চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সড়কে ট্রাক-লরি ফুটপাতে হকার
সড়কে ট্রাক-লরি ফুটপাতে হকার

সড়কে ট্রাক-লরি ফুটপাতে হকার

আয়তন: ০.৪২ বর্গ মাইল জনসংখ্যা: ১ লাখ ৩ হাজার ভোটার: ২৯ হাজার ৬৯৭ জন।

আল-আমিন সিকদার

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:১১ পূর্বাহ্ণ

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় চট্টগ্রামের মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হল চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ও সরকারি গার্লস স্কুল এবং চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ। খ্যাতনামা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩০নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে অবস্থিত। শুধু তাই নয়, জাতি গড়ার কারিগর যে শিক্ষক তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিউটটিটিও এই ওয়ার্ডেই পড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই ওয়ার্ডে ইসলামিয়া কলেজ ও পূর্ব মাদারবাড়ী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ সর্বমোট প্রায় ৩শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যানজটের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, এখানকার স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবন-যাপনও অতিষ্ঠ করে তুলেছে এ যানজট।
পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডেই রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম জেটি সদরঘাট। রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র স্থায়ী জেটি ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানের সামনেই এখন অবাধে পার্ক করে রাখা হয় মালবাহি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান। এর পাশেই রয়েছে শহরের অঘোষিত বড় ট্রাক স্ট্যান্ড মাঝিরঘাট।

নিয়ম অনুযায়ী, গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা ও পথচারীদের ব্যবহারের জন্য ফুটপাত থাকলেও এই ওয়ার্ডে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এখানে বেশিরভাগ রাস্তাই ট্রাক-লরি’র দখলে। অন্যদিকে ফুটপাত চলে গেছে অস্থায়ী ও ভাসমান দোকানের দখলে। যার কারণে যানজট এই ওয়ার্ডের জনগণের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে।
শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডের বেশ কিছু রাস্তা রয়েছে বেহাল দশায়। কিছু ব্রিজ ও কালভার্টে কয়েক বছর ধরে নির্মাণ কাজ চললেও নেই দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। আর এর সাথে রয়েছে মাদক-সন্ত্রাসের সমস্যা এমনটাই অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর।
ওয়ার্ডের দারোগার রোড এলাকার বাসিন্দা মো. আবু তাহের এলাকার নানান সমস্যার কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় রাস্তা-ঘাটের সমস্যা রয়েছে, ওয়াসার খোঁড়খুঁড়ির কারণে রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। আরা আমাদের ওয়ার্ডে মাদকের বিস্তার রয়েছে। ইদানিং মাদক খুব বেশি ছড়িয়ে গেছে। আমরা মাদক নির্মূলের পাশাপাশি ভবিষৎ কাউন্সিলরের কাছে এসব সমস্যার সমাধান চাই’।

একই এলাকার বাসিন্দা মো. খোকন বলেন, ‘আমাদের এলাকার ভাঙ্গা রোডের কারণে যাতায়তে খুব সমস্যা হয়। অনেক দিন ধরে বেহাল দশায় রোডগুলো পড়ে আছে। আর নালা-নর্দমা বেশ কিছু কাজ চলমান রয়েছে, তাই আমরা সাময়িক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি। যানজটের কারণে খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমি চাই এমন একজন কাউন্সিলর আসবেন যিনি আমাদের এই সমস্যার সমাধান করে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন।’
এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছি যানজট ও ফুটপাতের দখল বাণিজ্যের বিষয়ে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সদরঘাট লাইটার জেটি থেকে পণ্য আনা নেয়ার জন্য ট্রাক ও লরিগুলো মোড়ের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বিষয়ে আমি ট্রাফিক বিভাগের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। তারা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে, কখনো এই যানজট তারা নিরসন করতে সক্ষম হয় আবার কখনো এই বিষয়ে সমাধান দেয়া সম্ভব হয় না। আর বেশ কিছু রাস্তায় সংস্কার কাজ চলার কারণেও যানজটের সমস্যা হচ্ছে’।
সড়কের বেহাল দশার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় রাস্তার অবস্থা ভালো ছিল। তবে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি এবং মাত্রাতরিক্ত ওজনের মালবাহী গাড়ি চলাচলের কারণে এই সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ওয়াসা, সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণেও সড়ক বার বার কাটা হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তি বাড়ছে’।

মাদক নির্মূলে তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক নির্মূলে বরিশাল কলোনি, বাস্তহারা বস্তি ও মাইল্যা বিলসহ মাদকের বিভিন্ন আখড়া উচ্ছেদ করেছি। এর পাশাপাশি এলাকায় মাদক বিরোধী জনসভা এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজও করেছি। বর্তমানে আমার ওয়ার্ডে মাদক নেই বললেই চলে’।
প্রশ্ন করেছিলাম বিগত সময়ে তিনি ওয়ার্ডের উন্নয়নে কি কি করেছেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘৪১টি প্রকল্পে ২০কোটি ৬৩লাখ ৬৪ হাজার টাকার কাজ শেষ করেছি। যার মধ্যে ৪১টি রোডের সংস্কার, ২টি কালভার্টের নির্মাণ কাজ, মালিবিল থেকে নাজিম উদ্দীন রোডের পাশে ১৫শ ফুট দীর্ঘ নতুন নালা, পূর্ব মাদারবাড়ী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবণ নির্মাণ করেছি। আর ২টি ব্রিজ ও ২টি রাস্তা সংস্কারের কাজসহ ৯টি প্রকল্পে ৩২কোটি ৪৩ লাখ টাকার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে’।

এদিকে আওয়ামী লীগের সমর্থন হারালেও নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী। তবে এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে মাঠে লড়াইয়ের সমর্থন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ চৌধুরী। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আতাউল্লাহ চৌধুরী। নির্বাচিত হলে এলাকার সন্ত্রাস-মাদক ও ছিনতাই সমস্যার সমাধান করা, আবর্জনা অপসারণ ব্যবস্থাকে গতিশীল করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে এলাকার গরীব ও অবহেলিতদের দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে একটি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। তিনি চান ওয়ার্ডকে একটি আদর্শ ওয়ার্ডে পরিণত করে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
বিএনপির হয়ে লড়াই করবেন সদরঘাট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান। মনোনয়ন পাওয়ায় প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন তিনি। নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে তিনি বেশ কিছু বিষয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। যার মধ্যে-এলাকার প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে অবৈধ পার্কিং বন্ধ ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ, মাদক নির্মূলে এলাকাবাসী ও মহল্লা কমিটিকে সাথে নিয়ে কাজ করা, জলাবদ্ধতা নিরসণে ঐতিহ্যবাহী মনোয়ার খাল খননে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে মিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি এলাকার খেলাধূলার প্রসারে নিজ উদ্যোগে কলেজিয়েট স্কুলের মাঠ সংস্কারের কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট