যার সমাধানে কাজ করতে চান। এছাড়া আলকরণ ওয়ার্ডকে ডিজিটাল করতে নিজ উদ্যোগে প্রত্যেক এলাকায় ওয়াই-ফাই সেবা পৌঁছে দিতে চান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট