চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

উৎসবে মনোনয়ন দাখিল

চসিক নির্বাচন হ মেয়র পদে ৯টি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৮টি, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২০টি মনোনয়নপত্র দাখিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিল। মেয়র পদে ১১টি মনোনয়ন বিতরণ করা হয়েছে। নয়টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ। জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা এম এ মতিন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী ও মো. তানজির আবেদীন। সকাল ১০টা থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা কর্মী-সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে আসেন। নির্বাচন কার্যালয়ের দুটি ফটকে কড়া অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রার্থীর সঙ্গে ৫ জন সমর্থক নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন জমা দেন বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, মেয়র পদে ১১টি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৪১ টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। জমা দিয়েছেন মেয়র পদে ৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দলীয় নেতাদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। আর ২টার দিকে আসেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। দুই প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম.এ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ।

দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আ. লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চট্টগ্রামবাসীর সেবা করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। চট্টগ্রামে প্রথম উন্নয়নের দাবিতে ১৯৮৩ সালে নাগরিক পরিষদ গঠন করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ চলতে গিয়ে নেত্রী আমাকের মূল্যায়ন করেছেন। জনগণের উপর আমার আস্থা আছে। জনগণের হৃদয় আমি জয় করতে পেরেছি। তাই আমি বিজয়ী হবো, এটা বলতে পারি’।
নির্বাচিত হতে পারলে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে উন্নয়ন করতে চাই। কোনো ব্যক্তি, রাষ্ট্র এককভাবে নগর গড়ে তুলতে পারে না। সকল পেশার মানুষ, বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে স্বপ্নের চট্টগ্রাম গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন রয়েছেন। মহিউদ্দিন ভাইয়ের চিন্তা-ভাবনা এবং বর্তমানের মেয়রের পরিকল্পনা ও চলমান প্রকল্প এগুলোকে বেগবান করবো। পূর্ব মেয়রদের ধারাবারিক রক্ষা করে চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব, মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত সুস্থ চট্টগ্রাম গড়ে তুলব।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে সৌন্দর্য্যরে রাণী বলা হতো। পাহাড় কেটে চট্টগ্রামকে বিবর্ণ-বিধ্বস্ত করা হয়েছে। দখল আর ভরাটে মরে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী । কর্ণফুলী মরে গেলে বন্দর ধ্বংস হয়ে যাবে। কর্ণফুলী এবং চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবো।
বিএনপির প্রার্থী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুধু অভিযোগ, সমালোচনা করে আসছে। ভালো কাজগুলো দেখে না। কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে, পদ্ম সেতু হচ্ছে-এগুলো নিয়ে তো অভিযোগ শুনিনি। ইভিএমের বিরুদ্ধেও সমালোচনা করেছে। সব সময় সমালোচনা লেগে থাকে’।
বিপুল নেতাকর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমাদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ৫ জন নিয়ে জমা দিয়েছি। অন্যরা কাউন্সিলরদের সঙ্গে এসেছেন। এগুলো আমার দোষ না, আমাদের নেতৃবৃন্দের দোষ না’।
বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে আলম শামীম, প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট বদরুল খায়ের, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি-সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

ডা. শাহাদাত বলেন, ‘সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র, ইসি ও আওয়ামী লীগ মিশে একাকার হয়ে গেছে। ইসিকে বের হয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচনে মানুষ ভোটকন্দ্রবিমুখ হয়ে গেছে। মানুষকে ভোটমুখী করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করবে ইসি। ইভিএমে ব্যালট প্যানেলের সুরক্ষার দাবি করে তিনি বলেন, ইভিএমে যেন কোন দলীয় লোক বসে যাতে ভোট জালিয়াতি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বুথে সরকারদলীয় লোকজন বসে থাকে। বহিরাগতরা পাহারা দেয়। এজন্য এনআইডি দেখে দেখে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ঢোকানোর দাবি করেছেন তিনি।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েনের দাবি করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘একটিমাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রতিটি বুথে একজন করে সেনাবাহিনীর সদস্য নিয়োগ করতে হবে। যাতে ভোটার ও পোলিং এজেন্টদের সুরক্ষা রক্ষা হয়। এতে জনগণ ভোটমুখী হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। অন্যথায় ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হারিয়ে যাবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চট্টগ্রামকে সুন্দর, হেলদি-স্মার্ট সিটি ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার আশা নিয়ে নির্বাচন করছি। আশা করছি, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।

নির্বাচনে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের উপ-নির্বাচন ও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখেছি, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বা নৌকার প্রার্থী হলে সাত খুন মাফ হয়ে যায়। লালদিঘি হোক বা রেল স্টেশন হোক-সংবর্ধনার অভাব হয় না। নৌকার প্রার্থী মানেই অবধারিত বিজয়। সেই কনসেপ্ট থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় জনগণ ভোটকেন্দ্রমুখী হবে না। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের জন্য এক আইন, সরকার দলের জন্য অন্য আইন সেটা চলবে না।
ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি করেছেন বিএনপি পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘২৯ মার্চ হচ্ছে নির্বাচন। কিন্তু এর আগে ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ-তিনদিন বন্ধ। লম্বা ছুটিতে মানুষ যদি দেশ-বিদেশে বেড়াতে চলে যায় আর ভোটকেন্দ্রে আসবে না। এজন্য ২৯ মার্চের পরিবর্তন করে ৩১ মার্চ করার দাবি করেছেন তিনি। ভোটারদের ভোটমুখী করার চিন্তা থাকলে ৩১ মার্চ ভোটের দিন ধার্য্য করতে হবে। কারণ ছুটির জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনে ভোট কম পড়েছে বলে সবাই স্বীকার করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট