চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাতুনগঞ্জের মটরশুঁটি ভারতে পাচার
খাতুনগঞ্জের মটরশুঁটি ভারতে পাচার

খাতুনগঞ্জের মটরশুঁটি ভারতে পাচার

দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় ফেনী ও রাঙামাটির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জড়িত

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:১৭ পূর্বাহ্ণ

ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে মটরশুঁটি পাচার হচ্ছে ভারতে। খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি মটরশুঁটির দাম ৩৪ টাকা। আর ভারতে ৪৫-৫০ রুপি। দামের তারতম্য ও অধিক লাভের কারণে ফেনী ও রাঙামাটি সীমান্ত পথে পাচার হচ্ছে পুষ্টিসমৃদ্ধ এই খাদ্যপণ্য। খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া যায়। গত কয়েকদিন আগে ভারত ঘুরে এসেছেন চাক্তাই ডাল ব্যবসায়ী অজয় দত্ত। তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে মটরশুঁটির ব্যবহার বেশি। সকাল ও বিকেলে দুই বেলায় নাস্তায় মটরশুঁটির ব্যবহার হয়। চাহিদা বেশি থাকলেও ভারতে মটরশুঁটি আমদানি সীমিত করে দিয়েছে দেশটির সরকার।

তাই ভারতে ব্যাপকভাবে মটরশুঁটি আমদানি সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ভারতের কলকাতার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মটরশুঁটির দাম বাজারভেদে ৪৫-৫০ রুপি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৪-৬০ টাকা। আর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৩১-৩২ টাকা। বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার বাজারে দামের তারতম্য প্রায় দ্বিগুণ। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানায়, ফেনী ও রাঙামাটির বিভিন্ন সীমান্তপথ দিয়ে ভারতে মটরশুঁটি পাচার হচ্ছে। ওই দুই জেলার একাধিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশলে তা পাচার করছে। সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে পাচার করা হচ্ছে দানাদার এই খাদ্যশস্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী ও রাঙামাটির ওপারে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্য। চোরাইপথে মটরশুঁটি পাচার হচ্ছে ওই দুই রাজ্যে। সেই দুই রাজ্য থেকে যাচ্ছে কলকাতায়। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মহিউদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফেনী ও রাঙামাটি জেলার ডাল, মটরশুঁটির চাহিদা বেড়েছে। তবে ভারতে পাচারের বিষয়টি জানা নেই। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন রাঙামাটিতে অন্তত ৭ ট্রাক ও ফেনীতে ১৩ ট্রাক মটরশুঁটি নিয়ে যাচ্ছে সেখানকার ব্যবসায়ীরা। প্রতিট্রাকে রাঙামাটিতে ২০ টন ও ফেনীতে ১৩ টন করে মটরশুঁটি যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই খাদ্যশস্যটির উৎপাদন সংকট থাকায় রাশিয়া ও কানাডা থেকে মটরশুঁটি আমদানি করা হয়। কিন্তু ভারতে পুষ্টিসমৃদ্ধ এই খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন ভালো। দেশি উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার ও কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য আমদানি সীমিত করে দিয়েছে ভারত সরকার। রয়টার্স ও দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ভারত বিশ্বের শীর্ষ ডালভোক্তা দেশ। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ্যপণ্যটিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে ভোগ্যপণ্যটির আমদানি সীমিতকরণে নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটির সরকার। এতে কয়েক বছর ধরে দেশটিতে পণ্যটির আমদানি ক্রমে কমছে। আমদানি করে আসায় অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যটির দামে চাঙ্গাভাব ফিরছে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমার ও রাশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি ডাল আমদানি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ভারতে মটরশুঁটি আমদানি কমে আসায় দামেও চাঙ্গাভাব। বাংলাদেশের বাজারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। এই সুযোগে পাচারকারী চক্র কৌশলে খাতুনগঞ্জ থেকে নিয়ে ভারতে পাচার করেছে এই খাদ্যশস্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট