বই প্রেমীদের পদচারণায় মুখর শেষ মুহূর্তের বইমেলা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই বইপ্রেমী দর্শনার্থীর আনাগোনায় ছিল মেলায়। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে দ্বিতীয় বছরের মতো চলছে অমর একুশে বইমেলা।
বিকেল থেকেই বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড় ও বিক্রি। আজই শেষ হচ্ছে প্রাণের এই বইমেলা। তাই শেষ মুহূর্তে অনেকে বই কিনছে আর উপহার দিচ্ছে একে অন্যকে। কেউ আবার ঘরে থাকা প্রিয় মানুষটিকে উপহার দিবেন, তাই বই কিনছেন। শিশুদের হাতেও দেখা যায় নানারকম বইয়ের ব্যাগ। নতুন বইয়ের ব্যাগ হাতে এমন দৃশ্য শুধু বইমেলাতে নয়, নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। মেলা জুড়ে ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়, সেই ভিড়ে হাঁটার জায়গা ছিল কম। শুধু দর্শনার্থীদের ভিড়ই নয়, ছিল নবীন-প্রবীণ লেখকদেরও আনাগোনা। আড্ডা-গল্প, বই বিক্রির মাঝে মাঝে নিজেদের প্রকাশিত বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন অনেক লেখক। ভিড় উপেক্ষা করে পাঠকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে নিচ্ছেন প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ।
বইমেলায় সবরকম বই বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রেতারা জানান, শিশুদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বড়দের উপন্যাস, সাইন্সফিকশন ও মুক্তিযুদ্ধের বইও সমানতালে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল জিমনেশিয়ান চত্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার প্রতিটি স্টলে দিনভর ছিল উপচে পড়া ভিড়। এই ভিড়ে দেখা গেলো কিছু পাঠককে অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনীর সামনে দাঁড়িয়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদ’র বই খুঁজছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থী ফাইমা আকতার মুক্তা কাছ থেকে পছন্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রিয় মানুষকে উপহার দেবো। তাঁর প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোনো নতুন বই খুঁজে পাচ্ছি না।’
শৈলী প্রকাশনীর স্টলের সামনে দেখা যায় এক ঝাঁক পাঠক-লেখক দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভিড় সরিয়ে ভেতরে যেতেই দেখা যায় লেখকের আড্ডা। বসে বসে নিজেদের প্রকাশিত বইয়ে দিচ্ছেন অটোগ্রাফ। আর নিজেরা নিজেদের মধ্যে খোশ গল্প করে মেতে আছেন। কথা হয় লেখক কামরুল হাসান বাদল, রওশন ঋমু ও সোহেল তানভির নিহালের সাথে। কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘মুক্তির প্রবক্তা শেখ মুজিব’ এটি আমার এবারে নতুন বই। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে বইটি। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের অনেক বেশি বই লেখা, ও গবেষণা করা উচিৎ। আমার বইটি প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ৯ দিন হল। এর মধ্যে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি।’
ভাষার মাস উপলক্ষে ২০ দিনের এ ‘অমর একুশে বইমেলার’ বেচা-বিক্রি সম্পর্কে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপ-সচিব ও মেলা কমিটির সমন্বয়ক মো. আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু) বলেন, ‘দেখতে দেখতে অমর একুশে বইমেলা একেবারে শেষের দিকে চলে এসেছে। ২০ দিনের মেলায় গতকাল ছিল ১৯ দিন। তাই বিক্রি সম্পর্কে এখনো সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব নয়। তবে গতবারের তুলনায় এবার বিক্রি কম হয়েছে। এর কারণ এসএসসি পরীক্ষা ও খুব অল্প সংখ্যক বই প্রকাশিত হওয়া হতে পারে। তবে বড়দের চেয়ে ছোটদের বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। আর বিক্রিও বেশি হয়েছে শিশুদের বই।’