চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাউজানে ‘ছাদেক্যার মা’র পুলে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই

পুরনো মোড়কে নতুন আতংক

জাহেদুল আলম হ রাউজান

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

‘ছাদেক্যার মা’র পুল’। এটি রাউজান টু নোয়াপাড়া সড়কের বিনাজুরী ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ব্রিজের নাম। এটিকে মানুষ এলাকা হিসেবে চেনে। ব্রিজটির পাশেই রাউজান পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বশেষ সীমান্ত ছিটিয়াপাড়া এলাকা। একসময় ‘ছাদেক্যার মা’র পুল এলাকাটিতে অধিকহারে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণে বেশ আতংকের নাম ছিল স্থানটি। মাঝখানে একাধারে অনেকবছর উপজেলায় অপরাধ প্রবণতা কমে যাওয়ায় ‘ছাদেক্যার মা’র পুলটি আলোচনার আড়ালে চলে যায়। তবে গত মাসখানেক থেকে এ স্থানে বেড়ে গেছে গণছিনতাইয়ের ঘটনা। ফলে ‘ছাদেক্যার মা’র পুল এখন উপজেলাবাসীর জন্য পুরনো মোড়কে নতুন এক আতংকের নাম। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে রাউজান-নোয়াপাড়া সড়কের এই ‘ছাদেক্যার মা’র পুল এলাকা দিয়ে বিয়ের যাত্রীরা গাড়িযোগে ফেরার পথে সড়কে কাঠের গুঁড়ি ফেলে আটক দুর্বত্তরা। এসময় ১০-১২ জন নারী পুরুষের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইলসহ মূল্যেমান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নেয়। ছিনতাইকারীরা গাড়ির আরোহীদের বেঁধে এবং মারধর করে এ ঘটনা ঘটান। আক্রান্তরা পরে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর ছিটিয়াপাড়া হাসমত আলী

চৌধুরীর বাড়ি ও পাশবর্তী বাড়িতে এসে শোর চিৎকার করলে লোকজন ফোন করে রাউজান থানার ওসিকে বিষয়টি জানান। এরপর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
স্থানীয়রা আরো জানায়, ওইদিন রাতে শুধু ১০-১২ জন যাত্রীই নয়, আরো ৮-১০টি যানবাহন আটক করে যাত্রীদের সর্বস্ব ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা।
আরো এক সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারী গভীর রাতে একইস্থানে

রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে এক মাদ্রাসা শিক্ষকসহ তিনজনকে মারধর করে সর্বস্ব ছিনতাই করে নেয়। ছিনতাই ও মারধরের শিকার পূর্ব গুজরা মোহাম্মদীয়া মাদরাসার আরবী শিক্ষক মাওলানা সালামত উল্লাহ রেজা কাদেরী বলেন, ‘আমি পূর্ব গুজরা বড় ঠাকুপাড়াস্থ শেখ আনছার আলী শাহ (র.)’র ওরশে মাহফিল শেষ করে ভাড়ায় নেয়া আমার চাচাতো ভাইয়ের সিএনজি ট্যাক্সি চালকের ট্যাক্সিতে করে ডাবুয়াস্থ বাড়িতে ফিরছিলাম। রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ৫-৬ জন অস্ত্রধারী যুবক আমাদের গাড়ি আটকিয়ে আমার মানি ব্যাগ (ব্যাগে তিন হাজার টাকা ছিল), ১৬ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এরপর আমি ও আমার চাচাতো ভাই সিএনজি ট্যাক্সি চালক জমির উদ্দিনকে মারধর করে একসঙ্গে রশিতে বেঁধে বিলে (জমিতে) আটকে রাখে। জমির উদ্দিনের মোবাইল ফোন ও তার টাকাও ছিনতাইকারীরা নিয়ে ফেলে। এরপর আরো একটি সিএনজি ট্যাক্সি চালককে (অজ্ঞাত) আটকিয়ে মারধর করে তার কাছ থেকেও সব হাতিয়ে নেয়। এদিকে ‘ছাদেক্যার মা’র পুলের পাশে ছিটিয়াপাড়ায় চুরির ঘটনাও বেশ বেড়ে গেছে। এখানে এবং এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গরু চুরি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা বলেন, ‘ছাদেক্যার মা’র পুল এলাকাটি নির্জন স্থান হওয়ায় একসময় এখানে প্রায় ছিনতাই হতো।

গত ৬-৭ বছর আগে ‘ছাদেক্যার মা’র পুলের পাশে সাজিনা চৌধুরী স্কুল হওয়ায় এবং সড়কে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা হওয়ায় সেখানে অপরাধ একেবারেই কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই একই জায়গায় একের পর এক ছিনতাইয়ের কারণে মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় স্থানীয় কিছু যুবক নতুন করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে’।

প্রতিবেশী তরুণ সংগঠক আহসান হাবিব চৌধুরী হাসান বলেন, ‘প্রায় ১৫-১৮ আগে এখানে (‘ছাদেক্যার মা’র পুলে) ঘন ঘন অপরাধ হতো। অনেকদিন ধরে সেখানে অপরাধ কমে যায়। গত বেশ কিছুদিন আগে থেকে এ এলাকায় ছিনতাই বেড়ে গেছে। আমরা এলাকাভিত্তিক খতিয়ে দেখছি, কারা এসব অপরাধ করছে। চিহ্নিত করা গেলে তাদের প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হবে’।
এ প্রসঙ্গে থানার সেকেন্ড অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ছাদেক্যার মা’র পুলে সংঘটিত ছিনতাইয়ের বিষয়ে এখনো কোন ক্লু উদঘাটন কিংবা কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি’।
স্থানীয়রা জানান, রাউজান-নোয়াপাড়া সড়কটি উপজেলা সদরসহ উত্তর-দক্ষিণ প্রান্ত যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম মাধ্যম। প্রতিদিন এ সড়কে সিএনজি ট্যাক্সিসহ শত শত যানবাহন চলাচল করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সড়কের অধিক পরিচিত ‘ছাদেক্যার মা’র পুল এলাকায় আবারো ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা এ সড়কে চলাচলে আতংকে ভুগছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট